শ্রীলঙ্কার মাটিতে এর আগে কোনো পাকিস্তানি ব্যাটারের ডাবল সেঞ্চুরি ছিল না। এই ‘ছিল না’ নামক অতৃপ্তির অবসান অবশেষে ঘটল সৌদ শাকিলের সৌজন্যে। গল টেস্টে ৩৬১ বলে ২০৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে লঙ্কানদের মাটিতে রেকর্ড পাতায় পাকিস্তানি ব্যাটারদের মধ্যে শীর্ষে উঠে এসেছেন এ ওপেনার।
২০১২ সালে কলম্বো টেস্টে ১৯৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মোহাম্মদ হাফিজ। প্রায় ১১ বছর ধরে সেটিই ছিল শ্রীলঙ্কায় গড়া পাকিস্তানি কোনো ব্যাটারের সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড। ২০২৩ এর জুলাইয়ে এসে এবার সেই রেকর্ডকেই ছাপিয়ে গেলেন সৌদ শাকিল।
লাল বলের ক্রিকেটে পাকিস্তানের ২৩তম ব্যাটার হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়লেন। সেই সাথে ছাপিয়ে গেলেন আব্দুল্লাহ শফিক, জাভেদ মিয়াদাদকেও।
মাত্র ৬ টেস্টের ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ১১টা ইনিংস ইনিংস খেলেছেন সৌদ শাকিল। আর এই ১১ ইনিংসে তাঁর ব্যাট থেকে রান এসেছে ৭৮৮। পাকিস্তানের হয়ে এর আগে টেস্টে ১১ ইনিংসে শাকিলের মতো এত রান করতে পারেননি।
এর আগে যে রেকর্ডটি ছিল আবদুল্লাহ শফিকের নামে। তিনি ১১ ইনিংসে করেছিলেন ৭২০ রান। আর আরেক পাকিস্তান কিংবদন্তি জাভেদ মিয়াদাদ ক্যারিয়ারের প্রথম ১১ ইনিংসে করেছিলেন ৬৫৪ রান।
ক্যারিয়ারের প্রথম ৬ টেস্টের প্রতি ম্যাচেই অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন শাকিল। আর এখানেই তিনি নাম লিখিয়েছেন ক্রিকেট ইতিহাসের বেশ ক’জন কিংবদন্তী ক্রিকেটারদের পাশে।
ছয় টেস্টেই অন্তত একটি করে অর্ধশতরান— এর আগে এই কীর্তি ছিল ভারতের সুনীল গাভাস্কার, ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বাসিল বুচার, পাকিস্তানের সাঈদ আহমেদ ও নিউজিল্যান্ডের বার্ট সার্টক্লিফের। বিরল এ রেকর্ডের তালিকায় পঞ্চম নামটা সৌদ শাকিলের।
ডাবল সেঞ্চুরির পথে আরো একটি কীর্তিতে নাম লিখিয়েছেন সৌদ শাকিল। বাঁহাতি এই ব্যাটার দেশের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে প্রথম অ্যাওয়ে সিরিজে দ্বিশতকের দেখা পেয়েছেন। এর আগে ১৯৭১ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম ওই কীর্তি গড়েছিলেন জহির আব্বাস।
গল টেস্টে প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার ৩১২ রানের বিপরীতে পরে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের শুরুটা ছিল শোচনীয়। ১০১ রান তুলতেই সাজঘরে ফিরে যান ৫ ব্যাটার। এরপর আগা সালমানকে সঙ্গে নিয়ে দলের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন শাকিল। দুজনে মিলে গড়েন পাকিস্তানের ক্রিকেটে দ্রুততম ১৭৭ রানের রেকর্ড।
গল টেস্টের সকালের সেশনে আগা সালমান ৮৩ রানে ফিরে গেলে দুজনের সে জুটি জুটি ভেঙে যায়। এরপর নোমান আলীর সঙ্গে ৫২ রানের জুটি গড়া শাকিল টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন মাত্র ১২৯ বলে। সেটাই পরে ডাবল বানিয়ে রেকর্ড গড়েন বাঁহাতি এ ওপেনার। যা শ্রীলঙ্কার মাটিতে প্রথম কোনো ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড।
তবে সৌদ শাকিল যে অমন ম্যাচ পরিস্থিতিতে ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারেন, তা প্রথমে ভাবাই যায় নি। আগের দিনে অপরাজিত ছিলেন ৬৯ রানে। পাকিস্তানের তখন ২২১ রানে পাঁচ উইকেট। তৃতীয় দিনে এক সময় ৩৪৬ রানে পাকিস্তান যখন অষ্টম উইকেট হারায় পাকিস্তান, তখনও শাকিলের জন্য ২০০ রান ছিল অনেক দূরের পথ।
কিন্তু নাসিম শাহ্ তাঁকে দিয়েছেন যোগ্য সঙ্গ। ৭৮ বল খেলেছেন। শাকিল-নাসিমের জুটিতে ৯৪ রানের মধ্যে মাত্র ৬ রান করেছেন নাসিম। তবে সৌদ শাকিলের ২০০ রানের গণ্ডি পেরোনোর জন্য একটা ধন্যবাদ পেতেই পারেন নাসিম শাহ্।
সৌদ শাকিল পাকিস্তানের তরুণ কোনো ব্যাটার নন। ২৭ বছর বয়সে তাঁর টেস্ট অভিষেক হয়। তবে দেরিতে অভিষেক হলেও পাকিস্তান ক্রিকেটে শাকিল কিন্তু অপরিচিত নাম নন। ২০১৪ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের অধিনায়ক ছিলেন তিনি।
তবে পাকিস্তানের ক্রিকেটে সৌদ শাকিল প্রথম লাইমলাইটে আসেন ২০১৮ সালে। সেবার কায়েদ ই আজ়ম ট্রফিতে সব থেকে বেশি রান এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকেই। তারপরও জাতীয় দলে সুযোগ পাচ্ছিলেন না।
অবশেষে ২০২১ সালে সেই সুযোগ আসে। যদিও ২০২১ সাল থেকে পাকিস্তান দলে থাকলেও প্রথম একাদশে সুযোগ পেতে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় তাঁকে। তবে অভিষেকের পর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।
ক্যারিয়ারের প্রথম ৬ টেস্টেই রীতিমত রেকর্ড বন্যায় ভাসছেন তিনি। তাঁর ব্যাটে হাসছে পাকিস্তানও। পাকিস্তান যখন অল আউট হয়েছে তখনও অপরাজিত সৌদ শাকিল। দলের অধিনায়ক বাবর আজম তাই উচ্ছ্বসিতই হয়েই জড়িয়ে ধরেছিলেন শাকিলকে। হয়তো পাকিস্তানের টেস্ট দলের ভবিষ্যৎ কাণ্ডারিকে এরই মধ্যে পেয়ে গিয়েছেন তিনি।