সহজ, খুব সহজ, ভাবতেও হবেনা, হাতড়াতেও হবেনা,মাথা চুলকাতেও হবেনা! এক্কেবারে সহজ, যতটা সহজ ভাবছেন তার চেয়েও সহজ, হাতের কাছে থুড়ি ঠোঁটের কাছেই ঘোরাফেরা করে সবসময়! আসলে আমি ওই উদাহরণটার কথা বলছি! এখনও বুঝলেন না – ‘সেরা খেলোয়াড় মানেই ভালো অধিনায়ক নয়!’
দুবার জাতীয় টিমের অধিনায়ক হয়েও ২৫ টেস্টের মাত্র চারটিতে জয় আর ৭৩ একদিনের ম্যাচে মাত্র ২৩টিতে জয়, ক্যাপ্টেন্সির বোঝা না নিতে পেরে ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দেওয়া, দীর্ঘদিন সহ-অধিনায়ক থেকেও ক্যাপ্টেন্সির রাজনীতি ও কূটকচালি রপ্ত করতে না পারা এবং সেই সাথে ব্যর্থতার দায় নিয়ে নিজে গজগজ করলেও কারুর মুখের উপর স্পষ্টকথা বলতে না পেরে সেই মুখচোরা জেন্টলম্যান ইমেজকে ধুয়ে খাওয়া আর ২০০৭-এর চ্যাপেল পরবর্তী সাম্রাজ্যপটে ক্যাপ্টেন্সির সুযোগকে সযত্নে দূরে রাখার মধ্য দিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট কেন বিশ্বক্রিকেটেও ব্যর্থ ক্যাপ্টেন হওয়ার মাপকাঠিকে চূড়ান্তভাবে লালনপালন করেছেন! তাইতো দিনরাত্রির সহবস্থানে তিনি আজ, ‘The best player but the worst captain.’
ইডেনের সেই সেমিফাইনাল, ঘরের মাঠে হট ফেভারিট টিমের এক বন্ধুর কান্নায় ভেঙে পড়া আর এক বন্ধুর মাথা নিচু করে ন্যুব্জ হয়ে যাওয়া বীরের পরাজিত প্রস্থান! দলের মধ্যে দল,তার মধ্যে দল,আবার তারও মধ্যে দল। আজ জিত কাল হার নয়, আজই হার অর্থাৎ আজাহার বিদায়ের রূপরেখা যেন তৈরিই ছিল আর তার রূপায়ণ ছিল সময়ের অপেক্ষামাত্র! অবশেষে এল সেইদিন। নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান বিশ্বনাথ প্রেস বিবৃতি দিলেন – ‘It was felt that Azharuddin`s per- formance as captain was not up to the mark in the last couple of tours, so we opted for a change. And Sachin, who has been India`s vice captain for two seasons now, was the obvious choice to succeed Azhar.’
২০১৯ এর বহুচর্চিত আগষ্টের মতোই ১৯৯৬ সালের মাসটিও ছিল সেই আগস্ট। ১০ আগস্ট মাত্র ২৩ বছর ১০৯ দিন বয়সে ভারতের সর্বকনিষ্ঠ (ওয়ানডে, টেস্টে কিন্তু পতৌদি সাহেব) ক্যাপ্টেন হিসেবে শচীন তেন্ডুলকর ভারতীয় ক্রিকেটের ক্যাপ্টেন্সির মসনদে বসে। এখনকার মতো বাৎসরিক কেন চতুবর্ষীয় দায়িত্ব নয় শচীনকে প্রাথমিকভাবে দেওয়া হয় শ্রীলঙ্কার কলম্বোয় অনুষ্ঠিত চারদেশীয় সিঙ্গার কাপ টুর্নামেন্ট ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কানাডায় সাহারা কাপের দায়িত্ব।
এই ছোট্ট সময়ের জন্য কেন? বিশ্বনাথের যুক্তি, ‘যেহেতু সেপ্টেম্বরে নতুন নির্বাচকমণ্ডলী আসবেন তাই শচীনকে দীর্ঘসময়ের জন্য ক্যাপ্টেন্সি করা ফেয়ার হবেনা!’ সবটাই ঘটেছিল কলকাতার তাজবেঙ্গল থেকে। আসলে কলকাতা তখনও মুম্বই বা চেন্নাই হয়ে যায়নি!
ক্যাপ্টেন্সিটা শচীনের ‘অ্যামবিশন’ ছিল, ‘I have ambition.’ ক্যাপ্টেন্সি পেয়েই শচীনের প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘I will welcome the captaincy, it will be a proud moment when I lead the side out.’
