এই সরফরাজই ভারতের ক্রিকেট চরিত্র!

প্রথম টেস্টেই যেভাবে নিজেকে যেভাবে মেলে ধরলেন, বিশেষ করে স্পিন আক্রমণ যেভাবে সামলালেন - তাতে তাঁকে লম্বা দৌঁড়ের ঘোড়া বলাই যায়!

৪৮ বলে পৌঁছান হাফ সেঞ্চুরিতে। টেস্ট অভিষেকে এর চেয়ে দ্রুত হাফ সেঞ্চুরি করতে পেরেছে কেবল একজন – পাটিয়ালার যুবরাজ, ৪২ বলে। সেটা ১৯৩৪ সলোর কথা। সরফরাজ খানের সাথে আছেন হার্দিক পান্ডিয়াও। তিনিও ৪৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি পান টেস্ট অভিষেকে। সরফরাজ নিশ্চয়ই, টেস্ট ক্যারিয়ারে নিজের পরিণতি পাতিয়ালার যুবরাজ কিংবা পান্ডিয়ার মত চাইবেন না।

সরফরাজ খান থেমেছেন ৬২ রানে। খুবই অনাকাঙ্খিত এক ঘটনায়। নন স্ট্রাইকিং এন্ডে রান আউট। বল মিড অনে ঠেলে দিয়ে এক রান তুলে সেঞ্চুরির মাইলফলকে পৌঁছাতে চেয়েছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা। কিন্তু, তাঁর স্বপ্ন পূরণ হয়নি।

মার্ক উডের সরাসরি এক থ্রো-তে রান আউট হয়ে যান সরফরাজ খান। ৬৬ বলের এই ইনিংসটা দিয়েই অবশ্য একটা বার্তা দিয়ে রেখেছিলেন তিনি। তাঁর ব্যাট বারবার বলতে চেয়েছে, চাইলে আরও কিছুদিন আগেই অভিষেকটা করিয়ে ফেলা যেত।

অভিষেকের সুযোগ পেয়ে তার পুরোটাই লুফে নিয়েছেন সরফরাজ। ক্রিজে যখন আসেন, তখন জাদেজার রান ৮৬। এরপর আউট যখন হন তখন জাদেজার রান ছিল ১৩। এই সামান্য সময়ে ৬২ টা রান তুলে ফেলেছেন সরফরাজ। ৭৭ রানের জুটির মুখ্য চরিত্র ছিলেন সরফরাজ।

দেখে, একবারও মনে হয়নি যে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছেন এই তরুণ। এটাই আসলে ভারতের ক্রিকেটের চরিত্র, এটাই ভারতীয় ঘরোয়া ক্রিকেটের স্বার্থকতা। ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামো সরফরাজের পায়ের নিচের মাটি এতটাই শক্ত করেছে যে সামান্য স্নায়ুচাপেও ভুগেননি তিনি।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রায় চার হাজার রান, গড় প্রায় ৭০ – ঘরোয়া ক্রিকেটের ১০ বছরের অভিজ্ঞতা। সব কিছুই একটু একটু করে গড়ে তুলেছে সরফরাজকে। এত কিছু করেও, ফিটনেস ইস্যুতে বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) তাঁকে এড়িয়ে গেছে।

এবারও হয়তো বিরাট কোহলি আর লোকেশ রাহুল থাকলে সরফরাজের অভিষেকটা হয় না। তার ওপর শ্রেয়াস আইয়ারের অফ ফর্মও একটা বড় কারণ ছিল। রঞ্জি ট্রফির ‘ব্র্যাডম্যান’ হওয়ার পরও তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়েছে আরেকজনের বাদ পড়ার।

এখানেই ভারতের ক্রিকেটের চরিত্রটা পরিস্কার। নিন্দুকেরা অবশ্য বলবে, ভারতীয় ক্রিকেটের অভ্যন্তরীন রাজনীতির শিকার ছিলেন সরফরাজ। এজন্যই তো অভিষেক হতে লেগে গেল এত গুলো বছর। সেটা সত্যি হলে, এটাও ঠিক যে ক্যারিয়ারের বাকিটা সময় এই রাজনীতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কিংবা পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে হবে তাঁকে।

তবে, সেটা যাই হোক, প্রথম টেস্টেই যেভাবে নিজেকে যেভাবে মেলে ধরলেন, বিশেষ করে স্পিন আক্রমণ যেভাবে সামলালেন – তাতে তাঁকে লম্বা দৌঁড়ের ঘোড়া বলাই যায়!

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...