নিজের একটা নীরব পথ তৈরি করে নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের ডান-বাম জুজুর কারণে খুব বেশি সুযোগ পেতেন না। তবুও যখনই সাদা পোশাকে নেমেছেন তখনই একটা লড়াকু মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। আর দিবেনই বা না কেন? প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বিশাল বিশাল সব ইনিংস খেলা সাদমানকে তো দেশের ক্রিকেট একজন টেস্ট ওপেনার হিসেবেই তৈরি করতে চেয়েছে। সাদমানও নিজেকে সেভাবেই গড়ে তুলেছিলেন। তবে হঠাত কেন এমন ছন্দ পতন?
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই ম্যাচটা অবশ্য সাদমানের খেলারই কথা ছিল না। অনেকদিন বাদে টেস্ট দলে ফিরেছিলেন তামিম ইকবাল। ফলে তামিম ইকবালের সাথে মাহমুদুল হাসান জয়ই ইনিংস শুরু করার কথা ছিল। তবে শেষ মুহূর্তে তামিম ইকবালের অসুস্থতায় আরেকটা সুযোগ পেলেন, খুব সম্ভবত এই দফায় শেষ সুযোগ।
সাদমানের এই ম্যাচে একটা কঠিন বার্তা দিয়ে রাখার প্রয়োজন ছিল। কেননা অন্য প্রান্ত থেকে জয় ইতোমধ্যে নিজের একটা জায়গা তৈরি করে ফেলছেন। তাঁকে নিয়ে বাংলাদেশ দল লম্বা সময়ের পরিকল্পনাই করছে। ফলে তামিম ইকবাল ফিরলে তাঁর একাদশে থাকা ভীষণ কঠিন, মোটামুটি অসম্ভবই।
সাদমানকে নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে স্বপ্নটাও বড়ই ছিল। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা পারফর্মার তিনি। সেখানে ১০ টি সেঞ্চুরিসহ প্রায় ৪৫ গড়ে রান করেছেন। তাঁর সবচেয়ে বড় গুন ছিল যেকোন উইকেটে টিকে থাকতে পারতেন। শুরুর কঠিন সময়টা পার করে দিয়ে আসতে পারেন।
এমনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও এই কাজটা তিনি করে দেখিয়েছেন। ক্যারিয়ারের শুরুতেই তিনি তাঁর আস্থার প্রতিদান দিতে শুরু করেছিলেন। তবে গত বছর ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ থেকেই কেমন অচেনা হয়ে উঠলেন তিনি। আজও দক্ষিণ আফ্রিকা স্পিনার হার্মারের বলে আউট হয়ে এসেছেন মাত্র ৯ রান করেই।
আর্ম বলটা বেশ খানিকটা নিচু হয়ে গিয়েছিল বটে। তবে সাদমানও তাঁর ডিফেন্সে ভরসা রাখতে পারেননি। নিচু হয়ে আসা বলটা সামনের পায়ে ডিফেন্স না করে ব্যাকফুটে খেলতে গিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই পরাস্ত হয়েছেন। বোল্ড হয়ে ফিরে এসেছেন।
অথচ এই সময়গুলোতেই টিকে থাকার কথা ছিল তাঁর। চট্টগ্রামের বিপক্ষে সেই টেস্টের আগে তিনি এই কাজটা খুব ভালো ভাবেই করছিলেন। টেস্টে ওপেন করতে নেমে রান করা যতটা জরুরি সেই সময়টায় পিচ আকরে ধরে সময়টা কাটানোও ততটাই জরুরি। এতে করে পরের ব্যাটসম্যানদের জন্য কাজটা সহজ হয়ে যায়। বাংলাদেশের হয়ে খেলা ৮ টেস্টে সাদমান ব্যাটিং করেছেন মোট ১০৭৮ বল। অর্থাৎ প্রতি ম্যাচে গড়ে ১৩৫ টি করে বল খেলেছেন এই ওপেনার। বলার চেষ্টা করছি যে টেস্টে উইকেট আঁকড়ে পড়ে থাকার অভ্যাসটা তাঁর আছে।
তবে একটা সমস্যাও তাঁর ছিল। দারুণ শুরু করা এই ইনিংসগুলোকে তিনি বড় করতে পারছিলেন না। সেই আক্ষেপটাও তিনি মিটিয়েছিলেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলেন নিজের অষ্টম ম্যাচে হারারেতে। এছাড়া ওই ম্যাচের পর তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল ৩৪.০৭।
তবে এরপর শেষ ৯ ইনিংসে সাদমানের সর্বোচ্চ স্কোর মাত্র ২২। এই সময়ে দুই অঙ্কের স্কোর করতে পেরেছেন মাত্র তিনবার। এমনিতেই বাঁহাতি হওয়ায় বাংলাদেশ দল তাঁকে তামিমের সাথে ওপেন করতে খুব একটা আগ্রহ দেখাত না। তবুও ব্যাট হাতে নিজের একটা অবস্থান তৈরি করে নিচ্ছিলেন। কিন্তু এই ম্যাচে প্রমাণ করতে না পারলে সাদমানের পথটা যে বড্ড কঠিন হয়ে যাবে। আরেকটা স্বপ্ন কী তবে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হতে চলেছে?