ক্রিকেট দুনিয়ায় গৌরবময় রেকর্ডের যেমন ছড়াছড়ি তেমনি লজ্জাজনক রেকর্ডেরও কমতি নেই। কিছু রেকর্ড তো একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। কেউ সহজে সেদিকটায় পা মাড়াতে চায় না। তবে অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে ঘটে যেতে পারে যেকোনো কিছুই। ক্রিকেট পাড়ায় ব্যাটারদের জন্য লজ্জাজনক এক ফিগার ডাক বা শূন্য রানে আউট হওয়া। ডাকের লজ্জায় পড়তে চায় বা কে? ডাকের চেয়ে বড় লজ্জা ব্যাটারদের জন্য আর কি হতে পারে?
কিন্তু এই লজ্জাটা যেন রীতিমতো অপমানের মত দাঁড়িয়েছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক রোহিত শর্মার জন্য। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ইতিহাসে সর্বোচ্চ ডাকের রেকর্ড গড়েছেন এই তারকা ওপেনার। তারকা খ্যাতিটা তো আছেই। রঙিন পোশাকে ভারত তথা ক্রিকেট পাড়ার অন্যতম সেরা ব্যাটার তিনি। পরিসংখ্যানও তাই বলে। তবে আইপিএলে গেল কয়েক আসর ধরেই ব্যাট হাতে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারছেন না রোহিত। সব ছাপিয়ে এবারের আসরটা যেন ব্যাট হাতে আরও হতাশাজনক।
চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে খেলতে নেমেই ফিরেছেন শূন্য রানে। আইপিএল ইতিহাসে ১৪তম বার ফিরলেন ডাক মেরে। আইপিএল ইতিহাসে এখন সর্বোচ্চ ডাকের মালিক এখন তিনি। অধিনায়ক হিসেবে এই লজ্জাজনক রেকর্ডটা অপমানের চেয়ে কম নয়। তাও আবার আসরের প্রথম সাত ম্যাচে হেরে দল যখন ব্যর্থতার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে।
ইনিংসের দ্বিতীয় বল। চেন্নাই সুপার কিংসের পেসার মুকেশ চৌধুরীর ইন্স্যুইংগার পুশ করতে গিয়ে সরাসরি মিড অনে থাকা মিশেল স্যান্টনারের হাতে। আরেকটি ইনিংস, আরেকটি হতাশা। ২ বলে শূন্য রানে আউট রোহিত শর্মা।
আইপিএল ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ বার করে শূন্যে আউট হয়েছেন আম্বাতি রাইডু, অজিঙ্কা রাহানে, পিয়ুষ চাওলা, হরভজন সিং, মানদ্বীপ সিং ও পার্থিব প্যাটেল। অপরদিকে, ১২ বার করে শূন্য রানে আউট হয়েছেন গৌতম গম্ভীর, দীনেশ কার্তিক ও মানিষ পান্ডেরা। অস্ট্রেলিয়ান তারকা অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল খালি হাতে ফিরেছেন ১১ বার। এছাড়া এবি ডি ভিলিয়ার্স, শিখর ধাওয়ান, অমিত মিশ্র ও সুনিল নারাইনরা আইপিএলে শূন্য রানে আউট হয়েছেন ১০ বার করে।
ম্যাচ শুরুর আগেই অবশ্য সুসংবাদ পেয়েছিলেন রোহিত। ক্রিকেটের বাইবেল খ্যাত উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমানাকের ২০২২ বর্ষসেরা পাঁচ ক্রিকেটারের তালিকায় আছেন এই ভারতীয় ওপেনার। তবে সেটি দুঃস্বপ্নে রূপ নিতে সময় লাগলো না। শূন্য রানে আউট হয়ে ব্যর্থতার ডাইরিটা আরও ভারী করলেন রোহিত।
এবারের আসরে এখন পর্যন্ত ৭ ম্যাচে তাঁর রান মাত্র ১১৪। গড় ১৬.২৮। স্ট্রাইক রেট ১২৬.৬৬। নেই কোনো ফিফটি।
এমন পরিসংখ্যান রোহিতের নামের পাশে যে বড্ড বেমানান। ব্যাট হাতে যেমন হতশ্রী পারফরম্যান্স, তেমনি অধিনায়ক হিসেবে তিনি পরিচয় দিয়েছেন চরম ব্যর্থতার। কিন্তু রোহিতই আবার ক্রিকেট দুনিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়েই অধিনায়ক হিসেবে জিতেছেন পাঁচ শিরোপা! টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সফল অধিনায়কটাই এবার অবস্থান করছে মুদ্রোর উল্টো পিঠে। সফলতার শীর্ষে থেকে যেমন ২২ গজ শাসন করেছেন তেমনি ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করতেও যেন কোনো কমতি নেই রোহিতের।
যেই মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের জার্সি গায়ে সফলতার সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠেছেন, সেই মুম্বাইয়ের জার্সি গায়ে তিনি এবারের আসরের সবচেয়ে ব্যর্থ অধিনায়ক। প্রথম দল হিসেবে কোনো আসরের প্রথম সাত ম্যাচেই হেরেছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স।
রোহিতকে নিয়ে পুরো আসরেই চলছে আলোচনা, সমালোচনা। ক্রিকেট সমর্থকদের সমালোচনার তোপের মুখেই আছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ট্রলের কমতি নেই। এদিকে সাবেক ভারতীয় কোচ রবি শাস্ত্রী মনে করেন, ‘বিরাটের মত রোহিতেরও উচিত আইপিএলে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়া।’
জাতীয় দলের জার্সিতে তিন ফরম্যাটেই পেয়েছেন অধিনায়কের দায়িত্ব। কিন্তু অধিনায়কত্বের চাপ কি জাপটে ধরেছে রোহিতকে? ব্যাট হাতে রোহিতের আগ্রাসনটার দেখা মিলছে না বেশ কিছু সময় ধরেই। ক্যারিয়ারের শেষভাবে এসে এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্সটা নিশ্চয়ই রোহিতদের জন্য বিপদ সংকেত।
এমন লজ্জাজনক পারফরম্যান্সের পর হয়ত শাস্ত্রীর কথাই সত্য হতে পারে। তবে নিজেকে ফিরে পাওয়ার চেষ্টায় নিশ্চয়ই মত্ত আছেন রোহিত। একটা ভাল ইনিংস ফিরিয়ে আনতে পারে রোহিতের সেই আগ্রাসনটা। তবে সেটির দেখা কবে মিলবে তাও অজানা!