দ্য স্টাইলিশ রানমেশিন

তারপর অনুশীলনের সময় বাড়ানো, ২০১৩-১৪ মৌসুমে ১০৩৩ রান করে রঞ্জি ট্রফির সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হওয়া, পরের মৌসুমে দুলীপ ফাইনালে মধ্যাঞ্চলের বিরুদ্ধে দু ইনিংসেই সেঞ্চুরি পাওয়া জায়গা করে দেয় জাতীয় দলের হয়ে অস্ট্রেলিয়া সফরে। তখন তার বয়েস ২২ পেরিয়েছে। তারপর থেকে সাফল্যের রাজপথ দিয়েই হাঁটা, এখনো অবধি।এই পথ দীর্ঘ হোক, মসৃণ হোক। তার স্টাইলিস্ট খেলা দেখায় চোখ শান্তি পায় এখন, মনে পড়ে আরো দুই স্টাইলিস্ট ব্যাঙ্গালুরুবাসী ব্যাটারকে।

চার মার্চ ২০১৭ থেকে ১২ আগস্ট ২০১৭’র মধ্যে টানা সাতটি টেস্ট ইনিংসে অর্ধশতাধিক রান (সাতটিই ৫০+) ছিল এই ক্রিকেটারের নামের পাশে। যে পাঁচ কিংবদন্তি ব্যাটারের সঙ্গে এই রেকর্ডটি এখনও তাঁর দখলে তারা হলেন – ওয়েস্ট ইন্ডিজের এভারটন উইকস (পাঁচটি ১০০+, দুটি ৫০+), জিম্বাবুয়ের অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার (একটি ২০০+, একটি ১০০+, পাঁচটি ৫০+), ওয়েস্ট ইন্ডিজের শিবনারায়ণ চন্দরপল (তিনটি ১০০+, চারটি ৫০+), শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারা ( একটি ৩০০+, দুটি ১০০+, চারটি ৫০+) ও অস্ট্রেলিয়ার সিজে এল রজার্স (সাতটি ৫০+)।

আরো ৫ জনের সঙ্গে এই ক্রিকেটারের দখলে দ্বিতীয় স্থান, একটি টেস্টে নেওয়া ক্যাচের নিরিখে (সাতটি, যা তিনি নিয়েছিলেন নটিংহ্যামে ১৮ আগস্ট ২০১৮ তারিখে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।) প্রথম স্থানে আছেন আজিঙ্কা রাহানে, গলে ১২ আগস্ট ২০১৫ তারিখে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে আটটি ক্যাচ নিয়ে। ওয়ানডেতে আবির্ভাব ম্যাচেই শতরান (অপরাজিত ১০০) ছিল তার ১১ জুন ২০১৬ তারিখে হারারে-তে, জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে। নাম সম্ভবত আর না বললেও চলে, তিনি লোকেশ রাহুল কিংবা কে এল রাহুল।

টি-টোয়েন্টিতে ২৯ ম্যাচে ১০০০ রান করে দ্রুত এই কৃতিত্ব পাওয়ায় তিনি যুগ্মভাবে চতুর্থ স্থানে। ইনিংসের চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে তাঁর ২৭ আগস্ট ২০১৬’র ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে অপরাজিত ১১০, রানসংখ্যার নিরিখে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে এককভাবে টানা আটটি ইনিংসে অর্ধশতাধিক রানের রেকর্ড অবশ্য পাকিস্তানের জাভেদ মিঁয়াদাদের দখলে। আরো ১০ জনের সঙ্গে ছবির এই ক্রিকেটারের দখলে দ্বিতীয় স্থান, টানা আটটি ইনিংসে অর্ধশতাধিক রান করে, যাদের মধ্যে আছেন রাহুল দ্রাবিড়ও। ৭ বছর ১ মাসে ৪৩ টি টেস্ট খেলে ৭৪ ইনিংসে ৩৫.৩৭ গড়ে সাতটি শতরান আর ১৩ টি অর্ধশতরান আছে তার ২৫৪৭ রানে (সর্বোচ্চ ১৯৯), ক্যাচ নিয়েছেন ৫০টি।

৫ বছর ৮ মাসে ৪২ টি ওয়ানডেতে ৪১ ইনিংসে ৪৬.৬৮ গড়ে (স্ট্রাইক রেট ৮৮.৬১) পাঁচটি শতরান আর ১০ টি অর্ধশতরান আছে তার ১৬৩৪ রানে (সর্বোচ্চ ১১২), সংগ্রহে আছে ২৩টি ওডিআই ক্যাচ আর দুটি ওয়ানডে স্ট্যাম্পিংও। ও হ্যাঁ, উইকেটকিপিংও করেন তিনি ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টিতে।

