ভারতের অধিনায়ক হিসেবে বিরাট কোহলির অর্জন ঠিক ততটা সমৃদ্ধ নয়। ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ টেস্ট জেতা এ অধিনায়ক তাঁর সময়ে দলকে কোনো শিরোপা এনে দিতে পারেননি। আর এই শুন্যতায় তাঁকে ব্যর্থ অধিনায়কদের কাতারে ভিড়িয়েছে। একই সাথে, সে সময়ের কোচ রবি শাস্ত্রীও বলার মতো কোনো সফলতা এনে দিতে পারেননি।
তবে ভারতীয় ক্রিকেটারদের ফিটনেস ইস্যুতে জোরালো ভূমিকা রয়েছে এ দুই জনের। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতের ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয়, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে যাওয়া- কিছুটা হলেও তাদের সাফল্যের খেরোখাতায় অর্জন তো যোগ করে বটেই।
অবশ্য ২০১৯ বিশ্বকাপেই সুবর্ণ এক সুযোগের সামনে দাঁড়িয়েছিল বিরাট-শাস্ত্রী জুটি। গ্রুপ পর্বে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ভারতকেই সেবার সম্ভাব্য ফাইনালিস্ট ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু কিউইদের বিপক্ষে হেরে সেবার সেমিতেই থেমে যায় ভারতের বিশ্বকাপ যাত্রা।
সে বিশ্বকাপে এমন কী ভুল করেছিল ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট, তা নিয়েই সে সময়ের ফিল্ডিং কোচ রামকৃষ্ণান শ্রীধর তাঁর নিজ বই ‘কোচিং বিয়ন্ড’-এ বিস্তর আলোচনা করেছেন। সেখানে তিনি কিছু ভুলের কথা স্বীকার করেছেন।
তিনি লিখেছেন, ‘বেশ কিছু সিদ্ধান্ত সেবার ভুল ছিল। তবে সবচেয়ে বড়ো ভুল ছিল নাম্বার চারে ব্যাট করা নিয়ে। একটা দলের ব্যাটিং অর্ডারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পজিশন হচ্ছে নাম্বার ফোর। এখানে এমন একজন ব্যাটার প্রয়োজন যে টপ অর্ডার থেকে দায়িত্বের ব্যাটন তুলে নিবেন। ইনিংস বিল্ড আপ করবেন। যে কিনা ৮০/৯০ স্ট্রাইরেটে ব্যাট করবেন। কিন্তু সে সময় আমরা এই পজিশনে এমন কোনো ব্যাটারকে প্রস্তুত করিনি। আমরা কাউকেই টানা সুযোগ দিই নি। যার কারণে ব্যর্থ হয়েছি।’
তিনি সেখানে আরো লিখেন, ‘আমরা আসলে ফল দ্রুত পেতে চেয়েছি। আমরা ভেবেছিলাম একজন ব্যর্থ হলে কেউ না কেউ তো পুষিয়ে দিবেই। সত্যি বলতে এটা নিয়ে কারণ দর্শানোর কিছু নেই। তবে এই জায়গাটা আমাদের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ ছিল। আশা করছি, পরবর্তীতে রোহিত শর্মা-রাহুল দ্রাবিড় জুটি এই ভুলগুলো করবে না।’
২০১৭ সালের পর থেকে সেবারের বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত চার নম্বরে ব্যাট করানোর জন্য ১০ জন ব্যাটারকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে সুযোগ দিয়েছিল ভারত। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৯ টি ম্যাচ খেলেছিলেন আম্বাতি রাইডু। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো, দারুণ ফর্মে থাকা এ ব্যাটার বিষ্ময়করভাবে সে বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ পড়েন। এমনকি শিখর ধাওয়ান যখন ইনজুরিতে পড়লেন তখন তাঁর জায়গায় রাইডুকে না নিয়ে বিজয় শঙ্করকে দলে নেওয়া হয়।
এরপর থেকে ওপেনিংয়ে রোহিতের সাথে ইনিংস শুরু করেন লোকেশ রাহুল। আর চারে খেলানো হয় বিজয় শঙ্করকে। কিন্তু সে টুর্নামেন্টে চূড়ান্ত ভাবে ব্যর্থ হন তিনি। চার ম্যাচ পরে ঋষাভ পান্তকে অবশ্য তাঁর জায়গায় খেলানো হয়। কিন্তু ততক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে। চার নম্বরে অতি পরীক্ষা নিরীক্ষা, একই সাথে উদাসীনতায় বড় মাশুল দিতে হয় ভারতকে।
রামকৃষ্ণান শ্রীধর নিজেও সেই উদাসীনতার কথা প্রকাশ্যে এনেছেন। সাবেক এ ফিল্ডিং কোচ তাঁর বইতে লিখেছেন, ‘কেউ চার নম্বর পজিশন নিয়ে তখন তেমন গুরুত্বের সাথে ভাবেই নি। অথচ এটা নিয়ে আরো গুরুত্ব সহকারে ভাবা উচিৎ ছিল। আম্বাতি রাইডু বাদে ঐ পজিশনে কেউ ৭ ম্যাচের বেশি খেলেনি। অথচ বিশ্বকাপ দলেই ছিল না রাইডু। এটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।’
অবশ্য এরপরেও টিম ম্যানেজমেন্টের তেমন দায় দেখেন না শ্রীধর। কারণ তাঁর মতে, সবারই ভিন্ন একটা পরিকল্পনা আছে। একেক জনের দর্শন একেক রকম হতে পারে। এখন সেটা কাজ করেনি বলেই হয়তো কথা উঠছে। সে সময়ের অধিনায়ক বিরাট কোহলি, ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় ব্যাঙ্গার কিংবা রবি শাস্ত্রীর হয়তো আলাদা ভাবনা ছিল। দিনশেষে সেটা কাজে লাগেনি। তাই সমালোচনাটাও হয়েছে।
তবে রামকৃষ্ণান শ্রীধর তাঁর লেখাতে এটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, ভুল থেকেই শিক্ষা নিতে হয়। আর সেই ভুল এবারে আর দেখতে চান না তিনি। স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘আমি রোহিত আর রাহুল দ্রাবিড়ের কাছ থেকে এমন ভুল দেখতে চাই না।’