বন্যার কান্না থামাবে যে ট্রফি

রিপা শৈশব থেকে খুব লড়াই করে নিজেকে আজকের পর্যায়ে এনেছেন। নিজের কষ্টের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়েই এবার সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘব করতে চান তিনি।

স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কবলে সিলেটের অবস্থা নাজেহাল। বানের জলে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। রাস্তাঘাট সহ পানির নিচে তলিয়ে গেছে বহু ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি। সিলেটের এই সংকটকালীন সময়ে সরকারের পাশাপাশি এগিয়ে এসেছে বহু সামাজিক সংগঠন সহ পরিচিত-অপরিচিত অনেক মুখ।

সিলেটের সাধারণ মানুষের এই দুর্দিনে বর্ন্যাতদের সাহায্যে এগিয়ে আসা অনেকের পাশাপাশি এবার এই মহৎ কাজে যোগ দিতে চান বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এক নারী ফুটবলার। বর্ন্যাতদের আহাজারি আর আকুতি হৃদয় ছুঁয়ে গেছে ১৭ বছর বয়সী এই ফুটবলারেরও।

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবল দলের স্ট্রাইকার শাহেদা আক্তার রিপা নিজের জেতা টুর্নামেন্ট সেরার ট্রফি নিলামে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। সেখান থেকে প্রাপ্ত অর্থ সিলেটের বন্যাদুর্গতের সহায়তায় ব্যয় করতে চান এই ফুটবলার। রিপা শৈশব থেকে খুব লড়াই করে নিজেকে আজকের পর্যায়ে এনেছেন। নিজের কষ্টের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়েই এবার সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘব করতে চান তিনি।

গেল বছর ২০২১ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জেতে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবল দল। বাংলাদেশকে জেতাতে পুরো আসর জুড়ে ফুটবল পায়ে দুর্দান্ত পারফরম করেন শাহেদা। সর্বোচ্চ ৫ গোল করে টুর্নামেন্ট সেরা ও টুর্নামেন্টে তিন ম্যাচে ম্যাচ সেরার পুরষ্কার জেতেন বাংলাদেশ নারী ফুটবলের এই ভবিষ্যত সম্ভাবনাময়ী তারকা।

টুর্নামেন্ট সেরার পুরষ্কার হিসেবে জেতা ট্রফি নিলামে তুলছেন কক্সবাজারের এই সমুদ্রকণ্যা। নিজের ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে শাহেদা লিখেছেন, ‘আমার ছোট্ট ক্যারিয়ার জীবনে আমার সবচেয়ে যেটা বড় পাওয়া সেটা হল – ২০২১ সালে শেষ হওয়া সাফ অনূর্ধ্ব -১৯ চ্যাম্পিয়নশীপে টুর্নামেন্টে আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। ঐ টুর্নামেন্টে আমি সেরা গোলদাতা (৫ গোল) ও সেরা খেলোয়াড় (৩ ম্যাচে) হয়েছিলাম। উক্ত সেরা গোলদাতার ট্রফিটি আমি নিলামে তুলতে চাই। যার সম্পুর্ণ অর্থ ব্যায় হবে সিলেটের বন্যার্ত মানুষের পাশে। কোনো দয়াবান ব্যক্তি যদি আমার এই মহৎ কাজের অংশীদার হোন তাহলে আমরা কিছুটা হলেও বন্যার্ত মানুষের পাশে থাকত পারবো।’

কক্সবাজারের উখিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন শাহেদা। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে পাড়ার মাঠে ফুটবল খেলা শুরু। তখনও ছোট্ট শাহেদা জানতেন না বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল বলতে কিছু আছে। এরপর ধীরে ধীরে বেড়ে উঠা। পায়ের জাদুতে নিজ এলাকাতেই বেশ নাম কামান এই তরুণী। ফুটবলকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিতে চাইলেন।

এরপর কোচের সহায়তায় ২০১৬ সালে ঢাকায় আসলেন। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপিতে) ভর্তি হয়ে যান শাহেদা। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। নিজের প্রতিভা আর সামর্থ্যর সেরাটা দিয়ে নজরকাঁড়া পারফরম্যান্সে উঠে আসেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। অল্প সময়েই ক্যারিয়ারে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছেন এই নারী ফুটবল তারকা।

এবার মানবতার সেবার নিজেকে নিয়োজিত করতে এগিয়ে আসতে চান ১৭ বছর বয়সী এই যুব তারকা ফুটবলার। টুর্নামেন্ট সেরার সেই ট্রফি নিলামে তুলতে চেয়েছেন সবার সহযোগিতাও।

এই ব্যাপারে তাঁরই বড় ভাই ফারুক হোসেন খেলা ৭১-কে বলেন, ‘রোজ পত্র-পত্রিকাতে বন্যার খবর দেখি। কষ্ট পাই, কত মানুষ অসহায় জীবন যাপন করছে। এর আগে কোভিডের সময়ে মাশরাফি বিন মুর্তজা নিজের ব্রেসলেট নিলামে তুলেছিলেন, সেটা আমাদের সবার সামনেই একটা আদর্শ। এবার আমরাও তেমন কিছু করে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই।’

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...