ভাইস ক্যাপ্টেন কেন একজন ব্রিলিয়ান্ট ক্রিকেটার হিসেবে তার টিমমেট, নির্বাচক, কোচ বা বোর্ডের কর্মকর্তা যারাই তাকে কাছ থেকে দেখেছে তাদের কারুর মনেই কিন্তু তার ক্রিকেটীয় দক্ষতা ছাড়িয়ে ক্রিকেটীয় মস্তিষ্ক নিয়ে সন্দেহের অবকাশ ছিলনা। তাই রাজ সিং দুঙ্গারপুর থেকে বিশ্বনাথ, বেদি থেকে প্রভাকর সবার কাছেই সে ছিল অটোমেটিক চয়েস ও স্বাগত! তবে সবথেকে অখুশি হয়েছিল ওই আড়াইজন! আর সংশয় ছিল একজনের মনে। আর অবশ্যই আশাহত হয়েছিলেন অন্য একজন!
মোঙ্গিয়া আর জাদেজার তখন সমান্তরাল দল,বলা ভালো দলেরও উপরে। ওদিকে সিধু তখন আলগা মুখের মতোই লাগামছাড়া, তার বিরুদ্ধে ডিসিপ্লিনারি কমিটির শুনানি সদ্য শেষ হয়েছে। ওদিকে বন্ধু কাম্বলীর মাঠের চেয়ে মাঠের পারফরমেন্স ছিল বেশি চিত্তাকর্ষক। একদিকে ন্যায়নিষ্ঠা ও সততার বাহক আর অন্যদিকে ভাইস ক্যাপ্টেনের কথাকে পাত্তা না দিয়ে স্বৈরাচারী দল চালনা সব মিলিয়ে এই চারজনের মনে গুমোট ভাব! আর অবশ্যই বোর্ডের মধ্যে কারুর অঙ্গুলীহেলনে জাদেজার মনে যে আশা ছিল তা শুকিয়ে যাওয়া!
সিঙ্গার কাপ ওয়ার্ল্ড সিরিজ। ভারত,শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া ও জিম্বাবোয়েকে নিয়ে এই চারদেশীয় সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ক্যাপ্টেন হিসেবে নেমেই সেঞ্চুরি। শচীনের ১১০ এর পাশে মাত্র ৫৮ স্ট্রাইকরেট নিয়ে আজহারের ৫৮। না আর কারোরই ২০ পেরোয়নি! ফলে পরাক্রমশালী রাবনের বংশধরদের কাছে যা হওয়ার হল! পরের ম্যাচে জাদেজা, শচীন, কাম্বলি, আজহার আর সৌরভ সবার কন্ট্রিবিউশনে জিতলেও শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে হেরে লঙ্কা থেকে শচীনের আর রাম হয়ে ফিরে আসা হল না!
এরপর ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া টরেন্টোয় সাহারা ফ্রেন্ডশিপ কাপে পাকিস্তানের কাছে যথারীতি ২-৩ এ সিরিজ হার! প্রথম ম্যাচ শচীন ও আজহার আর দ্বিতীয় ম্যাচ আজহার ও দ্রাবিড় জুটির বদান্যতায় ওয়ানডে ম্যাচ মনে হলেও বাকী ম্যাচগুলোতে ভারত টেস্ট খেলা শুরু করে। যদিও দ্বিতীয় ম্যাচ হেরেছিল। জিতেছিল প্রথম ও তৃতীয় ম্যাচ। সবথেকে বেশি ছড়াতে থাকে ওপেনিংয়ে নামা পেলিমড্রম মোঙ্গিয়া! শেষ ম্যাচে মোঙ্গিয়াকে সরিয়ে জাদেজাকে ওপেনিংয়ে আনতে বাধ্য হয় শচীন! কিন্তু বিড়ালের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়লোনা ফলে ৮০ বলে ২০ রানের এক অত্যাশ্চর্য, মহাকাব্যিক ইনিংস খেলে জাদেজা ভারতকে ৫২ রানে হারের অর্থাৎ সিরিজ হারের পথ বাতলে দিল! অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এক ম্যাচের সিরিজ জেতে কিন্তু মোঙ্গিয়ার চওড়া (১৫২) ব্যাটের উপর ভর করে।
এরপর এল অক্টোবর-নভেম্বরের ত্রিদেশীয় সিরিজ। ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে অনুষ্ঠিত এই সিরিজ ছিল ক্যাপ্টেন শচীনের গর্বের সিরিজ! হ্যাঁ, টাইটান কাপের কথাই বলছি!এক্কেবারে লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট। আসলে ক্যাপ্টেন যদি পারফরমেন্স করেন তো ফলাফলে তো তার প্রভাব পড়বেই। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সহজেই হারিয়ে ট্রফি জিতে নেয় ভারত। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ ২-১ এ এবং একমাত্র ওয়ানডে ম্যাচও জিতে নেয় ভারত।
অবশেষে এল সেই বহুপ্রতীক্ষিত ১৯৯৭ এর ওয়েস্টইন্ডিজ সফর। বিশ্বক্রিকেটের দুই নক্ষত্রের সম্মুখ সমর।না, সিরিজটা এজন্য তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় আমার কাছে তবে এই সিরিজের কিছু যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ভারতীয় ক্রিকেটের মাইলস্টোন অবশ্যই। যতটা ভাবছেন শচীনের ক্রিকেটীয় দূরদর্শিতা ততটা ততটা ফেলনা নয় বোধহয়। পাকাপাকিভাবে সৌরভকে ওয়ানডের ওপেনিংয়ে নিয়ে আসা থেকে শুরু করে টেস্টে পাঁচ নম্বর পজিশন দেওয়া আর ওয়ানডে এবং টেস্ট উভয় ফর্ম্যাটেই দ্রাবিড়কে তিন নম্বর পজিশন দেওয়ার মধ্য দিয়ে শচীন যে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তার জন্য সৌরভ তো বটেই ভারতীয় ক্রিকেটও কৃতজ্ঞ!
বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে সৌরভের কথায় সেই কৃতজ্ঞতা ঝরেও পড়ে! পরবর্তীকালে ক্যাপ্টেন সৌরভ বা দ্রাবিড় বা মন্ট্রিমরেন্সি চ্যাপেল শচীনের ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে কাটাছেঁড়া করলেও শচীন কিন্তু কোচ ও সিনিয়রদের বিরুদ্ধে গিয়ে এক্ষেত্রে অনড় থেকেছে! এখানে শচীনের আর একটা ক্রিকেট দূরদর্শিতা ছিল যে গাঙ্গুলিকে অলরাউন্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। যখন আজহার মার খাওয়া শ্রীনাথকে ওভারের পর ওভার বল করানো নিয়ে অজুহাত দিয়ে গেছে এই বলে যে, ‘স্ট্রাইক বোলারকে তো বল দিতেই হবে, পার্টটাইমারকে কোন ভরসায় বল তুলে দেবো বলুন তো?’ তখন নিয়ম করে শুধু দাদা নয়, জাদেজা সহ নিজেও বল করে গেছে!
না, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর এবং শচীনের ক্যাপ্টেন্সির ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতেই পারতো যদি না বার্বাডোজের ওই তৃতীয় টেস্টে মাত্র ১২০ রান তাড়া করতে নেমে তাসের ঘরের মতো ৮১ রানে ভেঙে পড়তো! ৫ টেস্টের সিরিজে ভারত হারে ০-১ এ! এরপর বিচ্ছিন্নভাবে শচীন পারফর্ম করলেও আজহারের পারফরমেন্স খারাপ হতে থাকে আর আরও ডানা মেলতে থাকে দ্রাবিড় ও দাদা।
বাকিদের অবস্থা তো তথৈবচ! দলের সিনিয়রদের এই পারকী হবে তা সহজেই অনুমেয়! ওয়ানডে সিরিজও হারে ১-৩ ফলাফলে! বার্বাডোজের ওই ইনিংসে বারবার ধরে খেলার বার্তা পাঠালেও প্রায় সবাই উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে এসেছিল। হোটেল রুমে সেই কান্নার সাথে ক্যাপ্টেন্সি ছাড়ার ইচ্ছেও প্রকাশ করেছিল। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটের বটগাছ সুনীল গাভাস্কারের একটা ফোন সেই ইচ্ছেতে জল ঢেলে দেয়!
এরপর এল ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারির সেই দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ! টেস্ট সিরিজ যথারীতি হারে ০-২ ফলাফলে। দ্বিতীয় টেস্টে নিজের ১৬৯ আর আহজারের ১১৫ সত্ত্বেও ভারত হারে বাকী ব্যাটসম্যান ও বোলারদের বালখিল্যতায়! পুরো সিরিজের চিত্রটা প্রায় একইরকম! দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও ভারতকে নিয়ে সংঘটিত ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজের ফাইনালে ভারত উঠলেও যথারীতি ভারত হারে ৪৪ রানে!
সিরিজ হারের পর ডারবানে হোটেলের ঘরে রীতিমতো ভেঙে পড়েছিলেন শচীন, ‘কী করবো, পরামর্শ দিন তো। মনে হয় আমার অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়াই উচিত!’ দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ হেরে তিনি এমন মুহ্যমান আর তার আগে বার্বাডোজের চোখের জল একসাথে গিঁট লেগে তাকে এমন চিন্তাগ্রস্ত করে তুলেছে যে ব্যাটসম্যান শচীনকে গিলে ফেলছে অধিনায়ক শচীন গোটা দেশের এই ধারনার সাথে তিনিও ক্রমশ সমাপতিত হচ্ছেন!
