একটি অবিশ্বাস্য অনুভূতি ও তার সুন্দরতম ঝংকার!

ফুটবল ইতিহাসের সেরা ক্লাবের রাজমুকুটে আরেকটি গৌরবময় পালক। আমার মাদ্রিদিস্তা হৃদয়ের আরেকটু প্রশান্তি

কোভিড বিরতির পর বাকি ছিল ১১ ম্যাচ, জিদান বলেছিলেন ‘১১ ফাইনাল।’ অথচ শেষ ফাইনালটি এখন কেবল আনুষ্ঠানিকতা ও উদযাপনের মঞ্চ, আহা!

জিজুকে কী বলব, জানি না। জিনিয়াস-টিনিয়াস, জাদুকর-টাদুকর তো সেই কবেই বলা শেষ! মৌসুমজুড়ে ট্যাকটিক্যাল উৎকর্ষতা, ফোকাস, মানসিক শক্তির যে প্রমাণ তিনি আবার রেখেছেন, কয়েক পজিশনে যথেষ্ট ব্যাক আপ না থাকার পরও যেভাবে সামলেছেন বিভিন্ন পরিস্থিতি, একাদশ ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে কেবল চমকে দেওয়াই নয়, কার্যকর করে তুলেছেন যেভাবে, এসবের তুলনীয় কিছু পাই না খুঁজে। ব্যস, জিদান একটা জিদান!

সমর্থক হিসেবে অনেক সময় আমরা চমকে গেছি, বিরক্ত হয়েছি, মেজাজ খারাপ হয়েছে, যুক্তি খুঁজে পাইনি। আগেও যেমন, এই মৌসুমেও। জিজু অটল থেকেছেন নিজের মতে ও পথে। সেই পথ আবারও ঠিক খুঁজে পেয়েছে সাফল্যের ঠিকানা। একটা মানুষ, একটা ফুটবল কোচ এতটা ‘কুল’ এতটা স্থির কীভাবে থাকতে পারেন!

ফুটবলার জিজু তো বরাবরই আমার কাছে শেষ কথা। কোচ জিজু, চার বছরে জিতলেন ১১টি ট্রফি। এর মধ্যে আবার বছরখানেক দায়িত্বে ছিলেন না! ফুটবলার জিদান বেশি ভালো নাকি কোচ জিদান, এই প্রশ্ন এখনই উঠে যাচ্ছে। উত্তর জানি না। তবে এটা জানি, বল পায়ে জিজু আর ডাগ আউটের জিজু মিলিয়ে যে ছবি আমি দেখি, ফুটবল নামক খেলাটি তার চেয়ে ভালো বুঝতে, তার চেয়ে ভালো পড়তে, আর কেউ পারে বলে মনে হয় না।

এই দফায় দায়িত্ব নেওয়ার সময় জিজু বলেছিলেন, রিয়ালকে তিনি আবার সেখানে তুলে নিতে চান, যেখানে এই ক্লাবের উপযুক্ত জায়গা। থ্যাংক ইউ মাস্টার, উই লাভ ইউ।

জিজু জানতেন, গোল করায় রোনালদোর শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। তিনি তাই জোর দিয়েছিলেন এবার ডিফেন্স ও মিডফিল্ডে। মৌসুমের পর মৌসুম, শিরোপা হাতছাড়া হয়েছে কেবল ডিফেন্সের কারণে। এবারের শিরোপা আমাদের ডিফেন্সেরই উপহার।

আর হ্যাঁ, দলে রোনালদোর প্রভাব, না থাকার ধাক্কা, সর্বোপরি রোনালদোর ঘোর, এসব থেকে দলকে বের করার দরকারও ছিল, জিজু পেরেছেন।

দল তার ডাকে সাড়া দিয়েছে। তার কৌশল মাঠে মেলে ধরায় নিজেদের উজার করে দিয়েছে। কাকে রেখে কার কথা বলব! এই মৌসুমটা অসাধারণ টিম পারফরম্যান্সের আদর্শ ডকুমেন্টারি।

প্রবল সমালোচনা আর ট্রলকে পেছনে ঠেলে আস্থার প্রতিমূর্তি হয়ে ওঠা কোর্তোয়া, আরও পরিণত হয়ে ওঠা ভারানে, মৌসুম জুড়ে দুর্দান্ত স্কিল, ফিজিকাল ও মেন্ট্রাল স্ট্রেংথ, নার্ভ, অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতায় পারফর্ম করে যাওয়া কারভাহাল।

মিডফিল্ডে ত্রিরত্ন কাসোমিরো-ক্রুস-মড্রিচ – এই ত্রয়ীর চেয়ে ভালো মিডফিল্ড আছে এখন বিশ্বে? কোভিড বিরতির পর মড্রিচ যেভাবে খেলেছেন ম্যাচের পর ম্যাচ, ক্লান্তিহীন ও বিরামহীন প্রদর্শনী। ৩৫ বছর ছুঁইছুঁই কারও জন্য অবিশ্বাস্য। ক্লাস অ্যাপার্ট!

কাসেমিরো আমাদের আশীর্বাদ। ডিফেন্স-মিডফিল্ড-আক্রমণকে এক সুতোয় গেঁথে রাখার সুনিপুন কারিগর। আমাদের ইঞ্জিনরুম, গোটা মৌসুমের এমভিপি, ক্রুস তো সবসময়ই আত্মবিশ্বাস আর অথোরিটির প্রতিচ্ছবি।

ভালভার্দে আমাদের নতুন রত্ন, ক্লাবের সামনের পথচলার ভরসা, ভিনিসিউস-মঁদি-রদ্রিগো-ভাসকেস, আশা-হতাশার ইসকো। তালিকা চলতেই থাকবে।

আমাদের করিম ভাই। আদরের ‘কদু’ থেকে সতিকারের ‘জাদু’ হয়ে ওঠা, টানা দুই মৌসুমে বিশের বেশি গোল – অনেক অনেক ম্যাচে দলের ত্রাণকর্তা, অনেক বছরের হতাশা ভুলিয়ে, ছায়া সরিয়ে নায়ক হয়ে ওঠা।

এবং অতি অবশ্যই, আমাদের বুনো-খ্যাপাটে ষাঁড়, নিজ প্রান্তে গোল লাইন সেভ থেকে অপর প্রান্তে গোল লাইন পার করা, যার দাপট দলের সাহস, যার আগুন দলের জ্বালানী, যার কথা আর উপস্থিতি দলের প্রেরণা, সার্জিও রামোস গার্সিয়া, আমাদের ক্যাপ্টেন, নেতা,অমূল্য একজন – তার মতো কেউ নেই, কখনও পাবো বলে মনে হয় না।

কথা হবে না। শেষ নেই অনুভূতিরও। একটা ক্লাবই যখন অনুভূতি, তার ঝংকারও তো এমনই সুন্দরতম!

– ফেসবুক থেকে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link