অবশেষে একবছর অপেক্ষার পর শুক্রবার দিবাগত রাত একটায় রোমের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে পর্দা উঠছে এবারে ইউরো ২০২০ এর। রোমের মেয়র ভার্জিনিয়া র্যাগি একে আখ্যায়িত করেছেন নতুন সূচনা হিসেবে।
ম্যাচ শুরুর আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গান গাইবেন বিখ্যাত ইতালীয় সংগীত শিল্পী আন্দ্রেয়া বোচেল্লী। এছাড়াও দর্শকদের মাঠে টানতে চেষ্টার কমতি রাখছেন না আয়োজকরা। স্টেডিয়ামের বাইরেই রোমের কেন্দ্রেই তৈরি করা হয়েছে ফুটবল গ্রাম। কিন্তু তাতেও যেন দর্শকদের মনটা ঠিক জয় করা যাচ্ছে না।
স্টেডিয়ামের বাইরেই অবস্থিত ছোট ক্যাফে যেখানে প্রায়শই খেলোয়াডেরা খেতে আসেন, সেই ‘অস্তেরিয়া মাম্মা মিয়া’র মালিক মার্ক মার্টিনেল্লি বলেন, ‘সচরাচর যেকোনো টুর্নামেন্টের আগে রোমের মানুষদের মাঝে উত্তেজনা দেখা যায়। কিন্তু এবার সে রকম নেই, করোনার কারণে এখনো আগের পরিবেশ ফিরে পায়নি রোম। আমি নিজেও এখনো সেই আগের আকর্ষণ পাচ্ছি না।’
অস্টেলিয়া মাম্মা মিয়া এবং এর আশেপাশের ক্যাফের মানুষরাই মূলত মাতিয়ে রাখে স্টেডিয়ামসংলগ্ন এলাকা। ম্যাচের আগে এবং পরে কফির কাপে চুমুক দিয়ে আলোচনার ঝড় তুলতে ক্যাফেই ভরসা রোমবাসীর। তবে এবার কেবল ২৫% দর্শকের অনুমতি থাকায় খানিকটা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন এসব ক্যাফের মালিকরা। তবে ১৯৬৮ সালের পর আর ইউরোপের সেরার খেতাব না জেতা ইতালি যদি দারুণ খেলতে শুরু করে সেক্ষেত্রে রোমের দর্শকদের ফুটবলে মেতে উঠতে দেরি হবে না বলেই ধারণা মার্টিনেল্লির। তার নিজের ক্যাফেতে বড় পর্দায় খেলা দেখা ব্যবস্থাও থাকবে জানান তিনি।
ইতালির গ্রুপপর্বের তিনটি ম্যাচেরই আয়োজক রোম, প্রথম ম্যাচের পাশাপাশি ১৬ জুন সুইজারল্যান্ড এবং ২০ জুন ওয়েলসের বিপক্ষে ম্যাচটিও অনুষ্ঠিত হবে রোমেই। এছাড়াও ৩জুলাইয়ের কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচটাও হবে রোমেই। স্টেডিয়ামের বাইরে দর্শকদের দেখার জন্য শহরের বিভিন্ন স্থানে বড় পর্দা স্থাপন করা হয়েছে এবং সেখানে খেলার পাশাপাশি ইতালি এবং ইউরোর ইতিহাস এক মাস যাবত প্রচার করা হবে। ইউরোপের বৃহত্তম ফ্যান অঞ্চল হিসাবে পিয়াজা দেল পপোলোর ফুটবল গ্রামটিতে সর্বাধিক ১৬৮০ জন দর্শক একত্রে খেলা দেখতে পারবেন।
‘আমি ম্যাচগুলো দেখবো এবং অবশ্যই ইতালির জয় চাইবো। কিন্তু এখনো সবাই মহামারীর আতঙ্ক থেকে বেরোতে পারেনি, মাত্র গুটিকয়েকজনই পূর্বের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পেরেছে’- জানান অ্যালেসিও নামের এক ট্যাক্সি ডাইভার।
২০১৮ সালের বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে উঠতে না পারার পর থেকে ইতালির ফুটবলে বদলে গেছে অনেককিছুই। গত দুই বছরে আজ্জুরিদের নিজের হাতে সাজিয়েছেন ম্যানুয়েল পেলেগ্রেনি। বনুচ্চি, কিয়েলিনি, জর্জিনহো, ইম্মোবিলের মতো অভিজ্ঞদের পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলেছেন ডোনারুম্মা, বারেলা, কিয়েসা, বেলোত্তির মতো তরুণেরা। সেই পারফরমেন্সে ভর করেই ১৯৬৮ সালের পর ইউরোপসেরা হবার স্বপ্ন দেখছে ইতালি।
‘আমি ম্যাচ শুরুর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। দলটি গত দুই বছর ধরেই দারুণ ফুটবল খেলছে এবং আমি আশাবাদী এবার অন্ততপক্ষে সেমিফাইনাল খেলছি আমরা। পাশাপাশি আমার কাছে করোনার ভয়ংকর অবস্থার পর এটা এক নতুন শুরু’-এভাবেই বলে মিলান থেকে খেলা দেখতে রোমে আসা তরুণ মাত্তিয়া সিমিওনাত্তি।
ফ্রান্সিসকো আপা ও তার বান্ধবী আরিয়ানা মিরিঙ্গি রোমে বেড়াতে এসেছেন পিয়েডমন্ট থেকে। আপা নিজেও পিয়েডমন্টের স্থানীয় লিগে খেলে থাকে। আপার মতে, ‘একবছর আগে ইতালিতে ইউরো নিয়ে মাতামাতি ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে, মানুষ এখনো আতঙ্কে আছে। এছাড়াও ইউরো ইতালির অর্থনীতিতে যতটা অবদান রাখতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছিলো, এখন সেটাও সম্ভব না।’ অন্যদিকে মিরিঙ্গিকে আশাবাদীই দেখায়, ‘আমি ইতালীকে সমর্থন করে যাবো এবং প্রতিটি ম্যাচ দেখবো।’