পাকিস্তানের বিপক্ষে গোল্ডেন ডাক স্কটল্যান্ডের দ্রাবিড়ের!

সাল ২০০৩। ভারতীয় জাতীয় দলের কোচ তখন জন রাইট। তখনই তিনি এক অভিনব প্রস্তাব পান স্কটিশ ক্রিকেট ইউনিয়নের প্রধান নির্বাহী গুইনি জোনেসর কাছ থেকে। গুইনি একজন ভারতীয় সুপারস্টার খুঁজছিলেন যিনি স্কটিশ ক্রিকেটারদের উজ্জীবিত করতে সময় দিতে পারবেন দলটির ড্রেসিংরুমে।

স্কটল্যান্ড তখন তিন বছরের জন্য ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেট কাঠামোর অংশ ন্যাশনাল ক্রিকেট লিগের দ্বিতীয় বিভাগে খেলার সুযোগ পেয়েছিল। সেখানে স্কটল্যান্ড দলের জন্য ভিনদেশি ক্রিকেটার রাখারও সুযোগ ছিল। গুইনি সেখানে চাচ্ছিলেন স্বয়ং শচীন টেন্ডুলকারকে।

সেটা হয়নি। তবে, পেয়েছিলেন রাহুল দ্রাবিড়কে। জন রাইট বলেছিলেন, ‘যে ব্যক্তি তোমার জন্য উইকেটে সবচেয়ে সঠিক কাজটি করতে পারবে সে হল রাহুল দ্রাবিড়।’

ব্যাস, দ্য ওয়াল খ্যাত সাবেক এই ভারতীয় অধিনায়ক তিন মাসের জন্য চলে গেলেন ইংল্যান্ডে। তখন তিনি নতুন বিয়ে করেছেন। স্ত্রী বিজেতাও সফরসঙ্গী ছিলেন। রাহুল দ্রাবিড়কে পেতে স্কটল্যান্ডকে খরচ করতে হয়েছিল ৪৫ হাজার পাউন্ড। সেই অর্থটা কি করে পেয়েছিল স্কটল্যান্ড জানেন? প্রবাসী ভারতীয়দের দেওয়া অনুদান থেকে!

সেই মৌসুমে স্কটল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে ১১ টি ম্যাচ খেলেন দ্রাবিড়। ১১ ম্যাচে ৬৬.৬৬ গড়ে রান করেন ৬০০। স্কটল্যান্ড বিরাট কোনো জয় না পেলেও দ্রাবিড় চেষ্টার কমতি করেননি। দু’টি সেঞ্চুরি ও তিনটি হাফ-সেঞ্চুরি আসে তাঁর ব্যাট থেকে।

৪৫ ওভারের টুর্নামেন্টে হ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে ২৫ রান করে শুরু হয় ‘স্কটল্যান্ডের দ্রাবিড়’-এর যাত্রা। পরে সামারসেটের বিপক্ষে ১২০ রানের চকচকে একটা ইনিংস খেলেন। এরপর নটিংহ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে করেন ১২৯। তবে, কোনোটাই স্কটিশদের জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না।

সেই সফরের শেষ ম্যাচে মজার এক ঘটনা ঘটে। একটা ট্যুর ম্যাচে পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ হয় স্কটল্যান্ড। পাকিস্তানের বিপক্ষে স্কটল্যান্ডের হয়ে মাঠে নামেন রাহুল দ্রাবিড়। দিনটি ছিল সাত জুন।

যদিও, গ্লাসগোতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে দ্রাবিড়ের ব্যাটিং মনঃসংযোগ ব্যাহত হয় একদম প্রথম বলেই। পেসার শাব্বির হোসেনের বলে উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো রশিদ লতিফের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে গোল্ডেন ডাকের শিকার হন।

যদিও, স্কটিশরা সেদিন দুর্দান্ত লড়েছিল। ৫০ ওভারের ম্যাচে অল আউট হওয়ার আগে ১৬৯ করেছিল তারা। তবে, সেই রান তাড়া করতে নেমে ঘাম ছুটে গিয়েছিল পাকিস্তানের। নয় উইকেট হারিয়ে ৪৮ তম ওভারে গিয়ে লজ্জা ঠেকায় সফরকারীরা।

২০০৭ সালের এক সাক্ষাৎকারে স্কটল্যান্ড অধ্যায়ের স্মৃতিচারণা করেন দ্রাবিড়। বলেন, ‘ওখানে আমার খেলোয়াড়, কর্মকর্তাদের সাথে একটা সখ্যতা তৈরি হয়েছিল। সেটা আমি ধরে রাখার চেষ্টা করি। আমার আর আমার স্ত্রীর জন্য তিন মাসের স্কটল্যান্ড সফরটা দারুণ একটা স্মৃতি, খুব স্পেশাল একটা সময়। প্রতিটা ম্যাচই আমি উপভোগ করেছি।’

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link