অথচ বাস্তবটা মোটেই তা নয়। ক্যাপ্টেন হওয়ার পর তার একদিনের ক্রিকেটে গড় ৩৯ থেকে বেড়ে হয়েছিল ৪৩! আবার গোটা টেস্ট ক্যাপ্টেন্সি ক্যারিয়ারে দ্রাবিড়ের যেখানে গড়ের পরিবর্তন -১৬.৩৭, গাঙ্গুলির যেখানে – ৬.৮৭ সেখানে টেন্ডুলকরের – ৪.৪৫!
যে মানুষটা রঞ্জি কেন সামান্য স্কুল বা অন্যকোন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটেও আউট হওয়ার ধরণ নোট করে রাখতো, কাটাছেঁড়া করতো যাতে আর একবার সেই একই ভুল না হয় সেই মানুষটাই নিজের ব্যাটিং নিয়ে ভাববার কোন সময়ই পাচ্ছেনা অধিনায়কত্বের চাপে। দলের কথা ভাবতে ভাবতে। ময়নাতদন্তে তখন কাঠগড়ায় স্বাভাবিকভাবেই শচীন রমেশ তেন্ডুলকর! আপামর ক্রিকেটপ্রেমীর তদন্ত রিপোর্টও একই। তাই ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপের আগেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল ক্যাপ্টেন শচীনের শহিদবেদীর ভিত্তিস্থাপন!
নিজে রান করলেও আর কীইবা করার ছিল যখন বাকীদের কাছ থেকে বিশেষ করে বোলারদের কাছ থেকে ন্যূনতম সাহায্যটুকু পাওয়াই যায়নি! ৯৬ ও ৯৭ এর মে -এই ক্যালেন্ডার বর্ষে প্রসাদ ও কুম্বলে বল করেছিল যথাক্রমে ৭০২.৪ ও ৮৬৮.৩ ওভার! সেই পরিস্থিতিতে যথেষ্ট ক্লান্তির দাবী রাখে! তার সাথে ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপে বিপক্ষের ব্যাটসম্যান বিশেষ করে আনোয়ারের কাছে অত ঠ্যাঙানি খেয়েও ভারতীয় বোলাররা কোটা পূরণ করে সিরিজ শেষ করতে পেরেছে সেটাই বা কম কীসের!
এ প্রসঙ্গে আজহারের একটা কথা বেশ মনে ধরে, ‘যখন আমি ক্যাপ্টেন ছিলাম, এক একদিন সকালে কাগজ খুলে হাঁ হয়ে যেতাম। কোনদিন মিডিয়া লিখত আমি দুর্ধর্ষ ক্যাপ্টেন্সি করেছি, আবার কোনও দিন বলতো আমি জঘন্য। আমি নিজে নিজের ক্যাপ্টেন্সি বিচার করে দেখতাম,দুদিনের মধ্যে একটাই তফাৎ – একদিন আমার বোলাররা ভালো বল করেছে, আরেকদিন করেনি!’
না, ২০০৩ এর বিশ্বকাপ ফাইনালে ওরকম বল ফেললে সৌরভ গাঙ্গুলির কীইবা করার ছিল! ওদিকে হঠাৎই বিষেন সিং বেদীর ছায়া যার মধ্যে দেখতে পেয়েছিলেন নির্বাচকেরা সেই সুনীল যোশী যখন আনোয়ারের হাতে মার খাচ্ছিল তখন মোঙ্গিয়ার কথায়, ‘আনোয়ার যখন অমন মারছে তখন সুনীল যোশীকে বললাম, শুধু স্টাম্পে বলটা রাখো। এমনই বোলার যে স্টাম্প টু স্টাম্পও বল করতে পারেনা!’
এরপর এল সেই শ্রীলঙ্কা সফর। ওয়ানডে সিরিজের আগেই নির্বাচকেরা মোটামুটিভাবে একমত যে শচীনকে ক্যাপ্টেন্সি থেকে হঠিয়ে বসাতে হবে জাদেজাকে।আর বাদ দিতে হবে আজহারকে! কিন্তু দল রওনা হয়ে গেছে তাই অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই! মজার ব্যাপার হচ্ছে ভারত,পাকিস্তান,শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশকে নিয়ে চতুর্দেশীয় ওয়ানডে সিরিজে ভারত ফাইনালে উঠলে ২ জন বেস্ট পারফর্মার ছিল কিন্তু শচীন ও আজহারই! আবার ২ টেস্টের ড্র সিরিজে দু’জনে প্রতি টেস্টেই সেঞ্চুরি করেছিল! কিন্তু বাকিরা! এরমধ্যে আবার প্রথম টেস্টের সেই ৯৫২ এর লজ্জাও ছিল!
