রুটের অ্যাশেজের প্রস্তুতি আইপিএলেই

আইপিএলে অলস এক সময় কাটাচ্ছেন জো রুট। রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে চলতি আসরে প্রথম ১০ ম্যাচ বেঞ্চে বসেই কাটাতে হয়েছে ইংলিশ এ ব্যাটারকে। অবশ্য শেষ তিন ম্যাচে একাদশে সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাটিং করার পর্যাপ্ত সুযোগটাই তিনি পাননি। তার উপরে রাজস্থানের প্লে-অফের ভাগ্যও ঝুলে আছে অনেক ‘যদি’, ‘কিন্তু’র উপরে। সব মিলিয়ে জো রুটের এবারের আইপিএল মিশন অনেকটা নিষ্ফলাই বলা চলে।

লাল বলের ক্রিকেটে এই মুহূর্তে ইংল্যান্ডের সেরা ব্যাটার জো রুট। মাস খানেক পরেই ঐতিহাসিক অ্যাশেজ সিরিজ। এমন গুরুত্বপূর্ণ সিরিজের প্রস্তুতির জন্য রুট চাইলেই কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে খেলতে পারতেন। আর তাই আইপিএলে এমন অলস সময় না কাটিয়ে অ্যাশেজের আগে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলাটাই কার্যকরী হতো কিনা? এমন প্রশ্ন অনুমিতভাবেই উঠেছে।

কিন্তু আইপিএলে সিংহভাগ সময়ে সাইডবেঞ্চে কাটিয়েও রুট আসলে তেমনটা ভাবছেন না। তাঁর মতে, কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ নয়, আইপিএলে সময় কাটানোটাই এই সময়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ নিয়ে ক্রিকেট গণমাধ্যম ইএসপিএনক্রিকইনফোকে জানিয়েছেন নিজের ভাবনাও।

আইপিএল কেন গুরুত্বপূর্ণ সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেন,  ‘ইয়র্কশায়ারকে আমার নিজের ক্লাব মনে করি। এই ক্লাবের হয়ে খেলতে আমি সবসময় ভালোবাসি। কাউন্টি ক্রিকেটও পছন্দ করি। এটাই আমাদের খেলার ভিত্তি। ইংল্যান্ডে ক্রিকেটার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কাউন্টি ক্রিকেটেরই বেশি অবদান। তবে এখন যে অবস্থায় আছি,  এই ৩২ বছর বয়সে প্রথমবারের মতো এমন অভিজ্ঞতা পাওয়ার পর মনে হয়েছে দীর্ঘ মেয়াদে কাউন্টি খেলার চেয়ে এতেই আমি বেশি লাভবান হব। অনেক নতুন কিছু শেখা যায় এখানে।’

ইংলিশ এ ক্রিকেটার এরপর আরেকটি কারণ দেখিয়ে বলেন, ‘কাউন্টি ক্রিকেটের এবারের ফিক্সারটা শুধু দেখুন।একটা ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে গেছে, আরেকটা ম্যাচ বৃষ্টিবিঘ্নিত হয়ে ড্র হয়েছে। এটা কি সত্যিই অ্যাশেজের জন্য প্রস্তুতিতে সহায়ক হতো? কিন্তু বিশ্বকাপের ছয় মাস আগে ভারতে এমন অভিজ্ঞতা অর্জন, এখানকার কন্ডিশনের সাথে খাপ খাওয়ানো, দীর্ঘ সময় ধরে অনেক ক্রিকেটারের সাথে আলাপচারিতা আমাকে আরেকটু সমৃদ্ধ করবে না? বিশ্বকাপের আগে এটাই তো আমার কাছে সবচেয়ে ভাল প্রস্তুতি মনে হয়েছে।’

এ নিয়ে আরো যুক্ত করে রুট বলেন, ‘আইপিএলে কুমার সাঙ্গাকারার সঙ্গে লম্বা সময় আলোচনা করতে পারছি। ব্রায়ান লারার সঙ্গেও কথা হয়েছে। তাই আমার মনে হয়, সময়টা বিফলে যাচ্ছে না। দারুণ কিছু শিখছি। আর সামনে অ্যাশেজে আমি প্রস্তুত হয়েই ফিরব। দারুণ রোমাঞ্চিত আমি। আশা করছি এবারের অ্যাশেজে দুর্দান্ত কিছু করব আমরা। আইপিএলের এ সময়কালে বাড়তি অনেক কিছুই পেয়েছি আমি। আর এ অভিজ্ঞতা যদি ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারি, তাহলে সেটা আমার ক্যারিয়ারের জন্যই ফলপ্রসু হবে। অন্তত আগের চেয়ে আমার জ্ঞান বেশি থাকবে, এটা বলতেই পারি।’

