লেগ স্পিনার শচীন, অস্ট্রেলিয়ার এপ্রিল ফুল

১৯৯৮ সালের এক এপ্রিল। ভারতের কোচিতে অনুষ্ঠিত পেপসি ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে ভারত ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে দিনের ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিং এর সিদ্ধান্ত নেয়। পাঠকদের অবগতির জন্য জানানো থাক, যে এই ত্রিদেশীয় সিরিজের সব ম্যাচ লাল বল ও সাদা পোশাকের ওয়ানডে ছিল, অর্থাৎ, এই ম্যাচটি লাল বলের ওয়ানডে ছিল।

ওপেনার নভজ্যোৎ সিং সিধু কিংবা শচীন টেন্ডুলকার – কেউই সুবিধে করতে পারেননি। ১৯ রানের মধ্যেই দুই ওপেনারকে হারানোর পরে ভারতের নব্বইয়ের দশকের চিরকালীন নড়বড়ে মিডল অর্ডার রুখে দাঁড়ায়। আজহারের ৮২, কাম্বলির ৩৩, জাদেজার ঝকঝকে শতরান (১০৫) এবং শেষদিকে হৃষিকেশ কানিতকারের ৫৭ রানের ঝোড়ো ইনিংস ভারতকে ৩০৯ রানের বড় টার্গেট সেট করতে সাহায্য করে।

স্লো ওভার রেটের জন্য অস্ট্রেলিয়াকে ৩১০ তাড়া করতে হতো ৪৯ ওভারে। যখন শচীন ব্যর্থ হলেও ভারতের একটি বিরল জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল মনে হচ্ছে, তখনই অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের শুরুতে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট তাঁর স্বকীয় মেজাজে মাত্র ৪৫ বলে ৬১ রানের একটি দুরন্ত ইনিংস খেলে অস্ট্রেলিয়াকে জয়ের সরণিতে নিয়ে আসেন। যোগ্য সঙ্গত করেছিলেন শিল্পী মার্ক ওয়াহও (৩১ বলে ২৮)।

মূলত এই দুজনের অবদানের জন্য অস্ট্রেলিয়া ২০ ওভার শেষ হবার আগেই ১৪০ এর গণ্ডি পার করে ফেলে যেটা সে যুগে শ্রীলংকা ছাড়া অন্য দলের ক্ষেত্রে বেশ অস্বাভাবিক ছিল। রিকি পন্টিং ১২ রানের শ্লথ ইনিংস খেলে ১৪৩ রানের মাথায় আউট হলেও বহু যুদ্ধের ঘোড়া স্টিভ ও মাইকেল বিভান মিলে অস্ট্রেলিয়াকে নিশ্চিতভাবেই জয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন।

৩১ ওভারের মাথায় ২০০ রানের গণ্ডি পেরিয়ে যাবার পরে যখন আস্কিং রেট ৬ এরও কম, তখন বাধ্য হয়েই অধিনায়ক আজহারউদ্দিন ছোটবাবুকে বল করতে ডাকতে বাধ্য হন। তার আগে পর্যন্ত জাভাগাল শ্রীনাথ, অজিত আগারকার ও হৃষিকেশ কানিতকার একটি করে উইকেট পেলেও সেভাবে দাগ কাটতে পারেননি, আর অন্য ওপেনিং ফাস্টবোলার দেবাশিস মোহান্তি ৫ ওভারে ৫১ দিয়ে অধিনায়কের আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন।

শচীন তার আগে পর্যন্ত সাধারণত স্লো মিডিয়াম অথবা অফ স্পিন করতেন। তবে সদ্য সমাপ্ত টেস্ট সিরিজে লেগস্পিনার ওয়ার্নের সংহার করার পরে হয়তো তাঁর মনে হয়েছিল যে তিনিও যে লেগ স্পিনটা একটু আধটু পারেন সেটা বিশ্বকে দেখাতে। এদিন শুরু থেকেই লেগ স্পিন করতে শুরু করেন শচীন এবং কোচির উইকেটে দ্বিতীয় ইনিংসের প্রায় ৩০ ওভার হয়ে যাওয়ায় বেশ ভালো টার্ন পেতে শুরু করেন ( যদিও বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানদের তিনি অফ স্পিনই করছিলেন, অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যাটসম্যানকে বাইরের দিকে বেরিয়ে যাওয়া স্পিন করছিলেন সমস্যায় ফেলার জন্য )।

প্রথমেই বলের টার্ন বুঝতে না পেরে লিডিং এজ করে স্টিভ ওয়াহ কট এন্ড বোল্ড হয়ে ফেরেন। এরপর নিজের আরো দুই ওভার বাদেই ড্যারেন লেহম্যানকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন শচীন টেন্ডুলকার। আরো দু ওভার পরেই বিভান স্টাম্পড হন বলের লাইন মিস করে। এরপরে পরপর টম মুডিকে স্টাম্পড আর ডেমিয়েন মার্টিনকে শ্রীনাথের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট করেন বলের ফ্লাইট মিস করিয়ে।

অস্ট্রেলিয়া ৩১ ওভারে ২০৩/৩ থেকে শচীনের স্পেল শেষ হবার সময় ৪৩ ওভারে ২৫৯/৯ এ ভেঙে পড়ে। এই ৬ টি উইকেটের ৫ টি নেন শচীন, একটি অনিল কুম্বলে। শচীনের ১০ ওভারের শেষে তাঁর পরিসংখ্যান দাঁড়ায় ১০-১-৩২-৫! শেষ উইকেটটি শ্রীনাথ তুলে নিয়ে ভারতের ৪১ রানে জয় নিশ্চিত করেন।

শচীনের উইকেটটি সকাল সকাল কম রানে তুলে নিয়ে জয়ের স্বপ্নে বিভোর অস্ট্রেলিয়ানদের সামনে লেগ স্পিনের নতুন চমক নিয়ে হাজির হয়ে শচীন কি তাদেরকে সবচেয়ে বড় এপ্রিল ফুল করেছিলেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link