হেরাথ-তাইজুল, জম্পেশ এক যুগলবন্দী

তাইজুল-হেরাথে এই যুগলবন্দী বাংলাদেশকে সামনের দিয়ে হয়ত অপ্রাপ্তির গল্পগুলো মুছে ফেলতে সহয়তা করবে। 

প্রথমে আস্থার হাতটা রাখলেন কাঁধে। সম্ভবত বুঝিয়ে দিলেন, ‘আমি আছি’। এরপর রাঙ্গানা হেরাথ বনে গেলেন তাইজুল ইসলামের ব্যক্তিগত ব্যাটিং কোচ। শীর্ষ্যকে বুঝিয়ে দিলেন, শুধুমাত্র ব্যাট চালালে হয় না, বরং বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারটাও করতে হয়।

তাইতো তিনি শিখিয়ে দিলেন, কি করে খানিকটা ঝুকিপূর্ণ শট খেলা যায়। আলতো টোকায় বল লেগ গালি কিংবা ব্যাকওয়ার্ড শর্ট অঞ্চলে ঠেলে পাঠাতে হয়। সেখানেই থেমে থাকেননি হেরাথ। তিনি আলাদা সেশন করিয়েছেন তাইজুল ইসলামের।

আসন্ন আয়ারল্যান্ড সিরিজকে সামনে রেখে তিন দিনের অনুশীলন ক্যাম্প করছে বাংলাদেশ দল। প্রধান কোচ চান্ডিকা হাতুরুসিংহের ইচ্ছেতেই সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তাবু গেড়েছে টাইগাররা। সেখানে দ্বিতীয় দিনের অনুশীলনে হেরাথে পূর্ণ মনোযোগ ছিল তাইজুলকে ঘিরে।

হেরাথ তার খেলোয়াড়ি জীবনে ছিলেন একজন দুর্ধর্ষ বা-হাতি স্পিনার। বর্ণিল তার ক্যারিয়ার। যদিও ক্যারিয়ারে একটা লম্বা সময় ছিলেন ব্রাত্য।

তবুও, যতটুকু সুযোগ তিনি পেয়েছেন, দু-হাতে লুফে নিয়েছেন। তবে জীবনের সে অধ্যায়টায় পেছন ফিরে তাকালে হয়ত একটা আফসোস হয় তার। সেই আফসোস কমাতেই হয়ত শীর্ষ্য তাইজুলকে ব্যাট হাতে বানাতে চাইছেন ক্ষুরধার।

সিলেটে ক্যাম্পের দ্বিতীয় দিনের শেষের দিকের পুরোটা সময় হেরাথ কাটিয়েছেন তাইজুলের সাথে। ব্যাটিংয়ের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিয়েছেন। সেই সাথে দিয়েছেন ব্যাটিং ভাল করবার পরামর্শ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় ছয়শ উইকেট শিকার করা হেরাথ নিশ্চয়ই উপলব্ধি করতে পারেন- ক্রিকেটটা নেই ঠিক আগের মত।

এখানে একটিমাত্র স্কিল দিয়ে টিকে থাকা এখন ভীষণ দায়। তাইজুলও নিশ্চয়ই বিষয়টি বোঝেন। তাইতো কোচের সকল দিকনির্দেশনা বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন।

নেট অনুশীলনে দীক্ষার প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করেছেন। সিলেটের সেন্টার উইকেটে ব্যাট করেছেন লম্বা সময়। সেখানে করা ভুলগুলো শুধরে দিতেই সাইড নেটে তাকে ডেকে এনেছেন হেরাথ।

হেরাথ বল ছুড়েছেন। তাইজুল ব্যাট চালিয়ে সাবলীল সব শট খেলার চেষ্টা করেছেন। হেরাথ শুধু বল ছুড়েই ক্ষান্ত হননি। তিনি পাশে থাকে সাপোর্ট স্টাফকে বুঝিয়ে দিয়েছেন ঠিক কোথায় তাইজুলের জন্যে বল ফেলতে হবে। মোদ্দা কথা তাইজুলের নতুন এক সত্ত্বা ঘষেমেজে ঠিকঠাক করে দিতে চান হেরাথ।

তাইজুলের ওয়ানডে ক্যারিয়ারটা সুদীর্ঘ নয়। মূলত লাল বলের ক্রিকেটেই তিনি ছিলেন বিবেচনায়। তবে সে দিনের অবসান হয়েছে। ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালের পছন্দেই তিনি ওয়ানডে দলের থিতু হতে শুরু করেছেন। বল হাতে বেশ কার্য্যকর তিনি। ব্যাট হাতেও এবার অবদান রাখতে চান তাইজুল।

সেই স্পৃহা থেকেই সিলেট ক্যাম্পে ব্যাট হাতে বেশ তৎপর তিনি। ইতিবাচক বিষয়, তিনি সান্নিধ্য পেয়েছেন হেরাথে। প্রায় কুড়ি বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের অভিজ্ঞতা নিঙড়ে নেওয়ার সুযোগটা হেলায় হারাচ্ছেন না তাইজুল।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বেশ ঘাম ঝড়িয়েছেন তিনি। ক্লান্ত বদনে সূর্য যখন বাড়ি ফিরেছে তখন হেরাথ গুটিয়ে নিয়েছেন নিজের পাঠশালা।

বাধ্য ছাত্রের মত করেই তাইজুল পুরোটা সময় জ্ঞান আরোহন করবার চেষ্টা করেছেন। নেট অনুশীলনে সেসবের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলবার চেষ্টা করেছেন। ব্যাটে-বলে না হওয়ায় আক্ষেপ করেছেন। যোগসংযোগে গুরুর বাহবা পেয়েছেন।

কাঁধে হাত রেখে ব্যাটিং দূর্বলতার সমাধান যেমন দিয়েছেন হেরাথ। ঠিক তেমনি বোলিংয়ের ধার বাড়ানোর টোটকাও দিয়েছেন নিশ্চয়ই। তাইজুল-হেরাথে এই যুগলবন্দী বাংলাদেশকে সামনের দিয়ে হয়ত অপ্রাপ্তির গল্পগুলো মুছে ফেলতে সহয়তা করবে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...