আ জিনিয়াস ইন মেকিং
তবে শেফালি যেভাবে খেলে যাচ্ছেন, শেফালিদের প্রতিও আস্তে আস্তে মানুষের আগ্রহ বাড়বে তা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়। কারণটাও তো ঐ যে - শেফালি থামতে জানেন না! বয়সটা আঠারো হয়নি। সুকান্ত লিখেছিলেন আঠারো থামতে জানেনা। শেফালি অবশ্য সতেরোতেই থামতে জানছেন না!
১৫ বছরের একজন কিশোরী যখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে ফেলেছিল, চারদিকে তখন উচ্ছ্বাসে বন্দনা। ভারতের প্রথম সারির পত্রিকার হেডলাইনগুলি ছিল এমন, ‘আ জিনিয়াস ইন মেকিং’। এমনিতেই ভারতের কেউ বিরাট কিছু করে ফেললে তাঁদের মিডিয়া তাকে মাথায় তুলে নাচে।
সেরকমটাই শেফালি ভার্মার জন্যে হয়েছে কিনা এমন ভাবনাও তাই আমার হয়েছিল। কিন্তু, শেফালির স্ট্রোক খেলার যে সহজাত ক্ষমতা, যে সাহস নিয়ে সে ক্রিজে আসে তা ছিল মুগ্ধ করার মত। আমি মনে হয়, সতর্কভাবেই একটা কথা বলতে পারি, ১৫ বছরের সেদিনের সেই কিশোরী যে কনফিডেন্স নিয়ে ছয় মারে তা আমাদের দেশের টপ ক্লাস সিনিয়র ক্রিকেটাররাও পারবেন না।
শেফালি ভার্মা অবশ্য এর মূলমন্ত্র বিভিন্ন জায়গাতে বিভিন্ন সময়েই বলেছেন। হিন্দুস্থান টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেই যেমন বলেছেন, ‘See the ball, hit with force’. তবে শেফালির এই ছক্কা পেটানোর পেছনে কিন্তু আছে আরেকটা গল্প। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে যেমনটা বলেছিলেন, শেফালির বাসাতে ছোট থেকেই ক্রিকেটের চলন ছিল। তিনি আর তাঁর মা একইসাথে ব্যাট করতেন। যে বেশি ছয় মারতে পারত তাকে বাবা পুরস্কার দিতেন। সেই পুরস্কার অবশ্য দশ পনেরো রুপির বেশি ছিল না।
সেই শেফালি আজকে এই এতটুকু বয়সে কোথায় চলে যাচ্ছেন। ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে তিনি বলেছিলেন তিনি নাকি একই জিনিস বারবার প্রাক্টিস করেন। সেই একই জিনিস প্রাক্টিসের ‘বারবার’ এর সংজ্ঞা কত জানেন? ১৫০! একই সময়ে শেফালি দেড়শোটা বাউন্সার প্রাক্টিস করেছেন এই ইংলিশ সফরের জন্যে। ৩১ মে ইএসপিএনের আনিশা ঘোষকে তিনি এমনটাই বলেছেন।
সেটা অবশ্য বিফলে যায়নি। সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৪ রান দূরে থেকে তিনি ফিরে গেছেন প্যাভিলিয়নে। জীবনের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে শেফালি যেটা করেছেন সেটাতে যদি আপনার চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় তাহলে বলে রাখি, শেফালি ভার্মা নামের ১৭ বছরের এই কিশোরী জীবনে কোনদিন কোন প্রথম শ্রেণির ম্যাচই খেলেননি!
শেফালিকে তুলনা দেওয়া হয় বীরেন্দ্র শেবাগের সাথে। শেবাগের মতই নার্ভাস নাইন্টিজকে তিনি জয় করতে চেয়েছিলেন স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছুটিয়ে। এবার হয়ত পারেননি, কিন্তু যে কিশোরী এক সময়ে দেড়শোটা বাউন্সার খেলতে পারে তাঁর কাছে কোন ডেলিভারিই যে আনপ্লেয়েবল থাকবেনা সেটা আমরা ঢের জানি।
সাথে একটা কথাও জানিয়ে রাখি। ভারতে ক্রিকেটকে বলা হয় ধর্ম। নাহ, সেটা শুধুই জাতীয় দলের ক্ষেত্রে। রঞ্জি বা নারী দলের জন্যে নয়। এই অভিযোগ অবশ্য আমি তুলছিনা। এই অভিযোগ ‘দ্য ট্রিবিউন’ এ তুলেছেন ভারতের রোহিত মহাজন।
তবে শেফালি যেভাবে খেলে যাচ্ছেন, শেফালিদের প্রতিও আস্তে আস্তে মানুষের আগ্রহ বাড়বে তা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়। কারণটাও তো ঐ যে – শেফালি থামতে জানেন না! বয়সটা আঠারো হয়নি। সুকান্ত লিখেছিলেন আঠারো থামতে জানেনা। শেফালি অবশ্য সতেরোতেই থামতে জানছেন না!