এরপর ডিসেম্বরে এলো ভারত,পাকিস্তান,ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিয়ে শারজায় অনুষ্ঠিত আকাই সিঙ্গার ট্রফি। মিড অর্ডারের হারাকিরিতে শচীন ওপেনিং ছেড়ে মিডল অর্ডারে আসতে বাধ্য হয়। আর সিরিজ থেকেই ওয়ানডেতে সৌরভ ও শচীনের ‘এ বলে আমায় দেখ আর ও বলে আমায় দেখ শুরু হয়!’ আগে যে বিসর্জনের সুর বেজে উঠেছিল, এই সিরিজের চূড়ান্ত ব্যর্থতা শচীনের ক্যাপ্টেন্সির কফিনে পেরেক পুঁততে হাতুড়ি এগিয়ে দেয়!
এদিকে প্রথম একাদশ কী হবে না হবে, কার ব্যাটিং অর্ডার কী হবে সে বিষয়ে নির্বাচকেরা যথেষ্ট মাথা ঘামাতেন। শচীনের ভুল এখানেই যে সে তাদের মুখের উপর কিছু বলতে পারতো না! যদিও নির্বাচকেরা যখন পইপই করে বলে দিয়েছিল যে শারজার ছোট মাঠে কাম্বলিকে ব্যবহার করতে তখন কিন্তু সেটা না করে শচীন অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল! আবার দ্রাবিড়কে তিনে পাঠানো বা পাকিস্তান ম্যাচে হঠাৎই রবিন সিংকে এগিয়ে দেওয়া নিয়েও নির্বাচকদের নেকনজরে ছিল শচীন!
আবার অন্যদিকে নিজের অধিনায়কত্বের পথ প্রশস্ত করতে বা অন্যকোন ‘সন্দেহজনক কারণে’ দলকে নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে ডুবিয়েছেন আর পাকিস্তান ম্যাচের ওই রান আউট!
ফলে নির্বাচকরা আজহার নয় জাদেজাকেই ক্যাপ্টেন করতে মোটামুটিভাবে সহমত ছিলেন! এ প্রসঙ্গে একটা কথা বলতে পারি, সৌরভ গাঙ্গুলির ভাগ্যে অধিনায়কত্বের শিকে অনেক আগেই ছিঁড়তে পারতো যদি এই শচীনের ক্যাপ্টেন্সি ছাড়ার পর পূর্বাঞ্চলীয় নির্বাচক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগ এবং সবুজ সংকেত থাকতো। আসলে সম্বরণ বাবু সৌরভকে প্রথমেই আঁচের গনগনে আগুনে ঠেলে দিতে চাননি, চেয়েছিলেন প্রথমে সহ অধিনায়ক করতে এবং পরে সেই সিদ্ধান্তই কিন্তু সৌরভকেই সমৃদ্ধ করেছিল!
- দ্বিতীয় পর্ব: কাঁটার মুকুট
মাত্র দেড় বছর আগে যাকে চরম অসম্মানের মধ্যে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, নির্বাচনী বৈঠকে যাকে কারণে-অকারণে অপমানিত করা হচ্ছিল, জাতীয় নির্বাচকরা যেখানে খুশি যখনখুশি তাচ্ছিল্য করে বেড়াচ্ছিল সেখানে ১৯৯৯ এর ২১ জুলাই ওয়াংখেড়ের বৈঠকে পাঁচজন নির্বাচকেরই একটাই পছন্দ ছিল – শচীন। কিন্তু প্রথমে এতটা মসৃণ ছিলনা।
যেহেতু জাদেজা কপিলের স্নেহধন্য তাই কপিলের দুই ঘনিষ্ঠতম বন্ধু নির্বাচক মদনলাল ও অশোক মালহোত্রা জাদেজার জন্য লড়বেন বা আজহারকেই রেখে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। ৭১-এ বিজয় মার্চেন্ট যেমন কাস্টিং ভোটে পতৌদিকে সরিয়ে ছিলেন ঠিক তেমনি প্রস্তুত ছিলেন নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান। যাই হোক শেষমেশ তার কিছুই হয়নি।
অন্যদিকে প্রথমবারের পরাধীনতা থেকে শিক্ষা নিয়ে শচীন ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছিলেন, ‘দ্বিতীয় ইনিংসে অন্য খেলা। আবার অধিনায়ক করতে চাইলে আমার শর্ত মেনে করতে হবে!’ দল নির্বাচনে তার বক্তব্যকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে এবং সম্মানের সাথে ব্যবহার করলে তবেই তিনি রাজি, নাহলে নয়! আবার আজহারের ভবিষ্যৎ ও ছেড়ে দেওয়া হ’ল শচীনের হাতেই!
