স্পেনের সংবাদপত্রগুলোর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। কোন ফুটবলার ইনজুরি থেকে ফিরে আসার সংবাদ তাঁরা ‘নিউ সাইনিং’ শিরোনামে প্রকাশ করে। কেননা ইনজুরির আগের খেলোয়াড়ের সাথে ইনজুরি পরবর্তী খেলোয়াড়ের শারিরীক এবং মানসিক পরিবর্তন দেখা যায়, ফলে পরিবর্তন ঘটে পারফরম্যান্সেরও। তবে এবার সত্যি সত্যিই পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে নতুন কাউকে পেতে যাচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ।
লস ব্ল্যাঙ্কোসদের বর্তমান অধিনায়ক করিম বেনজেমা বিশ্বকাপের আগে ছিটকে গিয়েছিলেন মাঠ থেকে। তিনিই এবার ফিরছেন নতুন রূপে; জনপ্রিয় স্প্যানিশ গণমাধ্যমের মতে, এই ফরাসি স্ট্রাইকার লিগের দ্বিতীয় ভাগটা খেলবেন প্রতিশোধের জন্য, আর সেই প্রতিশোধটা যে ফ্রান্স জাতীয় দলের উপর নিতে চান বেনজেমা সেটি বোধহয় আলাদাভাবে বলা লাগে না।
কেন নিজ দেশের জাতীয় দলের উপর এত ক্ষোভ করিম বেনজেমার – জানতে হলে ফিরে যেতে হবে কাতার বিশ্বকাপের আগের সময়টাতে। দলের সাথে কাতার যাওয়ার পর মাংসপেশীর চোটে পড়েন বেনজেমা, এরপরই তাঁকে ফেরত পাঠানো হয় সেখান থেকে। বৈশ্বিক টুর্নামেন্টটির ফাইনালের আগে বেনজেমা জাতীয় দলের ড্রেসিংরুমে ফিরবেন সেই গুঞ্জন শোনা গেলেও দু’পক্ষের কেউই ছিলেন না যথেষ্ট আগ্রহী। এমনকি খেলা দেখতে গ্যালরিতেও আসেননি রিয়াল মাদ্রিদ অধিনায়ক।
তবে এ সময়টায় বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ইনজুরিতে পড়লেও বিশ্বকাপের নক আউট ম্যাচে অন্তত খেলার জন্য ফিট হয়ে উঠতেন বলেই বিশ্বাস ছিল করিম বেনজেমার, কিন্তু কোচ দিদিয়ের দেশম সেই সুযোগ দেননি সময়ের অন্যতম সেরা নম্বর নাইনকে। তাই নিজে থাকতে চাইলেও কোচের নির্দেশে টিম হোটেল ছাড়তে হয় বেনজেমাকে।
শুধু ইনজুরি নয়, ফ্রান্স দলের বেশ কয়েকজন প্রভাবও রয়েছে বেনজেমা ইস্যুতে। বিশেষ করে আঁতোয়ান গ্রিজম্যান, হুগো লরিসের মত সিনিয়র সদস্যরা সম্ভবত করিম বেনজেমার সাথে খেলতে আগ্রহী ছিলেন না। বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ে অধিকাংশ ফরাসি ফুটবলারের সাথে সামাজিক মাধ্যমে সম্পর্ক ছিন্ন করে এই সম্ভাবনাকে জোরালো করেছেন স্বয়ং বেনজেমা; যদিও রাফায়েল ভারানে, এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গার মত রিয়াল মাদ্রিদে খেলা কয়েক জনের সাথে যুক্ত আছেন তিনি।
অবশ্য চলতি মৌসুমের অনেকটা সময়ই খেলার বাইরে থাকতে হয়েছে করিম বেনজেমাকে। এই মৌসুমে মাত্র ৯৫৪ মিনিট খেলেছেন তিনি। সর্বোচ্চ সময় মাঠে থাকার হিসেবে অল হোয়াইটদের মাঝে ১৩তম এই তারকা। ফর্মের বিচারেও ততটা সন্তোষজনক অবস্থায় নেই তিনি, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে করতে পারেননি একটি গোলও। লা লিগায় ছয় গোল করলেও সেটি বেনজেমার নামের পাশে যথেষ্ট নয়।
আগামী ৩০ ডিসেম্বরের ম্যাচ দিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ মাঠে ফিরে আসবে। আর সেই লক্ষ্যে করিম বেনজেমা আপাতত ব্যস্ত নিজেকে শতভাগ প্রস্তুত করতে। প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ চুরমার করতে চাইবেন তিনি; চাইবেন গোল করতে আর করাতে। সর্বোপরি বিশ্বকে এটা দেখিয়ে দিবেন যে, তাঁকে স্কোয়াডে না রেখে বড্ড ভুল করেছে ২০১৮ সালে বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
আগের চেয়ে দৃঢ় মানসিকতা, নিজেকে প্রমাণের জেদ আর শারিরীকভাবে ফিট – করিম বেনজেমা হয়ে উঠতে পারেন যেকোনো দলের জন্য ত্রাস। ইতোমধ্যে নিজের ভয়ংকরতম মূর্তি অনেক বারই দেখিয়েছেন তিনি। গত মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এনে দিতে যেভাবে পারফর্ম করেছেন সেটিই তাঁর সামর্থ্য বুঝিয়ে দেয়। আরও একবার তেমন কিছু করতে নিশ্চয়ই মুখিয়ে আছেন এই স্ট্রাইকার।
অনুপ্রেরণার নতুন উৎস খুঁজে পাওয়া যেকোনো ক্রীড়াবিদের জন্য আশীর্বাদ। এবং সেই আশীর্বাদ যদি করিম বেনজেমার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হয়, প্রতিশোধের আগুন যদি অতিমানবীয় পারফরম্যান্সে রূপান্তরিত হয় তাহলে নিশ্চিত ভাবেই আক্ষেপে পুড়বে ফ্রান্স আর সান্তিয়াগো বার্নাব্যু ভরে উঠবে নতুন ট্রফিতে।