‘মনের কোণে সন্দেহ জাগতেই পারে’

সাকিবের কাছ থেকে আসা যেকোনো ‘জবাব’ই উপভোগ্য। এবারো তার ব্যাতিক্রম হল না।

তাঁর মুখ থেকে নিষেধাজ্ঞা, ফেরা সম্পর্কে শোনার জন্য অধীর আগ্রহ ছিলো। এই আগ্রহটা টের পেয়ে ভক্ত ও সাংবাদিকদের কাছ থেকে নিজেই প্রশ্ন গ্রহণ করেছেন। আজ সেগুলোর উত্তর দিয়েছেন ইউটিউবে নিজস্ব চ্যানেলে। এই প্রশ্নোত্তরে বলা বাছাই করা জবাবগুলো রইলো সব পাঠকের জন্য।

  • ফিক্সিং তথ্য একবার গোপন করেছিলেন বলে আপনার প্রতি কী সতীর্থদের অবিশ্বাস থেকে যেতে পারে?

আসলে কার মনের ভেতর কী আছে, বলা মুশকিল। সন্দেহ হতেই পারে, অবিশ্বাস তৈরি হতেই পারে। সেটা কখনোই অস্বীকার করি না। তবে যেহেতু এর ভেতরও আমার সবার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, কথা হয়েছে, আমি কখনও ওভাবে ফিল করিনি। আশা করি, এই জায়গাটিতে সেভাবে সমস্যা হবে না। তারা যেভাবে আমাকে বিশ্বাস করত, এখনও সেভাবেই বিশ্বাস করবে।

  • নিজের ধারণাটা জানান।

এটা করতেই পারে (অবিশ্বাস), এটা আসলে অস্বাভাবিক কিছু না। মনের কোণে সন্দেহ জাগতেই পারে, এটা নিয়ে আফসোসের কিছু নেই। কারণ ঘটনাটাই এরকম, যে কোনো সময় যে কারও মনের কোনায় সন্দেহ জাগতে পারে। তবে আমার ধারণা, আমার প্রতি সবার আগে যে বিশ্বাস ছিল, এখনও থাকবে।

  • আর কখনো বিতর্কে না জড়ানো…

আমার ধারণা কেউই চায় না বিতর্কে জড়াতে। সবাই চায় সচেতন থেকে বিতর্ক এড়াতে। কিন্তু কিছু মানুষকে দিয়ে হয়তো সেটা সবসময় সম্ভব হয় না। আমি সামনে অবশ্যই আরও সতর্ক থাকার চেষ্টা করব যেন একদমই বিতর্ক না হয়।

  • ড্যানিয়েল ভেট্টোরির কাছ থেকে শেখা প্রসঙ্গে

আমার কাছে মনে হয় আমি ওর থেকে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি যখন ও খেলতো। ওর খেলার সময়টায় আমি অনেক বেশি ফলো করতাম এবং ওর থেকে আমি মনে করি অনেক কিছুই শিখতে পেরেছি। ওর লিডারশিপ কোয়ালিটি, ওর বোলিংয়ের যে বৈচিত্র এবং ওর যে ক্রিকেটিং ব্রেইন; আমার কাছে মনে হয় এগুলা অসাধারণ। সো সেগুলা থেকে আসলে আমি অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। আর এখনও যেহেতু কোচ যদিও বেশিদিন কাজ করার সুযোগ হয় নাই, বেশিদিন বলতে ওর সঙ্গে মনে হয় আমার একদিনই দেখা হয়েছে। তারপরে তো আর দেখা হয়নি। আমি খুবই এক্সাইটেড ওর সঙ্গে কাজ করার জন্য এবং আশা করি ও আসাতে আমাদের বাংলাদেশের স্পিন বোলিং ডিপার্টমেন্টটা আরও বেশি ভালো করবে।

  • নিষেধাজ্ঞা শেষে নিজের লক্ষ্যটা কী?

দেখুন আসলে এখন আমার টার্গেটটা থাকবে যেখান থেকে শেষ করেছিলাম আগে ওই জায়গাটায় পৌঁছানো। এর থেকেও যেন আরও ভালো কিছু করতে পারি সেই তাড়না আমার ভেতর থাকবে এবং আপনাদের অনুপ্রেরণা এবং আপনাদের যে দোয়া। সেটার প্রতিদান দেয়ার অবশ্যই চেষ্টা করব।

  • সামনের বিশ্বকাপ নিয়ে কেমন পরিকল্পনা?

২০২৩ এর ওয়ার্ল্ডকাপ যেহেতু ভারতে অবশ্যই আমাদের টিমের একটা প্লান থাকবে। সবাই যার যার মতো ইনডিভিজুয়াল প্লানও করবে। যেহেতু করোনার জন্য আসলে একটা বছর খেলাই হয়নি, তো কেউই ওইভাবে প্লান করতে পারেনি। আমি সিওর যখনই ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচে সবাই ব্যাক করবে তখনই আসলে ওয়ার্ল্ড কাপটাকে মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নেয়া শুরু করবে এবং সিরিজ বাই সিরিজ নিজেকে কিভাবে ইম্প্রুভ করা যায় সেই বিষয়গুলাও চিন্তা করবে।

  • নিজের সেরা মুহুর্ত কোনটা?