আর ৫ বছর ৫ মাসে ৫৬ টি টি ২০ ম্যাচে ৫২ ইনিংসে ৪০.৬৮ গড়ে (স্ট্রাইক রেট ১৪২.২৯) ২টি শতরান আর ১০টি অর্ধশতরান ছিল তার ১৮৩১ রানে (সর্বোচ্চ অপরাজিত ১১০), সংগ্রহে আছে ২৩টি টি-টোয়েন্টি ক্যাচ আর দুটি টি-টোয়েন্টি স্ট্যাম্পিংও।

এর বাইরে ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও ৮৬ ম্যাচে ৬৪৪৪ রানের মালিক তিনি, ১৭ শতরান আর ৩১ অর্ধশতরানসহ।আইপিএল গ্রহেও অন্যতম সফল ছবির এই ক্রিকেটারের ১০০ ম্যাচে ২৫৬৩ বল খেলে ৩৫০৮ রান, স্ট্রাইক রেট ১৩৬.৮৭, শতরান ৩, অর্ধশতরান ২৮, ক্যাচ ৪৮, স্ট্যাম্পিং ৫, চারবার এক মৌসুমে ৫০০+ রান। দিনদুয়েক আগে নিজের ১০০তম আইপিএল ম্যাচে লখনউ সুপারজায়ান্টের হয়ে শতরান।

এই রেকর্ডগুলি ছাড়া আজকের কানানুর লোকেশ রাহুলকে ভাবার চেষ্টা কষ্টকর। ম্যাঙ্গালোরের অধ্যাপক বাবা-মার ছেলের ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে অধ্যাপনার কথা ভাবার চেষ্টাও তেমনই কষ্টকর। ১৯৯২র আজকের দিনে ম্যাঙ্গালোরে জন্মানো কে এল রাহুল ব্যাঙ্গালুরুতে চলে যান ১৭ বছর বয়সে, ২০০৯ সালে। আর সেখান থেকেই ক্রিকেটবন্ধু পরিবেশ পেয়ে স্বপ্নের উথ্থান, ক্রিকেটার হিসেবে। অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে ব্যর্থতা সত্ত্বেও লেগে থাকা ফল দেয়। ২০১৩তে প্রথম আইপিএলে সুযোগ, এসআরএইচ-এর হয়ে, এবং আবার শোচনীয় ব্যর্থতা (৫ ম্যাচে ২০ রান)।

তারপর অনুশীলনের সময় বাড়ানো, ২০১৩-১৪ মৌসুমে ১০৩৩ রান করে রঞ্জি ট্রফির সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হওয়া, পরের মৌসুমে দুলীপ ফাইনালে মধ্যাঞ্চলের বিরুদ্ধে দু ইনিংসেই সেঞ্চুরি পাওয়া জায়গা করে দেয় জাতীয় দলের হয়ে অস্ট্রেলিয়া সফরে। তখন তার বয়েস ২২ পেরিয়েছে। তারপর থেকে সাফল্যের রাজপথ দিয়েই হাঁটা, এখনো অবধি।এই পথ দীর্ঘ হোক, মসৃণ হোক। তার স্টাইলিস্ট খেলা দেখায় চোখ শান্তি পায় এখন, মনে পড়ে আরো দুই স্টাইলিস্ট ব্যাঙ্গালুরুবাসী ব্যাটারকে।

তার ‘রাহুল’ নামকরণ নিয়ে তার মায়ের বক্তব্য ছিল এসআরকে-র (মায়ের প্রিয় অভিনেতা) অভিনীত চরিত্রের নামে এই নামকরণ। পরে রাহুল জানতে পারেন যে ওই চরিত্রর জন্ম হয়েছিল তার নিজের জন্মের অনেক পরে। তখন তার বাবা বলেন যে তার প্রিয় ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কারের ছেলের নামে তাঁর নাম রাখতে গিয়ে ভুল করে রোহানের পরিবর্তে রাহুল নামকরণ হয়ে গিয়েছিল। টিমে কে এল রাহুলের ইউটিলিটি রোল ও পরিষ্কার খেলা নিয়ে অবশ্য এরকম কোন সংশয়ের জায়গা এখন নেই।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...