শচীন যেদিন অধিনায়ক হন সেদিনই তাকে গ্যাং অব ফোর অর্থাৎ আজহার, মোঙ্গিয়া, লেলে ও গায়কোয়াড় সম্বন্ধে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল! গায়কোয়াড়কে শেষমেশ বোর্ড সরিয়েই দেয় আর অন্যদিকে মোঙ্গিয়া ও আজহার আবারও গ্রুপবাজি করলেও শচীন পাত্তা দিতনা কিন্তু লেলে লালা ঝরিয়েই যাচ্ছিল! অস্ট্রেলিয়া থেকে ফোনে সমীর দীঘেকে চাইলেও লেলে মোঙ্গিয়াকে পাঠিয়ে দেয়। যদিও কপিল ও শচীন ফিরতি বিমানেই মোঙ্গিয়াকে ফেরত পাঠিয়ে দেয়!
এদিকে প্রথম পর্বে যদিও বলার মতো কিছু ছিল দ্বিতীয় পর্বে শুধুই ব্যর্থতা। কিছুটা শচীন আর বাকীটা সৌরভ,বোলারদের কথা বলার মতো কিছুই নেই! অন্যদিকে দলের মধ্যে আজহার ও মোঙ্গিয়াকে নিয়ে বিদ্রোহ। তবে সিধুকে বেশ ভালোভাবেই সামলেছিল শচীন। ফলে আবারও শচীনের বিদায় ও সৌরভের আগমনীর নেপথ্য সংগীতের রাস্তা তৈরি হয়ে যায়!
- কেউ কথা রাখেনি
দ্বিতীয় বার অধিনায়ক করার সময় নিরুপায় হয়ে যে শর্তাবলী মেনে নিয়েছিল তা আর মেনে নেয়নি নির্বাচক সহ বোর্ডের কর্মকর্তারা! অনেকেই ভাবেন যে দলে আজহারের ঢোকা আটকাতে না পেরে নাকি শচীন ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করেছিল! কিন্তু সেটাই একমাত্র কারণ নয়! শচীনের আসল বক্তব্য হল, অধিনায়ক থাকাকালীন প্রথম দফায় তার সাথে যেমন ব্যবহার করা হয়েছিল, দ্বিতীয় দফাতেও ঠিক তাই! অথচ ধরেবেঁধে
যখন বিশ্বকাপের পর অধিনায়ক করা হয়েছিল, বোর্ড প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে এমনটা আর হবেইনা! তিনি যখন যা টিম চাইবে তাইই দেওয়া হবে,দল চালনায় স্বাধীনতাও দেওয়া হবে! না, কেউ কথা রাখেনি! ঘনিষ্ঠ মহলে একই অভিযোগ কপিলেরও!
- হাতকড়া
অধিনায়ক হিসেবে শচীনকে এক্কেবারে ঠুঁটোজগন্নাথ করে রাখা হয়েছিল। বিদেশ সফরে তিন পেসার চাইলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ২ পেসার দেওয়া হ’ত। জোনভিত্তিক কোটায় নাভিশ্বাস ছিল টিম।
টিম নির্বাচন নিয়ে শচীনের বক্তব্য ছিল এমন – ‘There were occasions when I wasn’t given the team of my choice and didn’t get particular players I asked for. For me, the priority was always the Indian team. For some of the selectors, however, things may have been different. I felt there were other factors dictating team selection and at times I felt disappointed after selection committee meetings.’
১৯৯৭ এর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে জাভাগাল শ্রীনাথ আহত হওয়ার পর শচীন যখন বরোদার তুষার অরোঠে বা হায়দ্রাবাদের কনওয়ালিজিৎ সিংকে চেয়েছিল তখন নির্বাচক কমিটি অচেনা নোয়েল ডেভিডকে পাঠিয়েছিল। তখন টেন্ডুলকর বলেছিল, ‘Who’s this Noel David?’
আজহার যতোই বলুক, ‘নাহি জিতেগা, ছোটে কী নসিব ম্যাঁয় জিত নাহি হ্যায়!’ আমি কিন্তু ভাগ্যকে বিশ্বাস করিনা। বিশ্বাস করি বাস্তবতাকে!
- শেষ ১০ ওভারে ৪৭ রান দরকার হাতে ৬ উইকেট, ভারত হেরে যায়…
- টেস্টে ১২০ রানের টার্গেট ভারত হেরে যায় ৩৮ রানে..
- অফ সাইডে ফিল্ডিং সাজিয়ে আনোয়ারকে লাগাতার লেগ সাইডে বল করে যায়…
- বোলারদের যখন বলা হয় যে তাকে না জানিয়ে স্লোয়ার বল না করতে তখনই…!
- শারজার পাকিস্তান ম্যাচে রবিন সিংয়ে ৩ নং নামালে ০ করে কিন্তু একই পরিস্থিতিতে আজহারের অধিনায়কত্বে ৮২ রান আসে!
