এইডেন মার্করাম যেন ভরা যৌবনা নদী হয়ে উঠেছেন; বর্ষায় নদীতে যেমন নিরবচ্ছিন্নভাবে স্রোত বয়ে যায়, তেমনি মার্করামের ব্যাটে রান আসছে কোন বিরতি ছাড়াই। পুরো বিশ্বকাপ জুড়েই নয়ন জুড়ানো ব্যাটিং করে যাচ্ছেন তিনি; ঠিক উত্তাল কোন নদীর মতই, যে নদী জলের টানে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে বিশ্ব সেরা বোলারদের।
এই যেমন পাকিস্তানের বিপক্ষে তাঁর ম্যাচ উইনিং ৯৩ বলে ৯১ রানের ইনিংস; বিনা তর্কেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স-ই বলা যায়। পাকিস্তানি বোলাররা একপ্রান্তে নিয়মিত উইকেট তুললেও আরেকপ্রান্ত ঠিকই আগলে রেখেছিলেন এই ডানহাতি। শেষপর্যন্ত অবশ্য সেঞ্চুরি মিস আর দলকে জিতিয়ে আসতে না পারার যৌথ আক্ষেপ নিয়েই মাঠ ছেড়েছিলেন তিনি।
এই টুর্নামেন্টে আগে ব্যাটিং করলে দক্ষিণ আফ্রিকা তান্ডবলীলার জন্ম দেয়, কিন্তু তাঁরাই আবার রান তাড়া করতে নামলে ভেঙে পড়ে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও। তাই তো পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৭১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই মানসিকভাবে পিছিয়ে দিল প্রোটিয়ারা। ইনফর্ম ডি কক, টেম্বা বাভুমারা পাওয়ার প্লের মধ্যে ফিরে যাওয়ায় পরাজয়ের শঙ্কাও জেগে উঠেছিল।
কিন্তু মার্করাম আবির্ভূত হয়েছিলেন কান্ডারি হিসেবে; শক্ত হাতে দলকে এগিয়ে নিয়েছেন নিরাপদ স্থানে, এরপর ছুটেছেন জয়ের লক্ষ্যে। রাসি ভ্যান ডার ডুসেনকে সঙ্গে নিয়ে যোগ করেছেন ৫৪ রান, পঞ্চম উইকেটে মিলারের সঙ্গেও গড়েছেন পঞ্চাশোর্ধ জুটি। তাতেই জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল প্রোটিয়াদের।
ততক্ষণে নিজের ফিফটিও তুলে নিয়েছিলেন এই ডানহাতি ব্যাটার। ১০০ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে খেলা এই ইনিংসই শেষপর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে দুই দলের মাঝে। যদিও জয় থেকে ২১ রান দূরে থাকতে লফটেড শট খেলতে যান তিনি, আর তাতেই ধরা পড়েন ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে; ম্যাচের এমন অবস্থায় ওরকম ভাবে আউট হওয়ার জন্য নিশ্চয় নিজের ওপর ক্ষুব্ধই হয়েছেন।
যদিও লোয়ার অর্ডারের দৃঢ়তায় পরাজয়ের স্বাদ পেতে হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকাকে। তা নাহলে ট্র্যাজিক হিরো হয়েই থাকতে হতো এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানকে।
এখন পর্যন্ত ছয় ম্যাচ খেলা প্রোটিয়া তারকা কেবল দুই ম্যাচে পঞ্চাশ পার করতে পারেননি। একটি নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে, সেদিন দলের সবাই ব্যর্থ হয়েছিল; আরেকবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, সেদিন যদিও ৪২ রান করেছিলেন তিনি। বাকি চার ম্যাচেই পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরিও পেয়েছিলেন – সবমিলিয়ে আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের একজন তিনি।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে তেমন কেউই ট্রফির দাবিদার ভাবেনি দক্ষিণ আফ্রিকাকে। কিন্তু টুর্নামেন্টের মাঝপথে দাঁড়িয়ে সবচেয়ে ফেভারিট দল তাঁদেরকেই মানা হচ্ছে। এই পরিবর্তনের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে মার্করামের ধারাবাহিকতা, মিডল অর্ডারে তাঁর এমন ফর্ম বদলে দিয়েছে অনেক কিছুই।
আর এই ধারাবাহিকতা বাকি সময় ধরে রাখতে পারলে ইতিহাস গড়া কঠিন হবে না প্রোটিয়াদের জন্য। অবশ্য এই ম্যাচের মত ভাগ্যের সাহায্য লাগবে ঠিকই, কেননা অনেকবারই তো ভাগ্যের কাছে হেরে গিয়ে ‘চোকার’ হতে হয়েছিল তাঁদের।