সাত নম্বরে রিয়াদ সমাধান নাকি সমস্যা?

নির্বাচকদের দল নির্বাচন নিয়ে আর কোনো হস্তক্ষেপ নয়, এমনটাই বারবার বলে এসেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। কিন্তু বাস্তব চিত্র বলে উল্টোটা। দল নিয়ে নিজের হস্তক্ষেপের পুরনো অভ্যাস এখনো বদলাতে পারেননি তিনি। এই চেমসফোর্ডেই আইরিশদের বিপক্ষে সিরিজ চলাকালীন বলে বসেছিলেন, আমার মনে হয় বিশ্বকাপের স্কোয়াডে থাকবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ!

বিশ্বকাপ অনিশ্চয়তায় ঝুলতে থাকা রিয়াদের ভাগ্যে সুপ্ত সম্ভাবনার উদয় ঘটে এরপর থেকেই। এর ঠিক সপ্তাহ খানেক বাদে বিসিবি সভাপতির ভাষ্যে আবারো রিয়াদের বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনার তীব্রতা পাওয়া গেল। আজ মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন বিসিবি প্রধান।

তাঁর মতে, কোনো কারণে পাঁচ বোলার নিয়ে খেললে একটা সুযোগ থাকে একজন বাড়তি ব্যাটার খেলানোর। আর সেখানেই যুক্ত হতে পারেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। রিয়াদের পাশাপাশি এ পজিশনে খেলার আফিফ, মোসাদ্দেকরাও রয়েছেন বিবেচনায়।

তবে আলাদা করে রিয়াদ প্রসঙ্গ আসতে বিসিবি প্রধান বলেন, ‘বিশ্বকাপ কিন্তু অনেক বড় মঞ্চ। এখানে অবশ্যই অভিজ্ঞতার ব্যাপারটা বিবেচ্য হওয়া উচিৎ। এখন দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত, নির্বাচক কমিটি কী করে।’

নাজমুল হাসান পাপন যদিও এ দিন স্পষ্টভাবে সাত নম্বরের জন্য রিয়াদকেই চূড়ান্ত করেননি। তবে চেমসফোর্ডে ঠিকই রিয়াদকে নিয়েই বিশ্বকাপ ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন। এবার সরাসরি না বললেও রিয়াদের প্রসঙ্গে ইতিবাচক ভাবনার কথাই জানিয়েছেন তিনি।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বিসিবি সভাপতির এমন মন্তব্যের পরে রিয়াদকে নিয়ে নির্বাচক কমিটি, টিম ম্যানেজমেন্টের রায়টা হবে কি? অতীত ইতিহাস বলে, নাজমুল হাসান পাপনের হস্তক্ষেপে এর আগেও দল পাল্টেছে বহুবার। তাই বিসিবি প্রধান নির্বাচক কমিটির কাছে দল নির্বাচনে চূড়ান্ত রায় ছেড়ে দিলেও, শেষ পর্যন্ত তাঁর ইচ্ছার প্রাধান্য প্রতীয়মান হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সে হিসেবে সম্ভাব্য বিশ্বকাপ স্কোয়াডে রিয়াদ থাকছেন বলেই ধরে নেওয়া যায়।

এবার আসা যাক, ৭ নম্বরে রিয়াদ কতটা মানানসই, সে প্রসঙ্গে। ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ৭১ টা ইনিংস এই পজিশনেই খেলেছেন রিয়াদ। অভিজ্ঞতার বিচারে তাই তিনিই এগিয়ে।

কিন্তু শুভঙ্করের ফাঁকিটা হচ্ছে, রিয়াদ এই পজিশনে সবশেষ বাংলাদেশের হয়ে খেলেছিলেন ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। অর্থাৎ চার বছরেরও বেশি সময় ধরে ফিনিশিং রোলে রিয়াদের খেলার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। অথচ বাংলাদেশ খুঁজছে একজন পুরোদস্তুর ফিনিশারকেই।

কিন্তু সেই সন্ধানে এখনো কাউকে মনে ধরেনি টিম ম্যানেজমেন্টের। মিরাজ শেষ সিরিজে খারাপ খেলেননি সাতে। তবুও মিরাজকে পুরোদস্তুর ব্যাটার হিসেবে ভাবতেই যত ঝুঁকি নির্বাচক, টিম ম্যানেজমেন্টের। রিয়াদের পরে সাতে খেলার দৌড়ে থাকা আফিফ অবশ্য কিছুটা সামর্থ্যের প্রতিদান দিয়েছিলেন।

কিন্তু, বড় প্রতিপক্ষ আর বড় মঞ্চের অসম চাপ কাঁটাতে এ ব্যাটার রীতিমত ব্যর্থ। আর আছেন, রাব্বি, সোহান, মোসাদ্দেকরা। যারা কেউই নিয়মিত দলের সঙ্গী হতে পারেননি। যদিও সুযোগও সেভাবে পাননি তাঁরা।

মোদ্দাকথা, সাত নম্বর পজিশনটাই যেন বাংলাদেশের জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছে সাত নম্বর বিপদ সংকেত। একটি পজিশন, দৌড়ে রয়েছেন ৬/৭ জন। কিন্তু দলে এসে কেউই আশা জাগানিয়া কিছু করে দেখাতে পারেননি। যদিও চলতি ডিপিএলে আফিফ, রিয়াদ-দুজনই ৫০০ এর উপরে রান করেছেন। পারফর্ম করেছেন সোহান, মোদাদ্দেকরাও। তাই টিম ম্যানেজমেন্টের এক জন বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়াটা কঠিনই হচ্ছে।

তবে সেই সব কাঠিন্য দূর হয়ে যেতে পারে বিসিবি প্রধানের এক হস্তক্ষেপেই। এখন পর্যন্ত তাঁর ভাষ্যে রিয়াদের দলে থাকাটাই গুরুত্ব পেয়েছে বেশি। এখন বিসিবি সভাপতির সেই চাওয়াটা অগ্রাহ্য করার দু:সাহস সত্যিই কি আছে টিম ম্যানেজমেন্টের? কিংবা কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে কি পারবেন রিয়াদকে ছাড়া বিশ্বকাপে যেতে? সেটা অবশ্য সময়ই বলে দেবে।

তবে এ ক্ষেত্রে একটা পরিসংখ্যান যুক্ত করা শ্রেয়। সাত নম্বরে রিয়াদের ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট ৭৭.৩০! অথচ টিম ম্যানেজমেন্ট কিন্তু একজন আগ্রাসী ফিনিশার চাচ্ছে। সেই চাওয়ায় রিয়াদ কোনোভাবেই যান না। এখন শেষ পর্যন্ত চাওয়া, না চাওয়ার দোলাচলে যদি রিয়াদ বিশ্বকাপের টিকিট পেয়ে যান, তাহলে বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপের মঞ্চে বড় কোনো মাশুল দিতে যাচ্ছে না তো? সেই প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link