৬২ টা ম্যাচ ইতোমধ্যেই অতিবাহিত হয়ে গেছে। ফলাফলও তৈরি। ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ শেষের পথে। ১৮ ডিসেম্বর পর্দা নামবে এবারের আসরের। এরপর আবারও বছর চারেকের অপেক্ষা। চারিদিকের ফুটবলীয় কোলাহলে ভাটা পড়বে।
শেষবারের মত বিশ্বকাপ ফুটবলের উন্মাদনায় শামিল হতে যাচ্ছে গোটা বিশ্ব। ফাইনালের মঞ্চ তৈরি। আর্জেন্টিনার মুখোমুখি ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। চ্যাম্পিয়ন হবে অবশ্য শেষমেশ একটি দল। তবে এই এক ফাইনালকে ঘিরে ধরেছে বেশ কিছু রেকর্ড তৈরির হাতছানি।
আট বছর বাদে আর্জেন্টিনা নিজেদেরকে ফাইনালে দেখতে পাচ্ছে। ফ্রান্সের ক্ষেত্রে অবশ্য অপেক্ষাটা চার বছরের। তবে দুইজনের ক্ষেত্রে ভিন্ন দুই রেকর্ড হওয়ার সম্ভাবনা প্রখর। যদি ফাইনালে ফ্রান্স জিতে যায়, তবে তাঁরা তৃতীয় দল হিসেবে পরপর দুইটি বিশ্বকাপ জেতার স্বাদ পাবে, ইতালি ও ব্রাজিলের পর। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের বিশ্বকাপ জয়ের অপেক্ষার অবসান ঘটবে। দুইটি দলই তো চাইবে রেকর্ডটা নিজেদের পক্ষেই লেখা হোক।
আবার একটা দিকে দুই দলের সামনেই সুযোগ রয়েছে একটি রেকর্ড নিজেদের দখলে নেবার। চতুর্থ দল হিসেবে তিন বা ততোধিক শিরোপা নিজেদের করে নেওয়ার সুযোগটা থাকছে ফ্রান্স এবং আর্জেন্টিনা দুই দলের সামনেই।
অন্যদিকে শিরোপা নিজেদের করে নিতে পারলে ৬০ বছর পর সফল ডিফেন্ডিং দল হিসেবে নিজেদেরকে দাবি করতে পারবে ফ্রান্স। তাছাড়া ইউরোপের আধিপত্য বজায় থাকবে। তবে আর্জেন্টিনা নিশ্চয়ই চাইবে ইউরোপের এই একচ্ছত্র আধিপত্যের ধারায় ব্যঘাত ঘটাতে।
এবার আর্জেন্টিনা টুর্নামেন্ট জিততে পারলে তাদের ফাইনালের জয় পরাজয়ের অনুপাত হবে ৩:৩। আর তেমনটা না হলে চতুর্থবারের মত আর্জেন্টিনার কপালে জুটবে রানার্সআপের তকমা। শেষ ২০১৪ সালে আর্জেন্টিনা রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থেকেছিল বিশ্বকাপের মঞ্চে।
ফরাসী দলের সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় তেমন ঘটনা ঘটা অস্বাভাবিক নয়। তবে তেমনটা করতে পারলে ২০০২ সালের পর আবারও শিরোপা যাবে ল্যাতিন আমেরিকায়। শেষবার আর্জেন্টিনার চিরপ্রতিদ্বন্দী ব্রাজিল বিশ্বকাপ দক্ষিণ আমেরিকায় নিয়েছিল
এই তো গেল দলগত রেকর্ডের হাতছানির ফিরিস্তি। তবে ব্যক্তিগত রেকর্ড গড়ার দুয়ারও খোলা রয়েছে। সেখানটায় অবশ্য মেসির জয়জয়কার। এই একটি ম্যাচ দিয়ে মেসি বনে যেতে পারেন বিশ্বকাপ ইতিহাসের অনন্য এক তারকা।
এমনিতেও তিনি ফুটবলের ইতিহাসের সর্বকালের সেরাদের একজন। ইতিমধ্যে চারটি ম্যাচ সেরার পুরষ্কার নিজের করে নিয়েছেন লিওনেল মেসি। ফাইনালেও ম্যাচ সেরার পুরষ্কার বাগিয়ে নিতে পারলে তিনি বনে যাবেন একমাত্র খেলোয়াড়। পাঁচটি ম্যাচ সেরার পুরষ্কার এর আগে কেউ জেতেনি।
