মানচিনি-সাউথগেট: সাফল্য-ব্যর্থতার নেপথ্যে

ইতালি জাতীয় দলের সহকারী কোচ জিয়ানলুকা মানচিনির ঘনিষ্ট বন্ধুও। ক্লাব পর্যায়ে দুজন এক সময় একসঙ্গে একই ক্লাবে খেলেছেন। সে কারণে কোচিং ক্যারিয়ারে কাজটাও সহজ হয়েছে চমৎকার বোঝাপড়ার কারণে। এখন কাতার বিশ্বকাপের জন্য ইতালীকে তৈরি করছেন ম্যানচিনি। ইউরোর সাফল্যের কারণে ইতালি কোচের মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ইউরোপ অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেও দারুণ খেলছে চ্যাম্পিয়নরা।

বড় কোন আসরের শিরোপা জিতলে খেলোয়াড়দের পাশাপাশি কোচেরও প্রশংসা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তখন ভুলগুলো নিয়ে থেমে যায় চিরাচরিত আলোচনা-সমালোচনা। শিরোপা জয় করাকেই সবাই বড় হিসেবে দেখতে থাকেন। এই যেমন ইউরো ২০২০ এর ফাইনালে শেষ তিনটি টাইব্রেকারের শট মিস করে শিরোপা হাতছাড়া হয়ে যায় ইংল্যান্ডের।

খেলোয়াড়দের পক্ষ নিয়ে এরপর কোচ গ্যারেথ সাউথগেট বলেন, কোন কোন খেলোয়াড় টাইব্রেকার শট নেবে সেটি তিনি নির্ধারণ করেছেন। যাদের শট মিস হয়েছে তাই সিদ্বান্তগুলোর নেওয়ার কারণে দোষটা নিজের উপরই নিয়ে নেন সাউথগেট। অন্যদিকে খাদের কিনারে থাকা ইতালির ফুটবলকে টেনে তুলে ইউরোপ সেরার শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে এখন চারিদিকে বাহবা কুড়াচ্ছেন রবার্তো মানচিনি। একজনের প্রত্যাশা পূরণ আর আরেকজনের হতাশা নিয়ে কমবেশি আলোচনা চলছে চারিদিকে।

  • দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় সফল মানচিনি

নিজেদের ফুটবলের ৬০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব পেরুতে পারেনি ইতালী। সমালোচনার জবাব না দিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মস্তিস্কপ্রসূত কোচ হিসেবে পরিচিত রবার্তো ম্যানচিনিকে জাতীয় দল পূর্ণগঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়েই শুরুর পরিকল্পনায় রাখা হয় ইউরো ২০২০ কে। এই আসরের শিরোপা জিতবেন, প্রকাশ্যে এমন কথা বলেননি ম্যানচিনি। নিজে শীষ্যদের নিয়ে কি করতে চান সেটা মনের মধ্যেই রেখেছিলেন। যে স্বপ্ন দেখছিলেন সেটা যদি পূরণ কবরতে না পারেন। বিশ্বকাপে খেলতে না পারার দুই বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যেই জিতলেন ইউরো সেরার খেতাব।

গম্ভীর স্বভাবের কারণে পরিচিত মানচিনি আবেগ কিছুটা হলেও দেখিয়েছেন। কান্নার হাসিটা সবারই দেখা হয়ে গেছে। ‘অস্বাভাবিক আর অবিস্বরণীয় সাফল্য পেয়ে আবেগ আসাটা স্বাভাবিক। খেলোয়াড় আর সতীর্থদের উচ্ছাস করতে দেখে নিজেকে আর সমালাতে পারিনি’, ম্যাচ শেষে বলছিলেন মানচিনি। এবার ভবিষ্যতের দিকেই চোঁখ রাখছেন এই কোচ। সামনের বছরই বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ রয়েছে।

এর আগে ক্লাব পর্যায়ে ম্যানচেস্টার সিটির মতো ক্লাবে পাওয়া সাফল্যে ইতালির কোচের দায়িত্ব পাওয়ার সুযোগ করে দেয়। দলকে নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যান ম্যানচেনি। অবশেষে পেয়েছেন কাঙ্খিত ফল। ফাইনালে টাইব্রেকারে হেরে যাওয়ার কারণে পরাজিত ইংল্যান্ড দলের প্রতি পেশাদারী কোচ হিসেবে সমবেদনাও জানিয়েছেন। ইতালির আরও উন্নতির জায়গা আছে বলে মনে করেন তিনি।

ইতালি জাতীয় দলের সহকারী কোচ জিয়ানলুকা মানচিনির ঘনিষ্ট বন্ধুও। ক্লাব পর্যায়ে দুজন এক সময় একসঙ্গে একই ক্লাবে খেলেছেন। সে কারণে কোচিং ক্যারিয়ারে কাজটাও সহজ হয়েছে চমৎকার বোঝাপড়ার কারণে। এখন কাতার বিশ্বকাপের জন্য ইতালীকে তৈরি করছেন ম্যানচিনি। ইউরোর সাফল্যের কারণে ইতালি কোচের মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ইউরোপ অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেও দারুণ খেলছে চ্যাম্পিয়নরা।

