ঘুটঘুটে অন্ধকারে ফ্যাকাসে বার্সা

২০২১ সাল গত হয়েছে। কত রকমের কাণ্ড তো গেলো একটা বছর জুড়ে। কেউ দেখেছে পতন কেউবা উত্থানের চরম শিখড়ে পৌঁছে গেছেন। তবে পৃথিবী ব্যপী ছড়িয়ে পড়া মহামারী সামলে উঠা শিখতে শিখতে স্পেনের ক্লাব বার্সেলোনা যেন ভুলতেই বসেছিলো তাঁদের ঐতিহ্য তাঁদের দাপট। কেমন যেন এক মলিন হওয়া বার্সেলোনাকে দেখলো পৃথিবী। লাল-নীল রঙগুলো কেমন একটা ধূসর বর্ণ ধারণ করেছে বছর খানেকের ব্যবধানে।

২০২১ সাল গত হয়েছে। কত রকমের কাণ্ড তো গেলো একটা বছর জুড়ে। কেউ দেখেছে পতন কেউবা উত্থানের চরম শিখড়ে পৌঁছে গেছেন। তবে পৃথিবী ব্যপী ছড়িয়ে পড়া মহামারী সামলে উঠা শিখতে শিখতে স্পেনের ক্লাব বার্সেলোনা যেন ভুলতেই বসেছিলো তাঁদের ঐতিহ্য তাঁদের দাপট। কেমন যেন এক মলিন হওয়া বার্সেলোনাকে দেখলো পৃথিবী। লাল-নীল রঙগুলো কেমন একটা ধূসর বর্ণ ধারণ করেছে বছর খানেকের ব্যবধানে।

অবশ্য এই যে ক্রমশ মলিনতার পথ ধরে ধূসরের উদ্দেশ্যে পদচলার শুরুটা ২০২০ এর শেষের দিক থেকেই শুরু। কাতালান ক্লাবটার আঁতুড়ঘর লা মাসিয়া থেকে উঠে আসা ভবিষ্যতের তারকা বিবেচ্য হওয়া আনসু ফাতির ইনজুরিই যেন ইঙ্গিত দিচ্ছিলো বেশ একটা অন্ধকারের পথে হাঁটতে চলেছে বার্সেলোনা। তারকা খেলোয়াড় বছর জুড়ে সব ধরণের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে খেলেছেন মোটে আটটি ম্যাচ। তবে কোন ম্যাচের শুরু থেকে শেষ অবধি খেলতে পারেননি আনসু ফাতি।

তবে তিনি যে সত্যিকার অর্থেই হতে চলেছেন ভবিষ্যতের উজ্জ্বলতম তারা। এই আট ম্যাচের পুরোটা সময় না খেলেও ধুকতে থাকা আক্রমণে খানিক স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়েছেন চারটি গোল করে। তবুও সেই সব খুব বেশি তফাৎ তৈরি করতে পারেনি। কিন্তু আনসু ফাতির সম্ভাবনা কিংবা দক্ষতা এড়াইনি কারোই। তাইতো বার্সেলোনার ক্ল্যাসিক দশ নম্বর জার্সিটা এখন উঠেছে তাঁর বদনে। আলোর মশালটা এখন তাঁর হাতেই।

বার্সা ইতিহাসে যদি অন্যতম সেরা খেলোয়াড়দের তালিকা করা হয় সেখানে লিওনেল মেসির থাকার সম্ভাবনা প্রখর। তিনি দলের হয়ে বেশ ভালভাবেই শুরু করেছিলেন ২০২১ সালটা। যদিও ২০২০/২১ এর প্রথমভাগে একেবারে নিষ্প্রভ ছিলেন মেসি। খারাপ সময় পাড় করার সময় বার্সেলোনাকে একটু বাজিয়ে দেখতে চেয়েছিলো বেশকিছু ক্লাব। তবে তৎকালীন ক্লাব সভাপতি জোসেফ মারিয়া বার্তেমেউ ছিলেন অনড়। বেচতে চাননি মেসিকে। মাঝে সভাপতি ছাড়া সময়ও পার করেছিলো বার্সা অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি পালন করেছিলেন দায়িত্ব।

২০২১ সালের শুরুর দিকটায় টালমাটাল হবে হবে এমন পরিস্থিতিতে দলকে বেঁধে রাখার একমাত্র খুঁটি যেন ছিলেন লিওনেল মেসি। কোভিড পরবর্তী বিধিনিষেধ থাকার কারণে মাঠে দর্শক উপস্থিতি না থাকলেও মেসি ছিলেন আপন ছন্দে। দলকে একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি থাকাকালীন দলের সবচেয়ে বড় দূর্বলতার জায়গা রক্ষণকে অদৃশ্য এক পর্দা আড়াল করতো। যদিও মেসির একার পক্ষে তো সব সময় নিজেকে উজাড় করে দেওয়া সম্ভব নয়।

