‘আসল’ রোনালদো

বার্সেলোনার হয়ে মাত্র ৩৭ ম্যাচে করেছেন ৩৪ গোল। জিতেছেন কোপা ডেল রে ও সুপার কাপ। ইন্টার মিলানের হয়ে ৬৮ ম্যাচে ৪৯ গোল করেছেন। তাঁদের হয়ে উয়েফা কাপ জিতেছিলেন। রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি গায়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন। ৮৩ গোল করেছেন ১২৭ ম্যাচে।

যে কয়জন স্ট্রাইকার শুধু  গোল করার ক্ষমতা দিয়ে ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছেন, রোনালদো নাজারিও দ্য লিমা তাদের একজন।

হ্যাঁ, পর্তুগিজ কোচ হোসে মরিনহোর ‘আসল রোনালদো’। মানে ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী রোনালদো।

সর্বকালের সেরা স্ট্রাইকারের একজন তিনি। অনেকের চোখে তর্কাতীত ভাবে সর্বকালের সেরা স্ট্রাইকার এই রোনালদোই। এই অনেকের দলে আমিও। রোনালদো যে সর্বকালের সেরা স্ট্রাইকার এই ব্যাপারে আমার একটুও দ্বিমত নেই।

গোল করা ছিল  তাঁর কাছে ডালভাত। ক্যারিয়ারে ভুরি ভুরি গোল করেছেন। বার্সেলোনা থেকে শুরু করে রিয়াল মাদ্রিদ ও  ইন্টার মিলানের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন।

ইতিহাসে এমন ফুটবলার খুব কমই ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে সমান তালে সাফল্য পেয়েছেন।

বার্সেলোনার হয়ে মাত্র  ৩৭ ম্যাচে করেছেন  ৩৪ গোল। জিতেছেন কোপা ডেল রে ও সুপার কাপ। ইন্টার মিলানের হয়ে ৬৮ ম্যাচে ৪৯ গোল করেছেন। তাদের হয়ে উয়েফা কাপ জিতেছিলেন। রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি গায়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন। ৮৩ গোল করেছেন ১২৭ ম্যাচে। এই স্প্যানিশ ক্লাবটির হয়ে লা লিগা জেতার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। ইনজুরি কারণে এসি মিলানে তেমন সুবিধা করতে পারেননি। ২০ ম্যাচ খেলেছিলেন। গোল মাত্র ৯ টা।

ব্রাজিলের হয়ে ৯৮ ম্যাচে ৬২ গোল করেছেন। ব্রাজিলের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। এই লাতিন দেশটার হয়ে দুইটা বিশ্বকাপ জিতেছেন। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের সবচেয়ে কম বয়সী ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপ  জেতেন তিনি; মাত্র ১৭ বছর বয়সে। ২০০২ বিশ্বকাপে তাঁর জোড়া গোলে জার্মানিকে হারিয়ে ট্রফি জিতেছিল ব্রাজিল। ব্রাজিলের হয়ে জিতেছেন ২ টা কোপা আমেরিকা; একটা কনফেডারেন্স কাপ।

ব্যক্তিগত অর্জনও কম ছিল না তাঁর ক্যারিয়ারে।  তিনবার ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরষ্কার জিতেছেন। দুটি ব্যলন ডি’অর। মাত্র ২১ বছর বয়সে ব্যলন ডি’অর জেতার রেকর্ড আছে তাঁর। ক্লাব ও দেশের হয়ে গোলসংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছেন মাত্র ২৩ বছর বয়সেই। ৯৮’ বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন।  ২০০২ বিশ্বকাপে জেতেন সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরষ্কার গোল্ডেন বুট। শুধু তাই নয়, ৯৭’ এর কোপা আমেরিকায় জেতেন সেরা প্লেয়ারের পুরষ্কার।

১৯৯৯ সালে ছিলেন কোপা আমেরিকার সর্বোচ্চ গোলদাতা। সর্বশেষ তাঁর অর্জনে যোগ হয়েছে আরেক পালক। ফ্রান্স ফুটবল ঘোষিত, ‘ব্যলন ডি’অর’ সর্বকালের সেরা একাদশে জায়গা পেয়েছেন তিনি।

একটা জায়গায় যেন ব্যতিক্রম ‘দ্য ফেনোমেনন’ খ্যাত এই ফুটবলার।

এল ক্লাসিকোতে বার্সেলোনার ও রিয়াল মাদ্রিদের হয়েও গোল করেছেন। শুধু তাই নয়, মিলান ডার্বিতে ইন্টার মিলান ও এসি মিলানের হয়ে গোল করেছেন দুই দলের হয়ে  খেলার সুবাদেই।

ইতিহাসে যে কয়জন ফুটবলার ‘স্ট্যান্ডিং ওভিয়েশন’ পেয়েছিল রোনালদো তাদের একজন। এই স্ট্রাইকার ২০০৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনাল ফিরতি লেগ খেলতে গিয়েছিলেন ওল্ড ট্রাফোর্ডে। দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে জায়গা করে নিয়েছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-সমর্থকদের মনে।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ‘অন্যতম সেরা’ খ্যাত এই ম্যাচ ৪-৩ গোলে জিতেছিল ইউনাইটেড। কিন্তু রোনালদোর শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিয়ে ওল্ড ট্রাফোর্ডের আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন (স্ট্যান্ডিং ওভেশন) স্বাগতিক সমর্থকরা। ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকারটি মাঠ ছাড়ার সময় পুরো গ্যালারি ‘রোনালদো’, ‘রোনালদো’ ধ্বনিতে মুখর, দাঁড়িয়ে করতালিও দিয়েছিলেন রেড ডেভিল সমর্থকরা।

দশ বছর আগে আজকের দিনে ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছিলেন রোনালদো। মাঠে বল নিয়ে রোনালদোর কারিকুরি এখনও অনেকেরই গল্পের খোরাক।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...