- যোশিকে উইকেট টু উইকেট বল করতে বললে বাইরে ফেলে স্পিন করার চেষ্টা করে যায় আর শ্রীনাথকে তার ন্যাচারাল আউট স্যুইং করতে বললে উইকেট টু উইকেট স্লোয়ার দিয়ে যায়!
- বলে বলে রান করলেও যেখানে ম্যাচ ও সিরিজ জেতা যায় সেখানে প্রবল মারকুটে ব্যাটসম্যানও ৮০ বলে ২০ করে যায়!
- এর সাথে পছন্দমতো টিম না দেওয়া, গ্রুপবাজি ও বাজে ব্যবহার..
এসব একটা ক্যাপ্টেনকে হতাশ করতে বাধ্য!
- ২০০৭: আরওএকবার
২০০৭-এর ব্যর্থতা ও গ্রেগ জমানার পর যখন ক্যাপ্টেন হওয়ার জন্য শচীনের কাছে প্রস্তাব গিয়েছিল তখন শচীন সটান না বলে দেয়। এবং তারই পরামর্শ মতো ধোধিকে ক্যাপ্টেন করা হয়। নাহলে হয়তো যুবি বা অন্য কারোর ভাগ্যে শিকেটা ছিঁড়তো! কিন্তু এই প্রস্তাব না গ্রহণ করার ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ মহলে শচীনের বক্তব্য মোটেই তার অতি বিভীষিকাময় ক্যাপ্টেন্সির অভিজ্ঞতার জন্য নয়, শচীন চেয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করতে। ধোনির মধ্যে সে মশলার হদিশ সে ঠিক পেয়েছিল! তার অনুমান ও দূরদর্শিতা যে মিথ্যে নয় তা আমরা নিশ্চয়ই প্রমাণ পেয়েছি!
- স্কিল
মানতে দ্বিধা নেই যে শচীনের ক্যাপ্টন্সি স্কিল সৌরভ বা ধোনির মতো নয়। কিন্তু নেভিল কার্ডাসের মতো না বললেও বলতে পারি শচীনের ক্যাপ্টেন্সির রেকর্ডের মতো অত খারাপ স্কিলও নয় শচীনের! বাকি সব কচকচানি ছেড়েই বলি অন্য ক্যাপ্টেনরা যেখানে শচীনকে পেয়েছিল সেখানে শচীন কিন্তু শচীনের মতো কাউকে পায়নি!
- অন্য ক্যাপ্টেন্সি
ক্যাপ্টেন না থাকলেও তার ক্রিকেটীয় প্রজ্ঞার প্রতি আস্থা সব অধিনায়কেরই। অধিনায়ক আসুক বা নিজেই অধিনায়কের কাছে ছুটে গিয়ে বারবার পরামর্শ দিয়ে দলকে সমৃদ্ধ করে গেছে। ২০০৩ বিশ্বকাপের প্রথম দিকের পারফরমেন্সে হতাশ ভারতবাসী যখন কাইফের বাড়ি আক্রমণ করে, দেশে যখন বিক্ষোভ তখন বিবৃতি দিয়ে ভালো করার আশ্বাস দিয়ে শান্ত করে কিন্তু সেই শচীনই! হ্যাঁ, ব্র্যাডম্যানসুলভ পারফরমেন্স করে কথাও রেখেছিল!
২০০৭-০৮ এর বর্ডার-গাভাসকার ট্রফির সেই কুখ্যাত দ্বিতীয় টেস্ট অর্থাৎ সিডনি টেস্টের কথা মনে আছে? সেই মাঙ্কিগেট বিতর্ক! অতিবড় সমর্থক কেন হরভজন নিজেই যখন পার পাওয়ার আশা রাখেনি, পন্টিং শিবির যখন কনফিডেন্ট, শুনানিতে যখন অজিরা বিক্রমে এগিয়ে তখন ‘অশ্বত্থামা ইতি গজ’-এর মতো আধুনিক যুথিষ্ঠিরের কথায় নিউজিল্যান্ডের বিচারপতি জন হ্যানসেন বিশ্বাস করতে বাধ্য হয় ওটা মাঙ্কি নয়, ‘মা কিই’ ছিল!
শুধু হরভজনকে বাঁচানো নয় ভারতীয় ক্রিকেটের অলিগলিতে কান পাতলে শোনা যায় এরকম আগলানোর কথা। তাইতো সে হয়ে ওঠে যুবরাজের বিশেষ মানুষ!
শুধু মাঠে বা পিচে গাইড করা নয়, মনোজের মতো স্বল্পবিখ্যাত ক্রিকেটারের চিকিৎসার ব্যবস্থাও করে এই টেন্ডুলকর!
সামাজিক ক্ষেত্রেও তার ক্যাপ্টেন্সির রেকর্ডের কাছে অনেক ক্যাপ্টেনই কাত!
