ফ্ল্যাশব্যাক ২০১৮, আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স

লুসাইলের মঞ্চটা আর্জেন্টিনার জন্য তাই প্রতিশোধের, অন্যদিকে ফরাসিরা চাইবে নিজেদের জয়ের ধারাটা অব্যাহত রাখতে।

লুসাইলের মঞ্চটা প্রস্তুত। কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা এবং ফ্রান্স। শেষ বিশ্বকাপ খেলতে আসা মেসির নিরঙ্কুশ শ্রেষ্ঠত্বে হানা দিতে প্রস্তুত কিলিয়ান এমবাপের ফ্রান্স। মাসখানেকের বেশি সময় ধরে বিশ্বসেরা সব দলের মোকাবেলা করে শিরোপার দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে দুই দল। লুসাইলে ম্যাচ শুরুর আগে ফ্রান্সকে স্বস্তি দিচ্ছে চার বছর আগের রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ৪-৩ গোলের জয়। 

১৯৯৮ এবং ২০০২ বিশ্বকাপের ব্রাজিলের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে টানা দুই বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলো ফ্রান্স। বিগত সাত আসরের মধ্যে এটি তাঁদের চতুর্থ ফাইনাল। সেমিফাইনালে বিশ্বকাপের চমক মরক্কোকে ২-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট কাটে ফরাসিরা। অন্যদিকে ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে জার্মানির কাছে হারের পর আরো একবার ফাইনালে মেসিরা।

সেবারের হারের ক্ষতে প্রলেপ দিতে এবারের ফাইনালে জয়ের বিকল্প নেই তাঁদের। সৌদি আরবের কাছে প্রথম ম্যাচে হেরে গিয়েও দারুণভাবে ফিরে এসেছে তাঁরা। সেমিতে প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া রীতিমতো অসহায় আত্নসমর্পন করেছে মেসি – আলভারেজদের সামনে, ৩-০ গোলের সহজ জয়ে লুসাইলের টিকিট কেটেছে তাঁরা। 

বিশ্বকাপের ইতিহাসে এখনো পর্যন্ত তিনবার মুখোমুখি হয়েছে এই দুই দল। ১৯৩০ এবং ১৯৭৮ বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বের ম্যাচগুলোতে আর্জেন্টিনা শেষ হাসি হাসলেও ২০১৮ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে তাঁদেরকে হারিয়ে ফাইনালের পথে একধাপ এগিয়ে গিয়েছিল ফ্রান্স। পরতে পরতে রঙ বদলানো সে ম্যাচে মেসিরা পেরে উঠেননি দুরন্ত ফ্রান্সের সঙ্গে। সেই ম্যাচ থেকেই এবারের ফাইনাল জয়ের অনুপ্রেরণা খুজবে দেশমের দল। 

সেদিন ম্যাচের ১৩ মিনিটেই কাউন্টার অ্যাটাকে এমবাপের গতিতে ধরাশয়ী আর্জেন্টাইন ডিফেন্স। তাঁকে থামাতেই কিনা পেছন থেকে ফাউল করে বসলেন মার্কাস রোহো। ফলাফলস্বরূপ পেনাল্টি, স্পটকিক থেকে বল জালে জড়াতে কোনো সমস্যাই পোহাতে হয়নি আতোয়ানে গ্রিজম্যানের। পিছিয়ে পড়ে আক্রমণের ধার বাড়িয়েছে আর্জেন্টিনা। ফলাফল পেতেও অপেক্ষা করতে হয়নি, প্রথমার্ধ শেষের মিনিট চারেক আগে বক্সের বাইরে থেকে ডি মারিয়ার দর্শনীয় এক গোলে ম্যাচে ফেরে আলবিসেলেস্তেরা। 

তবে ম্যাচের সবটুকু নাটক যেন তুলে রাখা ছিল দ্বিতীয়ার্ধের জন্য। ৪৮ মিনিটেই গ্যাব্রিয়ের মার্কাদোর গোলে ম্যাচে প্রথমবারের এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ফরাসি শিবিরে তখন দুশ্চিন্তার কালো মেঘ, সোনালি প্রজন্ম নিয়ে আরো একবার ব্যর্থ হওয়ার শংকা। কিন্তু সবকিছু বদলে দিলেন বেঞ্জামিন পাভার্ড, বক্সের বাইরে থেকে অনবদ্য এক ভলিতে দলকে সমতায় ফেরালেন।

বিশ্বকাপের ইতিহাসের অন্যতম সেরা গোলের তালিকায় অনাসায়েই স্থান পাবে গোলটি। এরপরের ঘটনা সামান্যই, পাভার্ডের বিস্ময়কর সেই গোলের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি লাতিনের দলটি। সেই সুযোগে কিলিয়ান এমবাপের জোড়া গোলে ম্যাচ পকেটে পুরে নেয় ফ্রান্স। অতিরিক্ত সময়ে সার্জিও আগুয়েরোর গোল তাই কেবলই ব্যবধান কমিয়েছে। 

তবে চার বছরে বদলে গেছে অনেককিছু। আর্জেন্টিনার ডাগআউটে হোর্হে সাম্পাওলির জায়গায় এসেছেন লিওনেল স্কালোনি। ২৮ বছরের শিরোপা খরা কাটিয়ে দলকে জিতিয়েছেন কোপা আমেরিকার শিরোপা। তাঁর আর্জেন্টিনা যেন অনেক বেশি ভয়ংকর, আরো বেশি অপ্রতিরোধ্য। অন্যদিকে এবারের বিশ্বকাপের শুরুতে ইনজুরির কারণে ফ্রান্স হারিয়েছে তাঁদের মিডফিল্ডের দুই কান্ডারি – এনগোলো কান্তে এবং পল পগবা। কিন্তু দারুণ সব প্রতিভাবান ফুটবলার আর মাস্টার মাইন্ড দিদিয়ের দেশমে ভর করে ফাইনাল নিশ্চিত করতে বেগ পোহাতে হয়নি তাঁদের। 

লুসাইলের মঞ্চটা আর্জেন্টিনার জন্য তাই প্রতিশোধের, অন্যদিকে ফরাসিরা চাইবে নিজেদের জয়ের ধারাটা অব্যাহত রাখতে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...