এদিকে জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর দুই বছর আগে দেওয়া দেওয়া প্রতিশ্রুতিও পালন করেছেন। চারবারের বিশ্বকাপজয়ীরা ২০১৪ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়ার পর ২০১৮ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের যোগ্যতাই অর্জন করতে পারেনি। এরপর একজন ম্যাজিকম্যান হিসেবে যাদুর কাঠি হাতে আগমণ ঘটে ম্যানচিনির। ২০১১-১২ মৌসুমে তার হাত ধরেই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা প্রথমবারের মতো জিতেছিল ম্যানচেস্টার সিটি।

পরেরবার সিটি রানার্সআপ হওয়ায় বাদ দেওয়া হয় তাঁকে। এরপর তুরস্কের গ্যালাতাসারে, ইতালির ইন্টার মিলান এবং সর্বশেষ রাশিয়ান ক্লাব জেনিত সেন্ট পিটার্সবার্গের কোচ হিসেবে নিজেবে ঋব্ধ করেছেন। এরপর ২০১৮ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর আমূল বদলে দেবার যে প্রতিশ্রুটি দিয়েছিলেন সেটি তিনি রাখতে পেরেছিলেন। ইউরোর শিরোপ জেতাই তার পক্ষে কথা বলার জণ্য যথেষ্ট।

  • খেলোয়াড়ী জীবনের যন্ত্রনা কোচিংয়েও সাউথগেটের

ইতালীকে যেভাবে আমূল বদলে দিয়েছেন রবার্তো ম্যানচিনি ঠিক সেভাবেই ইংল্যান্ডের মধ্যেও একটা পরিবর্তন এনেছেন গ্যারেথ সাউথগেট। যার প্রমাণ ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের আসরে ৫৫ বছর পর প্রথমবারের মতো ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা। নিজেদের পরিচিত মাঠ লন্ডনের ওয়েম্বলিতে খেলা বিধায় শিরোপা জয়ের ব্যপারে অনেকেই প্রত্যাশা করেছিলেন।

কিন্তু, সবসময় মানুষের চাওয়ার সাথে পাওয়ার মিল থাকেনা। থাকেনি এবার ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রেও। ম্যাচের ২ মিনিটে ইতালির বিপক্ষে গোল করে এগিয়ে গিয়ে সেটিকে ধরে রাখতে পারেনি। পরে অতিরিক্ত সময়েও কোন গোল না হওয়ায় খেলা গড়িয়েছে টাইব্রেকারে। সেখানে ভাগ্যের খেলায় হেরে এখন সমালোচনার তীরে বিদ্ধ সাউথগেট। খেলোয়াড়দের নেওয়া টাইব্রেকারের শটগুলো মিসে দায়টা পুরোপুরি নিজের কাধেঁ নিয়েছেন।

শিরোপা জিততে না পারার এই দু:সময়ে খেলোয়াড়দের পাশে দাড়িয়েছেন। ১৯৬৬ সালে প্রথম ও একবারের জন্য বিশ্বকাপের শিরোপা জিততে পেরেছিলেন।এরপরের সময়গুলো কেটে হতাশা আর ব্যর্থতায়। সেখানে প্রলেপ দেওয়ার আর সুযোগ পেলেন না কোচ সাউথগেট।

৫০ বছর বয়সী এই কোচ খেলোয়াড় হিসেবে ১৯৯৬ ইউরোতে ইংল্যান্ডের জার্সিতে খেলেছিলেন। সেবার তার পেনাল্টি মিসে জার্মানির কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল ইংলিশদের। সাউথগেটের সামনে এবার সুযোগ এসেছিল কোচ হিসেবে সেই দায়মোচনের। ফাইনালে ওঠে তার কিছুটা পূরণ করতে পারলেও পুরোপুরি যে পারেননি। ইংলিশ সমর্থকদের হতাশ করােয় সমালোচনা থেকেও নিজেকে বাদ রাখতে পারছেন না।

ইংল্যান্ডের হয়ে ফাইনালে তিনটি টাইব্রেকার মিস করেছেন মার্কাস রাশফোর্ড, জ্যাডন সানচো, বুকাওয়ে সাকা। সাউদগেট জানিয়েছেন, কারা টাইব্রেকারের শটগুলো নেবেন এই সিদ্ধান্ত তিনি নিজেই নিয়েছেন। সে কারণে দায় নিতেও তাঁর কুণ্ঠাবোধ ছিলনা। খেলায়াড়দের পাশে দাড়ালেও সমালোচনা থেকে নিজেকে বাচাঁতে পারছেন না। খেলোয়াড় থেকে কোচ হয়েও দায় মোচন করতে না পারার হতাশাটা তাকে কুড়ে কুড়ে খাবে নিশ্চয়ই।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...