মরুর বুকে জুটিকাব্য
টেস্ট ক্রিকেট ধৈর্য্যর খেলা, টেস্ট ক্রিকেট সম্মানের খেলা। ক্রিকেট যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটতে পারে। ইনিংস ব্যবধানে হারের সম্মুখে থাকা জিম্বাবুয়ে দলকে টেনে তুলেন উইলিয়ামস-তিরিপানো। ফলাফল যাই হোক না কেন – এই লড়াইটা অতিমানবীয় এক স্মৃতি হয়েই টিকে থাকবে ক্রিকেটের ইতিহাসে।
প্রথম ইনিংসে ফলোয়ানে পড়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেই রশিদ খানের স্পিন ভেলকিতে মাত্র ১৪২ রানেই সািত উইকেট হারিয়ে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে জিম্বাবুয়ে। এরপরই আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের জন্য ত্রাণকর্তা হয়ে এলেন ডোনাল্ড তিরিপানো। একপ্রান্তে অধিনায়ক শন উইলিয়ামস তখনো ক্রিজে আঠার মতোন লেগে আছে, তার সাথেই জুটি বাধেন তিরিপানো।
এর আগে টেস্টে নেই কোনো সেঞ্চুরি কিংবা ফিফটি। দলের এমন অবস্থায় ইনিংস হার তখন সময়ের ব্যাপার। কিন্তু কে জানতো তিরিপানো আর উইলিয়ামস তখন মরুর বুকে আরেক গল্প লিখতে ব্যস্ত। রশিদের সামনে কতক্ষণ টিকবে সেটাই যেখানে বড় ব্যাপার সেখানে রশিদ খানের সামনে ওভারের পর ওভার আঠার মতো ক্রিজে লেগে ছিলেন উইলিয়ামস-তিরিপানো।
চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে কোনো উইকেটই আর হারায়নি জিম্বাবুইয়ানরা! বরং ফলোয়ান এড়িয়ে দিনশেষে ৮ রানের লিড নেয় জিম্বাবুয়ে। সেই সাথে ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন উইলিয়ামস।
পঞ্চম দিনের প্রথম সেশনেই এই টেস্টের সমাপ্তি ঘটছে সেটাও ধারনা করে নিয়েছিলেন ক্রিকেট ভক্তরা। মরুর বুকে রেকর্ড জুটি গড়ে আফগানদের বুকে ভয় ধরিয়ে দিতে তিরিপানো-উইলিয়ামসের কথা কেউই হয়তো চিন্তা করেননি।
পঞ্চম দিনের শুরু থেকেই রশিদ-হামজাদের বল দেখেশুনেই মোকাবেলা করতে থাকেন দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান। এরই মধ্যে মেইডেন ফিফটি তুলে নেন তিরিপানো! তাদের ব্যাটেই লিড বাড়তে থাকে ধীর গতিতে।
ওভারের পর ওভার জিম্বাবুইয়ান এই দুই ব্যাটসম্যানকে আউট করতে যখন ব্যর্থ রশিদ-হামজারা। অষ্টম উইকেটে তখন জুটির রেকর্ড গড়তে চলেছেন উইলিয়ামস-তিরিপানো। আর তাদের ব্যাটে ম্যাচ বাঁচানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করে জিম্বাবুয়ে। একে একে শতকের পর দেড়শো জুটির মাইলফলক স্পর্শ করেন এই দু’জনে।
এর আগে অষ্টম উইকেটে জিম্বাবুয়ের হয়ে সর্বোচ্চ জুটি ছিলো ১৬৮ রানের, যা করেছিলেন হিথ স্ট্রিক ও অ্যান্ডি ব্লিগনট। সেই জুটির রেকর্ড টপকে অষ্টম উইকেটে দু’জনে নতুন রেকর্ড গড়েন ১৮৭ রানের! শুধু অষ্টম উইকেটই নয় টেস্ট ক্রিকেটে যেকোনো উইকেট এই দুই জনের করা ১৮৭ রানের জুটি জিম্বাবুয়ের হয়ে সপ্তম সর্বোচ্চ রানের জুটি। সবার উপরে মারি গুডউইন ও অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের পঞ্চম উইকেটে ২৭৭ রানের জুটিটি রয়েছে।
অষ্টম উইকেটে টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ জুটিটি হলো জনাথন ট্রট ও স্টুয়ার্ট ব্রডের ৩৩২ রানের জুটি। আর উইলিয়ামস-তিরিপানোর করা ১৮৭ রানের জুটিটি অষ্টম উইকেটে টেস্ট ইতিহাসে অবস্থান করছে দশম স্থানে!
দু’জনের জুটির রেকর্ড আরো উপরে যেতে পারতো, জিম্বাবুয়ের ম্যাচ বাঁচানোর আশাও আরো বাড়তে পারতো! কিন্তু প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি থেকে মাত্র পাঁচ রান দূরে থাকতে রশিদ খানেই গুগলিতে পরাস্থ হয়ে লেগ বিফোরের শিকার হয়ে বিদায় নেন ডোনাল্ড তিরিপানো! তার বিদায়ের সাথে সাথেই ১৮৭ রানের রেকর্ড গড়া দূর্দান্ত এই জুটির অবসান ঘটে।
টেস্ট ক্রিকেট ধৈর্য্যর খেলা, টেস্ট ক্রিকেট সম্মানের খেলা। ক্রিকেট যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটতে পারে। ইনিংস ব্যবধানে হারের সম্মুখে থাকা জিম্বাবুয়ে দলকে টেনে তুলেন উইলিয়ামস-তিরিপানো। ফলাফল যাই হোক না কেন – এই লড়াইটা অতিমানবীয় এক স্মৃতি হয়েই টিকে থাকবে ক্রিকেটের ইতিহাসে।