শার্দুল ঠাকুরকে ছেড়ে দিয়ে দিল্লী ক্যাপিটালস যখন আমান হাকিম খানকে দলে ভিড়িয়েছেন তখন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। সবে ১৪ টি টোয়েন্টিতে মাঠে নামা এই তরুণের মাঝে তখনই ভবিষ্যতের তারকা হওয়ার সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছিল দিল্লী। খানিকটা দেরিতে হলেও দিল্লী ম্যানেজমেন্টের আস্থার প্রতিদান দিতে শুরু করেছেন এই তরুণ।
ছোটবেলাতে বাবাকে দেখেই ক্রিকেটের প্রেমে পড়া আমানের। হতে চেয়েছিলেন ফাস্ট বোলার, চেয়েছিলেন দুরন্ত গতিতে ব্যাটসম্যানদের পরাস্ত করতে। কিন্তু জীবন তো আর সমান্তরাল পথ নয়, মানুষ ভাবে এক আর ঘটে আরেক। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই সড়ক দুর্ঘটনায় পায়ে মারাত্নক আঘাত পান আমান। ফলে জলাঞ্জলী দিতে হয় পেসার হওয়ার স্বপ্ন।
সবাই ভেবেছিলেন বাইশ গজে হয়তো আর ফেরা হবে না আমানের। কিন্তু আমান এত সহজে হাল ছাড়ার পাত্র নন, বোলিং ছেড়ে শুরু করেন ব্যাটসম্যান হওয়ার সাধনা।
আলো ছড়াতেও সময় নেননি, স্থানীয় এক টুর্নামেন্টে ঝড়ো ৬০ রানের ইনিংস খেলে নজর আসেন মুম্বাইয়ের বিখ্যাত কোচ প্রভীণ আমরের। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি আমানকে।
ক্রমেই মুম্বাইয়ের বয়সভিত্তিক দলের গন্ডি পেরিয়ে জায়গা করে নেন সিনিয়র দলে। নিজের অভিষেক মৌসুমেই বুঝিয়ে দেন চাপের মুখেই নিজের সেরাটা বেরিয়ে আসে তাঁর। বিজয় হাজারে ট্রফির সেমিফাইনালে কর্ণাটকের বিপক্ষে ছয় নম্বরে নেমে ১৮ বলে ২৭ রানের ম্যাচ জেতানো এক ইনিংস খেলেন এই তরুণ।
মুম্বাইয়ের ক্রিকেট পাড়ায় হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান হিসেবে সুনাম আছে আমানের। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে মূহুর্তেই ম্যাচের চিত্রনাট্য বদলে দিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। তবে তা সত্ত্বেও কেন যেন আইপিএলের দলগুলোর মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারছিলেন না। টানা ছয় বছর আইপিএলের দলগুলোতে ট্রায়াল দিলেও ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। তবে আমান হাল ছাড়েননি, পরিশ্রম আর একাগ্রতার সাথে লেগে ছিলেন।
অবশেষে ২০২১ মৌসুমে বিশ লাখ রুপির বিনিময়ে তাঁকে দলে ভেড়ায় কলকাতা নাইট রাইডার্স। কিন্তু নিতীশ রানা, আন্দ্রে রাসেল, শ্রেয়াস আইয়ারদের নিয়ে গড়া কলকাতার তারকাবহুল মিডল অর্ডারে খুব বেশি মাঠে নামার সুযোগ পাননি তিনি। দুই মৌসুম মিলিয়ে মাত্র একটি ম্যাচে নেমে পাঁচ রানের বেশি করতে পারেননি আমান।
কিন্তু দিল্লী ক্যাপিটালস যেন আমানের মাঝেই খুঁজে পেয়েছিল প্রতিভাবান এক তরুণের প্রতিচ্ছবি। সেই কারণেই মৌসুম শুরুর আগে প্রথম সুযোগেই তাঁরা দলে ভেড়ায় এই তরুণকে।
ঋষাভ পান্তের ইনজুরির কারণে দিল্লীর মিডল অর্ডারের ফাঁকা জায়গা পূরণের দায়িত্বটা দেয়া হয় আমানকেই। শুরুতে ব্যর্থ হলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে যেন খোলস ছেড়ে বেরোচ্ছেন, ম্যানেজমেন্টের আস্থার প্রতিদান দিচ্ছেন দারুণভাবে।
গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে ম্যাচে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ২৩ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে দিল্লী রীতিমতো কাঁপছিল, চোখ রাঙাচ্ছিলো সর্বনিম্ন রানে অল আউটের শংকা। কিন্তু দলের বিপদেই যেন সেরাটা বেরিয়ে আসে আমানের, একপ্রান্ত আগলে খেললেন দুর্দান্ত এক ইনিংস।
তাঁর ৪৪ বলে ৫১ রানের ইনিংসেই লড়াকু সংগ্রহ পায় দিল্লী। আহমেদাবাদের বোলিং সহায়ক পিচে বাকি ব্যাটাররা যেখানে খাবি খেয়েছেন, সেখানে আমান ছিলেন সাবলীল।
নিজের সামর্থ্যের জানান দিতে এমন একটা ইনিংসের বড্ড প্রয়োজন ছিল আমানের। এখন দেখার বিষয় নিজের ফর্মটা ধরে রাখতে পারেন কিনা এই তরুণ তারকা।