মেসি তাঁর ক্লাবে হয়ে প্রথম রেড কার্ডটা দেখেছিলেন ২০২১ এর জানুয়ারিতে। স্প্যানিশ সুপার কাপটা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার রাতে মেসির নামটা উঠেছিলো রেফারির ‘ব্ল্যাকবুকে’। এরপর আরেক ধাক্কা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই বাদ বার্সেলোনা। হারলো ফ্রান্সের ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইর কাছে। দ্বিতীয় লেগে বার্সার ঘরের মাঠে এসে পিএসজি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পের হ্যাট্রিকে ৪-১ গোলের ব্যবধানে হেরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দৌড় থেকে ছিটকে যায় বার্সেলোনা। কিন্তু তখনও টিকে ছিলো লিগ শিরোপা দৌড়ে। কিন্তু চির প্রতিদ্বন্দী রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে এল ক্ল্যাসিকোতে হার যেন সমর্থকদের তিক্ততা আরো বাড়িয়ে দেয়।

কোচ রোলান্ড কোম্যান সমর্থকদের বিতৃষ্ণা বাড়িয়ে দেওয়ার অন্যতম কারণে পরিণত হচ্ছিলেন দিন বাড়ার সাথে। তবুও একটু মাত্র আসা ছিলো লিগ শিরোপা জেতার। একেবারে হাতের মুঠোয় ছিলো লা লিগা। এমন একটা পরিস্থিতি বা অবস্থানে ছিলো কাতালান ক্লাবটি যে ভুল করার বিন্দুমাত্র সুযোগ ছিলোনা তাঁদের কাছে। কিন্তু যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত্রি হয় বাংলার এই প্রবাদের মতোই গ্রানাডার কাছে ২-১ গোলে অল্পের জন্যে শিরোপা হাতছাড়া হয়। কাটে একটি শিরোপাবিহীন মৌসুম।

ততদিনে বার্সেলোনার নতুন সভাপতি বসেছেন নিজের পদে। হুয়ান লাপোর্তা আবার সভাপতির আসনে বসার পর থেকেই খানিক যেন মনক্ষুন্ন হয়ে ছিলেন কোম্যানের উপর। সামন্য একটি ভুলে একটি শিরোপা হাতছাড়া করায় চোটে যাবারই কথা। কোম্যানের বিকল্প খুঁজতে থাকা লাপোর্তা দলের অর্থনৈতিক বেহাল দশার অজুহাত দেখিয়ে ছেড়ে দেন ক্লাবের সবচেয়ে বড় তারকা লিওনেল মেসিকে। ওদিকে কোম্যান থেকে গেলেন বহাল তবিয়তে। ক্লাবটার মেরুদণ্ডই যেন ভেঙে গেলো। তারপর কি ঘটেছে বা এখন কি ঘটছে তা নিশ্চয়ই সবারই জানা।

বার্সেলোনা ২০০৩ সালের পর আবার খেলতে চলেছে উয়েফা ইউরোপা লিগ। চ্যাম্পিয়নস লিগের মাত্র দুইটি গোল করতে পেরেছিলো বার্সার আক্রমণভাগ। যেখানে ছিলো সেভিয়া থেকে লোনে আনা স্ট্রাইকার লুক ডি জং। এমন ধারে আনা খেলোয়াড়কে খেলানোয় যেন সমর্থকদের ক্ষতে লবণ ছেটানোর মতো কাজ করেছে।

পক্ষান্তরে বার্সার রক্ষণ ছিলো তাসের ঘর। ৬০ বছর বাদে বেনফিকাও তিনখানা গোল বার্সার জালে জড়িয়ে বড় জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। তাতে বার্সার আর পরবর্তী রাউন্ডে ওঠা হলো না। অন্যদিকে লিগে তো যাচ্ছে তাই অবস্থা। বর্তমানে লিগ টেবিলের সপ্তম স্থানে। যদিও বার্সার ডাগ আউটে এসেছেন নতুন কোচ। কাতালান ক্লাবটির সাবেক তারকা জাভি হার্নান্দেজ। হৃদয়ের ব্যাধি নিয়ে বার্সা ও ফুটবলকে বিদায় বলেছেন সার্জিও অ্যাগুয়েরো।

কিন্তু বার্সার ভাগ্যের বিশেষ কোন উন্নতি হয়নি। এখনো আলোচনায় বসে বার্সেলোনা সমর্থকেরা হয়ত ভাবেন এমন খারাপ পরিস্থিতি দিয়ে কি ভবিষ্যতেও যেতে হতে পারে তাঁদের পছন্দের ক্লাবটিকে। কেউ হয়ত উত্তর খুঁজে পান না সূচক উত্তর কিংবা কেউ কিঞ্চিৎ হ্যাঁ সূচক। কেউ কেউ হয়ত বিশ্বাস করতে চান বার্সার ইতিহাসের ঘুটঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি পাতা ২০২১।

তবে নতুন আশায় বুক বেঁধে বার্সেলোনা নিশ্চয়ই যাত্রা শুরু করেছে ২০২২ এর উদ্দেশ্যে। দুর্গম সে যাত্রায় তাঁদের নতুন সঙ্গী উদীয়মান তারকা ফেরান তোরেস। হয়ত শীতকালিন দলবদলে দলের রণতরীতে যোগ হবেন অনেকে। বিয়োজন ঘটার সম্ভাবনাও রয়েছে। শেষমেশ একটা ভাল বছর কাটাবে বার্সা এটাই হয়ত প্রত্যাশা ।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...