ওয়ানডে দলে রদবদল: নেপথ্যে বিশ্বকাপ

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডেতেই খেলা তাইজুল ইসলাম বাদ আয়ারল্যান্ড সিরিজে। তাঁর বদলে আবার ডাকা হল নাসুম আহমেদকে। হঠাতই আবার ওয়ানডে দলে ফিরলেন ইয়াসির আলী রাব্বি। প্রথমবারের মত এই ফরম্যাটে জায়গা হয়েছে জাকির হাসানেরও। আরো বড় চমক হল, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দলে জায়গাই হয়নি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। আর এইসবকিছু থেকে একটা বার্তাই পাওয়া যায়, সেটা হল পরীক্ষা-নিরীক্ষা।

ওয়ানডে দল নিয়মিত সাফল্য পাওয়ায় এই দলটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতো না তেমন। তাই বলে যে এই দলে কোন সমস্যা ছিল না তা নয়। এই যেমন কয়েকজন ব্যাটারের স্ট্রাইকরেট নিয়ে প্রশ্ন ছিল। সাকিব-মিরাজের পর দলে বিকল্প স্পিনার কে হবে তা নিয়ে দ্বিধা ছিল। আবার মিডল অর্ডারে হালটা কে ধরবে সেটাও ভাবনার বিষয় ছিল।

আর ঠিক এই জায়গা গুলোতেই হাত দিয়েছেন নতুন হেড কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে। আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ সিরিজ হারায় হাতুরুর জন্য কাজটা আরো সহজ হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের কিছু দুর্বলতা একেবারে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যেগুলো এখনই সমাধান না করলে ওয়ানডে বিশ্বকাপে হতে পারে চরম ভরাডুবি।

তাইতো একমুহূর্তও দেরি করেননি এই কোচ। জানা যায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ হারের পরই তিনি দলে পরিবর্তন আনার বার্তাটা দিয়ে রেখেছিলেন। কথা আর কাজের মিলও পাওয়া গিয়েছে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের জন্য দল ঘোষণা করা হয়েছে গতকাল। সেখানে নাম নেই স্ট্রাইকরেটের কারণে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের।

বিসিবি এটাকে বিশ্রাম বলে ঘোষণা দিলেও তা যে শুধুই একটা আশ্রয় সেটা বোঝা খুব কঠিন কিছুনা। কেননা বছরখানেক ধরেই তিনি দলের বোঝা হয়ে উঠেছিলেন। বড় রান তো করতেই পারছিলেন না, যা একটু করছিলেন সেটায় বরং দলের ক্ষতিই বেশি হচ্ছিল। ছয় নাম্বারে নেমে এমন ধীরগতির ব্যাটিং এখনকার সময়ে স্রেফ অবিশ্বাস্য। এছাড়া তাঁর বাজে ফিল্ডিংও বাদ পড়ার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

আর রিয়াদের জায়গায় ব্যাকআপ হিসেবে দলে রাখা হয়েছে তৌহিদ হৃদয়কে ও ইয়াসির আলী রাব্বিকে। বিপিএলের পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও ইতোমধ্যেই পারফর্ম করায় তিনি গুড বুকে চলে এসেছেন। ফলে ওয়ানডে একাদশেও তাঁর জায়গা পাওয়াটা প্রায় নিশ্চিত। এছাড়া ইয়াসির আলী রাব্বিকেও ছয়-সাতে ব্যবহার করতে চাইবে বাংলাদেশ।

আর এই দুজন পারফর্ম করতে পারলে বিশ্রামে পাঠানো রিয়াদকে আর ফেরানো হবেনা বলেই ধারণা করা যায়। সেক্ষেত্রে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ আর খেলা হবেনা তাঁর। ওদিকে একাদশে তৌহিদ হৃদয়ের অন্তর্ভুক্তি হলে চাপে পড়তে পারেন আরেক সিনিয়র মুশফিকুর রহিমও। তিনি ওয়ানডে ফরম্যাটে খুব একটা সুখকর সময় কাটাচ্ছেন না। স্ট্রাইকরেট নিয়ে সমস্যা আছে এই ব্যাটারেরও।

ফলে হৃদয় পারফর্ম করতে পারলে মুশফিকের চার নাম্বার পজিশনটাও খুব একটা নিরাপদ থাকবেনা আর। ওদিকে টেস্টে দারুণ পারফর্মেন্স করা জাকির হাসানকেও ডাকা হয়েছে ওয়ানডে দলে। এই ব্যাটার যেমন ওপেন করতে পারেন, তেমনি খেলতে পারেন মিডল অর্ডারেও। ফলে জাকিরকেও ব্যাকআপ হিসেবে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন হাতুরু।

ফলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে একাদশেও দেখা যেতে পারে নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষা। এই সিরিজ দিয়েই বাংলাদেশ চাইবে তাঁদের সেরা কম্বিনেশনটা খুঁজে বের করতে। আর এই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলেই হৃদয়, রাব্বিরা চলে আসতে পারেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের পরিকল্পনায়।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link