আন্তর্জাতিক ফুটবলে তবে রোনালদোর ‘পুনর্জন্ম’ হচ্ছে!

কাতার বিশ্বকাপে মরক্কোর কাছে অপ্রত্যাশিত পরাজয়। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপের শেষ মুহূর্তটা ছিল তিক্ততায় মাখা। পর্তুগিজ এ মহাতারকার অশ্রসিক্ত নয়নে স্টেডিয়াম থেকে বের হয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখেছিল পুরো বিশ্ব। পড়তি ফর্ম, কোচের সাথে তিক্ত সম্পর্ক- সব মিলিয়ে ৩৮ বছর বয়সী রোনালদোর জাতীয় দলের অধ্যায় সেদিনই শেষ ভেবেছিলেন তাদের অনেকেই।

তবে ‘বয়স’ যে শুধু একটি সংখ্যা। রোনালদোর জন্য সে তত্ত্বটা তো আরও অনুমেয়। পর্তুগিজ কোচ ফার্নান্দো সান্তোসের প্রস্থানের পর রোনালদোদের কোচ হয়ে আসলেন বেলজিয়ান কোচ রবার্তো মার্টিনেজ। ইউরোপিয়ান ফুটবল স্ট্যান্ডার্ডে যাকে মাস্টার ট্যাকটিশিয়ানই ভাবা হয়।

আর সেই কোচের অধীনেই যেন নতুন এক শুরু হলো ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। রোনালদোর বয়স বেড়েছে। মধ্যগগণ পেরিয়ে রয়েছেন ক্যারিয়ারের অন্তিম লগ্নে। প্রেসিং ফুটবলে মানিয়ে নেয়াটা তাঁর জন্য এখন কঠিনই। এমতাবস্থায়, রবার্তো মার্টিনেজ পর্তুগালের লাইনআপে ভিন্ন এক ফরমেশনে রণকৌশল সাজাচ্ছেন। যাতে রোনালদোর কাছ থেকে সেরাটা পাওয়া যায়।

মার্টিনেজের পরিকল্পনায় ৩-৪-২-১ ফরমেশনে ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে থাকছেন রোনালদোই। আর তাতে মিলছে সুফলও। প্লে-মেকিংয়ের জন্য বাড়তি চাপ নিতে হচ্ছে না রোনালদোকে। ব্রুনো ফার্নান্দেজ, বার্নান্দো সিলভাদের শক্ত ও আক্রমণাত্বক মধ্যভাগের দারুণ নিয়ন্ত্রণ আর রোনালদোর ফিনিশিং দক্ষতার মিশেলে পুরো দলটার চেহারাই বদলে যাচ্ছে।

নমুনা মিলেছে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচেই। রোনালদোর একমাত্র গোলে ইউরো বাছাই পর্বের এ ম্যাচটি জিতে নেয় পর্তুগাল। গোল ব্যবধান ১ হলেও পুরো ম্যাচেই আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছিল পর্তুগিজরা। বল দখলের লড়াইয়ে ৭২ শতাংশ বলই ছিল পর্তুগালের অধীনে।

আইসল্যান্ডের বিপক্ষে এ ম্যাচ দিয়েই আবার অনন্য কীর্তিতে নাম লিখিয়েছেন রোনালদো। ইতিহাসের প্রথম ফুটবলার হিসেবে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ২০০ টি ম্যাচে মাঠে নামার কৃতিত্ব গড়েছেন তিনি। তবে রোনালদোকে নিয়ে কোচ রবার্তো মার্টিনেজের এ কৌশলের বিপরীতে কিছু ব্যাখ্যাও রয়েছে।

এই মুহূর্তে ক্লাব ফুটবলে ইউরোপের বাইরে বিচরণ রোনালদোর। এখন ইউরোপে না খেলার এই অনভ্যস্ততা পরবর্তীতে তাঁকে ভোগাবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কা থাকছেই। তাছাড়া, রোনালদোর বয়স এখন ৩৮। এই বয়সে রোনালদোকে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করাটা বোকামিই বটে। কারণ রোনালদোর অবর্তমানে তাঁর স্থলে একজনকে তৈরি করার মোক্ষম সময় ছিল এখনই।

কিন্তু রবার্তো মার্টিনেজের আপাতত পরিকল্পনায় তেমন কিছুর সংকেত মেলেনি। অবশ্য দল হিসেবে পর্তুগালকে সফলতা পাইয়ে দেওয়াটাই কোচের কাছে মূখ্য ব্যাপার। বেলজিয়ান এ কোচ নিশ্চয় সেদিকেই চোখ রাখছেন।

তবে, রবার্তো মার্টিনেজ যেটাই করছেন বা করুন না কেন, রোনালদোর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে একটা পুনর্জন্ম হতে পারে তাঁর অধীনেই। সেটার জন্য অবশ্য আরও কিছু সময়ের অপেক্ষা।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link