- আইপিএল
ভালো বা পছন্দমতো টিম পায়নি বলে অনেকেই একে নাকে কাঁন্না ভাবতেই পারেন। জানেন দাদা তার আবার ক্যাপ্টেন্সিটা ঠিক আসেনাও বলতেই পারেন! কিন্তু আইপিএল দেখেছে অন্য শচীনকে। সাহসী সিদ্ধান্ত থেকে শুরু করে তরুনদের এগিয়ে দেওয়া প্রভৃতি বিষয়ে তার ওই ক্যাপ্টেন্সির কালো অধ্যায়গুলোকে নিশ্চিতভাবেই আফসোস করিয়েছে! ২০১০-এ ফাইনালে তোলা থেকে শুরু করে ক্যাপ্টেন্সির চাপ নিয়েও প্রথম ভারতীয় হিসেবে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছিল!
ওইবছর টুর্নামেন্টের মাঝপথে আনন্দবাজারে সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলম ছিল, ‘এবার বোধয় মুম্বাইকে কাপটা দিয়েই ছাড়বে শচীন!’
আসলে প্রথমবার মাঝপথে একটুর জন্য সেমিতে তুলতে পারেনি। দ্বিতীয়বার শেষের দিক থেকে দ্বিতীয়! কিন্তু তৃতীয়বার! হ্যাঁ, মারের পর মার খাওয়া দেখেও এগিয়ে যাওয়া দেখে সেঞ্চুরির ইউসুফকে আটকাতে রাজাগোপাল সতীশকেই আবার দিয়েছিল, গেইলের বিদ্যুৎ ও আটকে দিয়েছিল ৬০ বলে মাত্র ৭৫ তে! হেইডেনের জন্য হরভজন! আবার, দলে হরভজন ও সাইমন্ডসকে এক টিমে রেখে দুর্দান্ত ম্যান ম্যানেজমেন্টের নমুনা রেখেওছিল!
তবে টিম ভালো না হলে, রাজনীতি থাকলে,পচা আলু থাকলে কী হতে পারে তা শচীনের ক্যাপ্টেন্সিতে দেখেছি আবার আইপিএলও দেখেছি অনেকের ক্যাপ্টেন্সিতে। তবে রঞ্জি, দিলীপ ট্রফি বা বোর্ড সভাপতি একাদশ বা অন্যকোন ঘরোয়া ক্রিকেটে শচীনের ক্যাপ্টেন্সি কিন্তু অসাধারণত্বের দাবী রাখে।
- শেষকথা
পূর্বে আলোচ্য বিষয় গুলোর সাথে দৃঢ়তা,স্পষ্টভাষী না হওয়া এবং কিছুটা পরিস্থিতি শচীনের কঙ্কালসার অবস্থার জন্য দায়ী। হ্যাঁ, আবারও বলছি দাদা বা ধোনীর মতো অতটা আশা না করলেও শচীনের ক্যাপ্টেন্সির দক্ষতা মোটেই ওই রেকর্ডের মতো নয়!
নিন্দুকেরা যতোই শচীনকে স্বার্থপর বলুক না কেন ক্যাপ্টেন্সির সময় তার আত্মত্যাগ ভোলার নয়। যে আউট হয়ে যাওয়া মানেই অর্ধেকের বেশি আশা ঝরে যায়। যে ক্রিজে থাকা মানে আশার প্রদীপ জ্বলে যাওয়া। যাকে যখনখুশি ওপেনিং বা ৪ নং এ নিয়ে আসা যায়, ডবল সেঞ্চুরি না করিয়ে ডিক্লেয়ার করানো যায়, ফিটনেসের অজুহাতে রোটেশন করা যায় আর যে নিজেই দলের স্বার্থে ওপেনিং ছেড়ে দিতে পারে, যে আউট হলে প্রায় জিতে যাওয়া চেন্নাই ম্যাচ বা হায়দ্রাবাদের ওয়ানডে ম্যাচ হেরে যাওয়া যায় তাকে তো selfish বলতেই হবে, তাই নয় কি?
এখান থেকেই বোঝা যায় ভারতীয় ক্রিকেট দলে ব্যাটসম্যান শচীন ঠিক কত শতাংশের! আর হ্যাঁ, অন্য ক্যাপ্টেনগুলো যেখানে এই % এর শচীনকে পেয়েছে তখন শচীন কাকে পেয়েছে? আসলে আজ্জু-রাজ, দাদা-ডালমিয়া,ধোনী-শ্রীনির মতো কোন জুটি না হওয়াটাও হয়তো এক্ষেত্রে অনেকটা প্রভাব বিস্তার করেছে! একটা কথা বলতে পারি, শচীন যেমন অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রতি সুবিচার করেনি ঠিক তেমনি আমরাও হয়তো সঠিক বিশ্লেষণ করিনি!