‘সাইলেন্ট’ রুতুর সরব হওয়ার লড়াই

দু:স্বপ্নের মতো এক আইপিএল অভিষেক কেটেছিল তাঁর, শুরুর তিন ম্যাচে করেছিলেন মোটে পাঁচ রান। তবে হাল ছাড়েননি, সময় গড়ানোর সাথে সাথে লিখেছেন ঘুরে দাঁড়ানোর এক অদম্য গল্প। এবারের আইপিএলেও ইনিংসের শুরুতে চেন্নাই সুপার কিংসকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেবার দায়িত্বটা পালন করছেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়। 

শুভমান গিল কিংবা যশস্বী জয়সওয়ালের মতো আলোচনার টেবিলে ঝড় তোলেন না গায়কোয়াড়। সংবাদমাধ্যমে কথা বলতেও তাঁর বড্ড অনীহা। ব্যক্তিগত জীবনে স্বল্পভাষী এই তারকা বাইশ গজেও একই রকম। নীরবে নিভৃতে নিজের কাজ করে যাওয়াতে তাঁর প্রশান্তি। বাইশ গজে শিল্পীর আঁচড়ে দর্শকদের মুগ্ধ দৃষ্টি দেখতেই যেন তাঁর আনন্দ।

রুতুরাজের ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় গুণ হলো তিনি উইকেটের মূল্য বোঝেন। ইনিংসের শুরুতে নেমে অহেতুক ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলার বদলে বরং মনোযোগী হন ইনিংস বড় করায়।

একবার উইকেটে সেট হয়ে যাবার পর তাঁকে আউট করা রীতিমতো দু:সাধ্য। এরপর প্রয়োজনবোধে আক্রমণাত্নক ব্যাটিং করতেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। গায়ের জোরে নয় বরং দারুণ টেকনিক আর নিখাদ ক্রিকেটীয় সব শটে রান করতেই ভালোবাসেন এই তারকা। 

আইপিএল ক্যারিয়ারের শুরুটা ২০২০ মৌসুমে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে। শুরুর সেই বাজে ইনিংসের পরও চেন্নাই ভরসা হারায়নি রুতুরাজের উপর থেকে। বরং তাঁকে সময় দিয়েছে আপন আলোয় উদ্ভাসিত হবার। রুতুরাজও সুযোগটা দুহাত ভরে লুফে নিয়েছেন, পরের তিন মৌসুমে রীতিমতো রানবন্যা বইয়ে দিয়েছেন।

বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁর উপর ভরসা করে মোটেই ভুল করেনি চেন্নাই। এখন তো এক প্রকার চেন্নাইয়ের ঘরের ছেলেই বনে গেছেন এই তরুণ। গত মৌসুমে তো নিলামের আগেই চার কোটি রুপির বিনিময়ে তাঁকে দলে ধরে রাখে চেন্নাই। 

এবারের মৌসুমেও শুরু থেকেই ছিলেন দারুণ ছন্দে। ডেভন কনওয়েকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন অপ্রতিরোধ্য এক উদ্বোধনী জুটি, প্রতি ম্যাচে দলকে এনে দিয়েছেন উড়ন্ত সূচনা। এখনো পর্যন্ত ১৫ ম্যাচে চার ফিফটি এবং ১৪৬ স্ট্রাইকরেটে সংগ্রহ করেছেন ৫৬৪ রান। 

প্রথম কোয়ালিফায়ারের আগে সবার নজর ছিল দুই দলের দুই ওপেনার রুতুরাজ এবং শুভমান গিলের দিকে। দুজনকেই ভাবা হয় ভারতের ভবিষ্যত তারকা, দুজনেই আছেন দারুণ ফর্মে। সেই লড়াইয়ে জিতে যেন একধাপ এগিয়ে গেলেন গায়কোয়াড়।

যদিও শুরুতেই একবার আউট হয়েও নো বলের সুবাদে বেঁচে যান, এরপর আর সুযোগটা কাজে লাগাতে ভোলেননি। উইকেটের চারদিকে দারুণ সব শটের পসরা সাজিয়ে ইনিংস বড় করেন।

একপ্রান্ত আগলে দলকে নিয়ে বড় সংগ্রহের দিকে, শেষপর্যন্ত ৪৪ বলে সাত চার এবং এক ছক্কায় ৬০ রান করে আউট হন এই তারকা। তাঁর এই ইনিংসে ভর করেই শুভমানের গুজরাটকে ১৫ রানে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট কেটেছে চেন্নাই।  

ভারত জাতীয় দলের টপ অর্ডারে এখন তারার মেলা। তবে রুতুরাজ ফর্মটা ধরে রাখতে পারলে তাঁকে থামানোর সাধ্য কার! 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link