২০১০ সালে ওয়েসলে স্নাইডার ও ২০১৪ সালে মেসি সর্বোচ্চ চারবার ম্যাচ সেরার পুরষ্কারটা নিজেদের করে নিয়েছিল। এবার নিজের সেই রেকর্ড টপকে যাওয়ার হাতছানি মেসির সামনে। তাছাড়া ফাইনাল ম্যাচে খেলতে নামলেই মেসি ছাড়িয়ে যাবেন জার্মানির লোথার ম্যাথুসকে। যৌথভাবে তাঁরা দুইজন বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ২৫টি ম্যাচে অংশ নেওয়ার রেকর্ডে নিজেদের নাম লিখে রেখেছেন। মাঠে পা রাখা মাত্রই মেসি বনে যাবে সর্বোচ্চ বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলা ফুটবলার।
এখানেই শেষ নয়। ফাইনালে অ্যাসিস্ট বা গোল করলেও তিনি হয়ে যাবেন এক ও অনন্য। বিশ্বকাপে সর্বমোট ১৯টি গোলে অবদান রাখার রেকর্ডে তিনি যৌথভাবে অবস্থান করছেন ব্রাজিলের রোনালদো নাজারিও, জার্মানির জার্ড মুলার ও মিরোস্লাভ ক্লোসার সাথে। ব্যাস! একটিমাত্র গোলে অবদান রাখতে পারলেই তিনি সবার উপরে চলে যাবেন।
আবার একটি গোল করলে তাঁর সামনে সুযোগ থাকছে পেলেকে ছাপিয়ে যাওয়ার। সেক্ষেত্রে বিশ্বকাপে কিংবদন্তি পেলের করা গোল সংখ্যা পেরিয়ে যাবেন মেসি। তাছাড়া গোল্ডেন বুট জয়ের দিকেও অগ্রসর হবেন আর্জেন্টিনার মধ্যমণি।
অন্যদিকে ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপ্পেরও সুযোগ থাকছে এবারের বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট নিজের করে নেওয়ার। সেজন্য অবশ্য তাঁকে গোল করতে হবে মেগা ফাইনালে। তাছাড়া মেসি ও এমবাপ্পে এই দুই জনের ক্ষেত্রেই হুলিয়ান আলভারেজ ও অলিভার জিরুডের গোল না করাটা গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিক এদের দুইজনের মধ্যেও রয়েছে গোল্ডেন বুটের আলাদা দৌড়। দুইজনই সমান পাঁচটি করে গোল করে একসাথে অবস্থান করছেন সবার উপরে। তাছাড়া ২৪ বছর হওয়ার আগেই বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে পেলেকে টপকে যাওয়ার সুযোগও থাকছে কিলিয়ান এমবাপ্পের কাছে।
খেলোয়াড় আর দলের রেকর্ড গড়ার সুযোগ ছাড়াও, কোচ দিদিয়ের দেশমের সামনেও খোলা রয়েছে রেকর্ড গড়ার পথ। তাঁর দল বিশ্বকাপ জিততে পারলে তিনি ভাগ বসাবেন ইতালিয়ান কোচ ভিত্তোরিও পোজ্জোর সাথে।
১৯৩৪ ও ১৯৩৮ সালে টানা দুইবার ইতালিকে নিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন পোজ্জো। তাছাড়া খেলোয়াড় হিসেবে একটি ও কোচ হিসেবে দুইটি বিশ্বকাপ জেতা একমাত্র ব্যক্তিতে পরিণত হবেন দিদিয়ে দশম। এমন রেকর্ডের কথা নিশ্চয়ই মাথায় রেখেছেন ফ্রান্সের ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক দেশম।
এতসব রেকর্ডের ভিরে এই বিশ্বকাপ জয়টা মেসির ফুটবলীয় ক্যারিয়ারের প্রথম এবং শেষ শিরোপা জয় হতে পারে। তাছাড়া এটাই যে সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন হতে চলেছে সেটাও আর বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না। দুই দলই চাইবে ইতিহাসের বর্ণিল পাতায় নিজেদের উজ্জ্বলতম অধ্যায়গুলো সংযুক্ত করতে। এখন শেষ অবধি শেষ হাসি কে হাসবে, সেটা সময়ই বলে দেবে।