২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শুরুটা নিশ্চয়ই মনে আছে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার ম্যাচের উত্তেজনা দিয়েই শুরু হয়েছিল। সে উত্তেজনাটা আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের প্রথম ওভারেই চোখ ধাঁধানো এক ইয়োর্কারে সাজঘরের পথে হাটা ধরেছিলেন রোহিত শর্মা। ম্যাচের উত্তাপটা সেদিন আকাশ ছুঁয়েছিল।
তবে এবার একটা শঙ্কা ছিল। তাপের সঞ্চার ঘটানোর জন্যে শাহীন আফ্রিদির উপস্থিতিটা দরকার। তাঁর পূর্ণ ফিট থাকাটাও তো দরকার। আর ফর্ম সেটাও তো প্রয়োজন। একটা লম্বা সময় ধরেই মাঠের বাইরে আফ্রিদি। খেলা থেকে ছিলেন বহুদূরে। ডাক্তারদের কড়া বারণ। ফিরলেন তিনি বিশ্বকাপের ওয়ার্মআপ ম্যাচ দিয়েই। ফিরেই তিনি একটা বার্তা দিয়ে দিলেন বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া প্রতিটি দলকে। ‘ফিরছি আমি, স্বরুপেই ফিরছি।’
এই দিনের অধিকাংশ ম্যাচেই আঘাত হেনেছে বৃষ্টি। বৃষ্টির কারণে পণ্ড। পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের মধ্যকার ম্যাচেও বৃষ্টি বাঁধ সেধেছে। তবে এর আগেই পাকিস্তান ক্রিকেটের সমর্থকদের মনে আনন্দের অবারিত বারি ঝড়েছে। সেটার কারণ সেই শাহীন শাহ আফ্রিদি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিনি নিজের সামর্থ্যের ঝলক দেখালেন।
শাহীন শাহ আফ্রিদি, পাকিস্তানের বোলিং লাইনআপের অন্যতম ভরসার নাম। এই নিয়ে দ্বিমত পোষণ করবার কোন সুযোগই নেই। এই সময়ের অন্যতম সেরা পেসারদের একজন তিনি তাতেও নেই কোন তর্ক। তাঁর দিয়ে কতটা ভয়ংকর আফ্রিদি সে খবর তো সবারই জানা। সেখানেও নেই কোন নতুনত্ব। পুরনো ওয়াইন!
বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবার আগেই পাকিস্তানের সমর্থক থেকে শুরু করে নির্বাচক অথবা টিম ম্যানেজমেন্ট সবার কপালেই পড়েছিল চিন্তার ভাঁজ। সেটা অবশ্য মিডল অর্ডার ব্যাটারদের অফফর্ম। সেদিক থেকে বিষাদের কালো মেঘের আনাগোনা ছিল পাকিস্তানের ক্রিকেট আকাশে। সেই মেঘ চিড়ে পাকিস্তানের আশার আলো হলেন আফ্রিদি।
ওয়ার্মআপ ম্যাচে আফগানিস্তানের দুই উদ্বোধনী ব্যাটারদের তিনি ফিরিয়েছিলেন নিজের প্রথম দুই ওভারেই। তবে প্রথম ওভারে আফ্রিদির করা পিনপয়েন্ট ইয়োর্কারটাই যেন বারবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে। ঠিক ‘টো ক্রাশিং ইয়োর্কার’ বলতে যা বোঝায় আরকি। একেবারে চোখ জুড়ানো এক ডেলিভারি! সেই ডেলিভারিতে রহমানুল্লাহ গুরবাজ শুধু প্যাভিলনে ফিরে যাননি, তাকে যেতে হয়েছে হাসপাতালেও।
রীতিমত গুরবাজ মাঠ ছেড়েছেন সতীর্থের কাঁধে চড়ে। পরবর্তীতে তাঁকে পাঠানো হয় হাসপাতালে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় গুরবাজের। এই সময়ের সবচেয়ে দ্রুতগতির বোলারদের একজনও শাহীন আফ্রদি। তিনি প্রায় নিয়ম করে ১৪০ কিলো/ঘন্টা গতিতে বল করে যেতে পারেন। আর তেমনই গতিবান এক বল আঘাত করেছে গুরবাজের পায়ে। অসহ্যকর এক যন্ত্রনা নিশ্চয়ই!
তেমনই হাজার খানেক যন্ত্রনার কারণ হয়ত হতে চাইবেন আফ্রিদি। নিজের অস্ত্রাগারে থাকা সবগুলো অস্ত্রই যেন ঝালাই করে নিতে চাইবেন নেট প্র্যাকটিসে। এরপর মাঠের ক্রিকেটে তিনি তাঁর অনুশীলনের পুরোটা কাজে লাগাতে সক্ষম। সে কথা বলাই বাহুল্য। এই বিধ্বংসী রুপটাই হয়ত চাইছে পাকিস্তান ক্রিকেট।
বিধ্বংসী শাহীনের নেতৃত্বে তারুণ্যের ঠাসা বোলিং লাইনআপটা দুমড়ে-মুচড়ে ফেলতে যেকোন ব্যাটিং লাইনআপকে। মিডল অর্ডার ক্রাইসিসের মাঝেও বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের ওপেনিং জুটির সাথে আফ্রিদির নেতৃত্বাধীন বোলিং আক্রমণটাই পাকিস্তানের ভরসা।