লাল কার্ডের রাজা!

একজন ডিফেন্ডারের সবকিছুই নির্ভর করে তাঁদের জাল অক্ষত রাখার উপর। আর তা করতেই অ্যাগ্রেসিভ হয়ে কার্ড দেখার ঘটনা তো স্বাভাবিক। আর ডিফেন্ড করতে হয়ে লাল কার্ড দেখা নতুন কিছু নয়। তবে কেউ কেউ আছেন যারা লাল কার্ডকে শিল্পে পরিণত করে ফেলেছেন।

 

‘আপনি চাইলে আপনার ভাঙা নাক ঠিক করতে পারবেন, কিন্তু আপনাকে কাটিয়ে করা গোলে ফুটো হয়ে যাওয়া সম্মান কোনোদিন ফিরিয়ে দিতে পারবেন না’

-নেমানিয়া ভিদিচ

আর্সেনালের বিপক্ষে ডিফেন্ড করতে গিয়ে নাক ভেঙে এই কালজয়ী কথাটি বলেছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ডিফেন্ডার নেমানিয়া ভিডিচ।

কথাটা ভুল নয়, একজন ডিফেন্ডারের সবকিছুই নির্ভর করে তাদের জাল অক্ষত রাখার উপর। আর তা করতেই এগ্রেসিভ হয়ে কার্ড দেখার ঘটনা তো স্বাভাবিক। আর ডিফেন্ড করতে হয়ে লাল কার্ড দেখা নতুন কিছু নয়। তবে কেউ কেউ আছেন যারা লাল কার্ডকে শিল্পে পরিণত করে ফেলেছেন। মাঠের ভেতরে সর্বোচ্চ লাল কার্ড দেখা খেলোয়াড়দের লিস্ট দেখে নেওয়া যাক আজ।

  • পাওলো মন্তেরো: (২১ লাল কার্ড)

এই তালিকার আরেক সর্বজয়ী খেলোয়াড় হলেন পাওলো মন্তেরো। ৯০ এর দশকে জুভেন্টাস আর উরুগুয়ের ডিফেন্সের পিলার ছিলেন মন্তেরো।

চিরো ফেরেরার সাথে জুভেন্টাসের ইতিহাসের অন্যতম সেরা দলের ডিফেন্সিভ ডুয়ো ছিলেন দুজনে। উরুগুয়ের অধিনায়কত্বও করেছেন অনেকদিন। কিন্তু রগচটা মন্তেরোর ক্যারিয়ার উল্লেখযোগ্য হয়ে আছে ২১ লাল কার্ডের জন্য। সিরি আ ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি লাল কার্ড হজম করা খেলোয়াড়ও তিনি। ‘প্রতিপক্ষকে থামাতেই হবে, তাতে জীবন গেলে যাক’ এই ফর্মূলায় খেলা মন্তেরো স্মরণীয় হয়ে আছেন এই জায়গাতেই। রয়্যান গিগসের মতে তার ফেইস করা সেরা ডিফেন্ডারের একজন মন্তেরো।

  • অ্যালেক্সিস রুয়ানো দেলগাদো: (২২ লাল কার্ড)

লা লিগায় ভার্সেটাইল ডিফেন্ডার হিসেবে বেশ ভালো নাম রয়েছে অ্যালেক্সিসের। ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটাই খেলেছেন লা লিগায়। এখন খেলছেন রেসিং স্যান্তান্দারে, স্প্যানিশ লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনে।

লা লিগার জার্নিম্যান প্রায় ১৫ মৌসুম ধরে আছেন স্পেনে। খেলেছেন ৩২১ ম্যাচে আর লাল কার্ড দেখেছেন ২২ টি। মাঝে দুই মৌসুম স্পেনের বাইরেও গিয়েছিলেন অ্যালেক্সিস। বেসিক্তাসে এক মৌসুম খেলতে না খেলতেই তার নামে স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগ উঠে। কিন্তু তা প্রমাণ না হওয়ায় আবারও স্পেনে ফেরত আসেন অ্যালেক্সিস।

  • সিরিল রুল: (২৫ লাল কার্ড)

এই তালিকার ব্রোঞ্জ মেডেল গিয়েছে ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডার সিসিল রুলের পকেটে। বেশ বড় নাম না হলেও ক্যারিয়ারে বড় বড় ফ্রেঞ্চ ক্লাবের জার্সি জড়িয়েছেন গায়ে। মার্শেই, বোর্দো, নিস, মোনাকোর মতন ক্লাবে খেলে রেকর্ডটাও নিজের করে রেখেছেন রুল। ২০১০ সালে অবসর নেওয়া রুল ছিলেন ভার্সেটাইল খেলোয়াড়। ক্যারিয়ারে মাত্র ১ টি শিরোপা জেতা সিসিল একসময় ছিলেন সর্বোচ্চ লাল কার্ডের মালিক।

  • সার্জিও রামোস: (২৬ লাল কার্ড)

তালিকার এই নামটার সাথে নিশ্চয় কাউকে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে না। শুধু রিয়াল নয়, ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার হিসেবে তার নামটা তালিকায় আসবে। কিন্তু ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে যতটা এক্সপেরিয়ান্সড হয়েছেন, ক্যারিয়ারের শুরুতে তেমনটা ছিলেন না। মাথা গরম রামোসের ক্যারিয়ারের প্রথম ভাগেই গড়েছেন লাল কার্ড দেখার রেকর্ড।

প্রেসিং, পাসিং, ডিস্ট্রিবিউশন, ট্যাকলিং স্কিল; কোনদিক দিয়ে রামোসের সমতুল্য খেলোয়াড় খুব কমই আছে। আর তার থেকে বড় লিডারশিপ স্কিল। তার অ্যাগ্রেসিভ প্লেয়িং স্টাইল তার ক্যারিয়ারে লাল কার্ডের পাহাড় জমানোর পেছনের মূল কারণ। এই তালিকার সিলভার মেডেল তাই তালিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলোয়াড়ের পকেটে।

  • জেরার্ডো বেদোয়া: (৪৬+১ লাল কার্ড)

লাল কার্ডের রেকর্ডে রাজা জেরার্ডো বেদোয়া। একেবারে সকলের নাগালের বাইরে তিনি। কলম্বিয়ার সাবেক খেলোয়াড়ের পকেটে রয়েছে মোট ৪৬ টি লাল কার্ড। দ্বিতীয় স্থানে থাকা রামোসের সাথে তার পার্থক্য ২০টি! বুঝতেই পারছেন মাঠে কতটা ভয়ানক ছিলেন বেদোয়া।

মাঠে তার নিকনেইম ছিল ‘দ্য বিস্ট’। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে ক্যারিয়ারে অর্জন তার খুব একটা কম নয়। কলম্বিয়ার জার্সিতে ২০০১ সালে জিতেছেন কোপা আমেরিকাও।

প্রতিপক্ষের মাথায় লাথি মেরে লাল কার্ড দেখে একবার ১৫ ম্যাচের জন্যও নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। সেটা ছিল তার জীবনের ৪১ তম লাল কার্ড। এরপরেও আরো ৫ টি লাল কার্ড দেখেছেন ক্যারিয়ারে। গত মৌসুম থেকে ডাগ-আউটেও বসা শুরু করেছেন তিনি। এবং প্রথম ম্যাচে ডাগ আউটে নেমেই লাল কার্ড দেখার বিরল রেকর্ড গড়েছেন তিনি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...