শচীন যুগের সমাপ্তিরেখা

এখনো অবধি শচীন টেন্ডুলকারের লাস্ট সিরিজটা মনে আছে একদম ছবির মত। ১৯৯ তম টেস্টে ইডেনে সেই ভুল সিদ্ধান্ত নাইজেল লং এর, শচীন ১০ রানে আউট, ব্রিটিশ মিডিয়ার কেউ বলেছিলেন যে নাইজেল লঙের এবার ভারত থেকে বেরোনো অসুবিধে হয়ে যাবে।

এখনো অবধি শচীন টেন্ডুলকারের লাস্ট সিরিজটা মনে আছে একদম ছবির মত। ১৯৯ তম টেস্টে ইডেনে সেই ভুল সিদ্ধান্ত নাইজেল লং এর, শচীন ১০ রানে আউট, ব্রিটিশ মিডিয়ার কেউ বলেছিলেন যে নাইজেল লঙের এবার ভারত থেকে বেরোনো অসুবিধে হয়ে যাবে।

বল হাতে উইকেট পাওয়া মাত্র গোটা অফিস ক্যান্টিনে গর্জন। গুটিকয় পুরনো বন্ধু যারা ক্রিকেটটা ফ্যাশনের জন্যে ফলো করতো, তাদের শেষ কয়েক বছরের শচীনকে নিয়ে খিল্লি দেখে দেখে বিরক্ত হয়ে ফেসবুকে ব্লক করে দিয়েছিলাম।

মুম্বাইতে শচীন বেলাশেষে নামতেই গোটা টিম ম্যানেজারসহ অফিস ক্যান্টিনে। আমার তৎকালীন ম্যানেজার অসম্ভব শচীন ভক্ত ছিলেন। একদিন ইডেনে গেছিলেন ১৯৯ তম টেস্টে আর আমাকে শেষ সিরিজের সেই মেমেন্টো এনে দিয়েছিলেন যেটা টিকিটের সাথে দেওয়া হয়েছিল।

টিমে তিনজন শচীন ভক্ত ছিল। মেমেন্টো টা কে পাবে সেটা অনেকটা কে সবচেয়ে বড় শচীন ভক্ত তার নির্ণায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ম্যানেজার বিনা বাক্যব্যয়ে আমার হাতে পাতলা বইটি তুলে দিয়ে ‘রাখো শমীক, তোমার মত শচীন ফ্যান এটা সংগ্রহে রাখতে চাইবে ভেবে নিয়ে এলাম’বলার পরে বিকেলের দিকে আমাকে প্রায় আধ ঘন্টার একটা এক্সটেমপোর করতে হয়েছিল বাকি দুই ভক্তের সামনে, যে কেনো আমি শচীনকে পছন্দ করি। অবশ্য পরে দুজনেই মেনে নেয় যে মেমেন্টো টা আমি পাওয়ার যোগ্য। সে কিছু দিন ছিল!

যাই হোক, শচীন কিছু রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করলেন। পরেরদিন সকালে আমি ম্যানেজারকে ফোন করলাম – শরীর খারাপ, ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছি। ম্যানেজার হাসতে হাসতে বললেন – আজকে আমরা সবাই ফার্স্ট হাফ ওয়ার্ক ফ্রম হোম! ভাবা যায়!

একটা আইটি কোম্পানিতে শচীনের শেষ টেস্ট সেঞ্চুরি দেখার জন্যে একটা গরিষ্ঠ অংশ বলছে ওয়ার্ক ফ্রম হোম করবে! কিন্তু সেটাই হয়েছিল, যদিও সেঞ্চুরিটা আর হয়নি। শচীন দেওনারাইনের বলে স্যামির হতে স্লিপে ধরা পড়ার পরে বাকি টেস্ট ঝাপসা। চেতেশ্বর পূজারা সেঞ্চুরি, বিরাটের পঞ্চাশ, রোহিত শর্মার দাপাদাপি সব স্মৃতিতে দাগ কাটেনি।

খুব চেয়েছিলাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ একটা বড়ো রান করুক যাতে ভারতকে আবার নামতে হয়। কম রান বাকি থাকলে কি টিম ম্যানেজমেন্ট শচীনকে আরেকবার ওপেনার হিসেবে নামিয়ে দেবেননা দর্শকদের সেন্টিমেন্টের কথা ভেবে? হয়নি, ম্যাচের শেষদিন ছিল শনিবার। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুপুরের দিকে অলআউট হয়ে যাবার পরে শচীনের সেই আধ ঘণ্টাব্যাপী স্পিচ, স্পিচলেস হয়ে শুনেছিলাম। প্রচুর জল গড়িয়েছিল চোখ দিয়ে।

আমার হবি বা প্যাশন যাই হোক, সেটা জুড়ে ছিল ক্রিকেট, আর তার একটা প্রধান অধ্যায় সেদিন সমাপ্ত হয়ে গিয়েছিল।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...