আইপিএলের মঞ্চে এবারই প্রথম পা রেখেছেন জো রুট।  ১ কোটি রুপিতে ইংলিশ এ ব্যাটারকে দল্ভূক্ত করে রাজস্থান। লাল বলের ক্রিকেটে অন্যতম সেরা এ ব্যাটার অবশ্য ক্রিকইনফোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এটাও জানিয়েছেন, আইপিএলে না গেলেও হয়তো খুব বেশি ম্যাচ এ সময়ের মধ্যে খেলতেন না তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ এখন ক্রিকেটের ব্যস্ত সূচি। সব সময়ই ম্যাচ থাকে। তাই আমি আইপিএলে না আসলে হয়তো ঐ দুই মাস ছুটি হিসেবেই কাজে লাগাতাম।’

তবে প্রস্তুতির চেয়ে পারফরম্যান্স মূখ্য ব্যাপার, এটাও জানিয়েছেন ইংলিশ এ ব্যাটার। তিনি বলেন,’ আপনি চাইলেই প্রশ্ন তুলতে পারেন, সমালোচনা করে বলতে পারেন, এই সময়টা অন্যভাবে কাটানো যেত। এটা আপনার নিজস্ব মত। কিন্তু দিনশেষে এগুলোতে কিছু যায় আসে না। বড় ম্যাচগুলোতে আপনি কেমন করছেন, সেটিই কিন্তু মূল ব্যাপার। কারণ আপনাকে বিচার করা হবে আপনার পারফরম্যান্স দিয়েই।’

ইংল্যান্ডের হয়ে ৩০ টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা রুট ২০১৯ এর পর থেকেই এই সংস্করণের দলের বাইরে। অদূর ভবিষ্যতে তাঁকে ইংল্যান্ডের হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলতে দেখা যাবে, সেই সম্ভাবনাও খুব ক্ষীণ। তবে ইংলিশ এ ব্যাটার খেলতে চান সব ফরম্যাটেই। তিনি বলেন, ‘আমি অবশ্যই খেলতে চাই। আমি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট পছন্দ করি। আর এটাই ভবিষ্যতে অনেক সুযোগের সৃষ্টি করবে ক্রিকেটে। কারণ এই ফরম্যাট আপনাকে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।’

রাজস্থানের হয়ে খেলার সুবাদে রুট কাছ থেকেই দেখছেন যশস্বী জয়সওয়াল, ধ্রুভ জুরেলের মতো তরুণ পারফর্মারদের। রুট নাকি তাদের কাছ থেকেও অনেক কিছু শিখেছেন! এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ওদের খেলার মধ্য আত্মবিশ্বাসটা আমাকে খুব অনুপ্রাণিত করেছে। ওরা যেভাবে গেম নিয়ন্ত্রণ করে, এক কথায় দুর্দান্ত।’

আসন্ন অ্যাশেজ নিয়েও কথা বলেছেন রুট। ইংল্যান্ডের অধিনায়কত্ব থাকাকালীন কখনোই অ্যাশেজ সিরিজ জিততে পারেননি। তবে সাবেক এ অধিনায়ক এবার আশাবাদী। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া দারুণ দল। ওরা শক্ত প্রতিপক্ষ। তবে ম্যাককালাম, স্টোকসের কল্যাণে ইংল্যান্ড দলও এবার সমৃদ্ধ। দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সিরিজ হবে, আশা করছি।’

এবারের আইপিএলেই রুটের সতীর্থ হ্যারি ব্রুক সেঞ্চুরি পেয়েছেন। ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে সম্ভাবনায়ময় ক্রিকেটার ভাবা হচ্ছে এ ব্যাটারকে। একই মত রুটেরও। তিনি বলেন, ‘ইয়র্কশায়ার থেকে দেখছি ওকে। ও এবার যে অভিজ্ঞতা পেল, তা আমাদের জন্য ভাল হলো বলেই মনে হচ্ছে। এমনিতে তাঁর গেমসেন্স প্রখর। ওর এখন যা বয়স, তাতে এখনই সে পরিণত ভূমিকায় ব্যাট করে। নিঃসন্দেহে ইংল্যান্ডের জন্য দারুণ এক সম্পদ হতে যাচ্ছে ব্রুক।’

ভারতের বসন্ত থেকে গ্রীষ্মকালীন অ্যাশেজ। আবহাওয়া রদবদল। প্রশ্নটা তাই অনুমেয়ই, আইপিএল অভিজ্ঞতার রসদ নিয়ে অ্যাশেজে জ্বলে উঠতে পারবেন তো রুট? অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টে ৩৮.৭৭ গড়টা অবশ্য রুটের আসল রূপটা ফুটিয়ে তোলে না। এবার বোধহয়, সেই চিত্রেরই রদবদল ঘটানোর দিকে চোখ থাকবে ইংলিশ এ ব্যাটারের। কারণ তিনি জ্বলে উঠলেই তো, অ্যাশেজে বারুদ হয়ে আবির্ভূত হবে ইংল্যান্ড ক্রিকেট।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link