বাংলাদেশের ডান-বাম জুজু আছে বলে নিয়মিত তাঁকে কখনো সুযোগ দেয়া হয়নি। তামিম ইকবালের সঙ্গী হিসেবে সবময়ই একজন ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে বেঁছে নেয় দল। তবে এর মাঝেও টুকটাক, কখনো সখনো কপাল খুলেছে সাদমানের। টেস্ট ক্রিকেটে যতটুকুই সুযোগ পেয়েছেন সাদমান নিজের পরিপক্কতা দেখিয়েছেন। শুরুর কঠিন সময়টায় উইকেট আঁকড়ে পড়ে থাকতে পারেন। টেস্ট ক্রিকেট বলেই হয়তো তাঁকে নিয়ে আলোচনাটা কম। সবালে আড়ালে, নীরবে বড় হচ্ছেন বাঁহাতি এই ওপেনার।
বাংলাদেশে টেস্টের স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান বলতে শুধু এক মুমিনুলই। মুমিনুলের পরে আর কাউকে সেভাবে তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ দল। তবে সাদমান খানিক আশা দেখাচ্ছেন। দল থেকে তাঁকে সেভাবে তৈরি করা হয়েছে কথাটা বললে ভুল হবে, সাদমান ইসলাম আসলে নিজেই নিজেকে একটু একটু করে তৈরি করিয়েছেন, চিনিয়েছেন।
টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে কঠিন সময়টা পাড় করতে হয় ওপেনারদের। সকালে নতুন বলে পেসারদের স্যুইং সামলে উইকেটে পড়ে থাকতে হয়। পরের ব্যাটসম্যানদের আগলে রাখতে হয়। বাংলদেশের হয়ে এই কাজটা চিরকাল এক প্রান্ত থেকে করে এসেছেন তামিম ইকবাল। যদিও তামিম উল্টো আক্রমণ করেই সেই সময়টা কাটিয়ে উঠতেন। তবে তাঁর যোগ্য সঙ্গী হিসেবে কাউকে খুঁজে পাইনি আমরা।
ওদিকে তামিমের সাথে সাদমানকে খেলাতে টিম ম্যানেজম্যান্টের তীব্র অনাগ্রহ প্রায়ই চোখে পড়েছে। শুধুমাত্র সাদমান বাঁহাতি বলে। তবে যখনই সাদমান সুযোগ পেয়েছেন নিজের কাজটা ঠিকঠাক করার চেষ্টা করেছেন। মাত্র ৮ টেস্ট ম্যাচ খেলেই প্রমাণ করেছেন টেস্ট ক্রিকেট খেলার সবরকম সামর্থ্যই তাঁর আছে।
টেস্টে ওপেন করতে নেমে রান করা যতটা জরুরি সেই সময়টায় পিচ আকরে ধরে সময়টা কাটানোও ততটাই জরুরি। এতে করে পরের ব্যাটসম্যানদের জন্য কাজটা সহজ হয়ে যায়। বাংলাদেশের হয়ে খেলা ৮ টেস্টে সাদমান ব্যাটিং করেছেন মোট ১০৭৮ বল। অর্থাৎ প্রতি ম্যাচে গড়ে ১৩৫ টি করে বল খেলেছেন এই ওপেনার। বলার চেষ্টা করছি যে টেস্টে উইকেট আঁকড়ে পড়ে থাকার অভ্যাসটা তাঁর আছে।
তবে সাদমানের একটা সমস্যা আছে। এই ওপেনার মোটামুটি প্রতি ইনিংসেই ভালো শুরু করেন। অনেকগুলো বলও খেলে ৩০-৪০ রানও আসে তাঁর ব্যাট থেকে। তবে সেই ইনিংস গুলোকে আর বড় করতে পারছিলেন না সাদমান। তবে নিজের অষ্টম টেস্টে সেই আক্ষেপও পূরণ করেছেন। হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২৫৯ বল খেলে করেছেন ১১৫ রান। এই সেঞ্চুরিটি দিয়ে সাদমান প্রমাণ করেছেন বপড় ইনিংস খেলার সক্ষমতাও তাঁর আছে।
সবমিলিয়ে ৮ টেস্টে সাদমান করেছেন ৪৭৭ রান। টেস্টে তাঁর ব্যাটিং গড় ৩৪.০৭। অপরাজিত ১১৫ রানের একটি ইনিংসের পাশাপাশি আছে ২ টি হাফ সেঞ্চুরিও। ফলে বোঝা যাচ্ছে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের জন্য বড় সম্পদ হতে পারেন সাদমান।
আগামীকাল পাকিস্তানের বিপক্ষে শুরু হওয়া টেস্টেও ওপেনিং এর দায়িত্বে থাকবেন তিনি। শুরুর সময়টায় পাকিস্তানি পেসারদের আক্রমণ সামলাতে হবে তাকেই । তিনি কাজটা ঠিকঠাক করতে পারলে বাংলাদেশের জন্যও কাজটা অনেক সহজই হয়ে যায়। তবে চিন্তার বিষয়, তামিম ফিরে এলে আবার না ডান-বামের অজুহাতে কাটা পড়েন সাদমান।