সেরা মুহূর্ত তো আমি মনে করি এখনও আসেনি। যখন আসবে সেটা হবে হয়তো বাংলাদেশের হয়ে কোন ওয়ার্ল্ডকাপ জেতা। সেটা টি-টোয়েন্টি হোক, ওয়ানডে হোক। সেটা হবে সব থেকে বড় মুহূর্ত। এ পর্যন্ত আমি যতি মনে করি ওয়ান অব দ্য বেস্ট হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টেস্ট ম্যাচ জেতা আর এই ওয়ার্ল্ডকাপে আমার পারফরম্যান্স। ব্যক্তিগত দিক থেকে।

  • অধিনায়কত্ব ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে কী ভাবেন?

আসলে আমার মাথায় একটা জিনিসই আছে যে কিভাবে আমি ফিরে আসতে পারি এবং কিভাবে আমি আগের পারফরম্যান্স ফিরে পাই। এই নিষেধাজ্ঞার আগে আমার যে পারফরম্যান্স ছিল সেই জায়গায় যেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরে আসতে পারি। এরপর যেন সেখান থেকে আরো বেশি উন্নতি করতে পারি।

  • এই নিষেধাজ্ঞার সময়টা ভালো কাজে লাগিয়েছেন। এটা কী একটা খারাপের ভালো দিক ছিলো?

আমি বলব যে হ্যাঁ। এটা আমাকে অনেক হেল্প করেছে। আমি বলব এটা আমাকে অনেক দিক থেকে হেল্প করেছে এবং সেটা বেশিরভাগ তিকই পজেটিভ সাইডে হেল্প করেছে। জীবনের সম্পর্কে অনেক বেশি ডিফারেন্ট করে চিন্তা করার অপশন তৈরি হয়েছে। অনেক দরজা ওপেন হয়েছে বলে আমার কাছে মনে হয়। সো ব্লেসিং ইন ডিসগাইস বলতে পারেন।

  • করোনার কারণে এই বছর খুব একটা খেলাই হয়নি। ফলে মিস করেননি খুব বেশি। একটু লাকি মনে হচ্ছে?

আমি তো নিজেকে সবসময় লাকি মনে করি। আমার মনে হয় এই দিক থেকেও আমি অনেক লাকি ছিলাম যে খুব বেশি একটা মিস করিনি। যেহেতু ওইভাবে আসলে কোন খেলাই হয়নি। সো এই মিস করার সুযোগটা তৈরি হয়নি। হয়তো যদি সবসময় খেলা দেখতাম, ন্যাশনাল টিম খেলছে আমি খেলতে পারছি না। তখন হয়তো অনেক বেশি মিস করতাম সত্যি কথা। বাট যেহেতু ওরকম খেলা দেখার সুযোগ হয়নি, স্পেশালি বাংলাদেশ টিমের।

  • এই সময়ে বাবা হলেন…

সেকেন্ড বাচ্চার বাবা হয়েছি, প্রথম যখন হলাম তখন সেভাবে টাইম দিতে পারিনি, সো সেকেন্ড মেয়ে অনেক লাকি, আমিও অনেক লাকি যে আমরা দুজনই দুজনকে অনেক সময় দিতে পেরেছি। আশা করি এই সময়টা আমাদের সবসময় মনে থাকবে।

  • টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

টি-টোয়েন্টি আমরা জানি না আমরা কতদুর এগিয়েছি বাট টি-টোয়েন্টির একটা বিউটি হচ্ছে যে কেউ কোনদিন ফেভারিট না। সো যে কেউ যে কোন দলকে হারাতে পারে। সো ওইটা আমাদের একটা ভরসা। যেহেতু এখন আমরা রেগুলার অনেক বেশি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলছি। আমার কাছে মনে হয় ২০১৫-১৬ থেকে এখন অনেক ভালো একটা দল। অনেক বুঝতে পারি আমরা, কিভাবে খেলা উচিত, সো সেটা আমাদেরকে হেল্প করবে অবশ্যই আরও একটু ভালো পারফর্ম করার জন্য।

  • নিষিদ্ধ হবেন জেনেও এতটা ভালো খেলা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল

আমার তো মনে হয় খুবই চ্যালেঞ্জিং। আপনি যেটা বলেছেন যে হ্যাঁ, অনেক দিন ধরেই এটা তদন্ত চলছিল কিংবা রেগুলার আমার সঙ্গে ওরা যোগাযোগ করছিল। স্বভাবিকভাবেই আমার জন্য একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি ছিল এবং এটা কখনই একটা খেলোয়ারের জন্য নাইস একটা ফিলিং না কিংবা নাইস একটা কথা না যেটা নিয়ে আপনি ঘুমাতে যেতে পারবেন। সেদিক থেকে অবশ্যই ডিফিকাল্ট সময় ছিল। তারপরও হ্যাঁ আমি জানতাম, বুঝতে পেরেছিলাম যে হয়তো কিছু একটা হতে পারে। আবার কখনও মনে হচ্ছিল যে নাও হতে পারে। কারণ আমি সিওর ছিলাম না যে কি ধরনের রেজাল্ট অপেক্ষা করছে আমার জন্য। বাট যখন ফাইনালি জানলাম, তখন তো আপনারাও সবাই জেনে গেছেন। ওই যে সময়টা যখন তদন্ত চলছিল স্বাভাবিকভাবেই আমার জন্য কখনও ইজি ব্যাপার ছিল না।

  • বিকেএসপির অনুশীলন কেমন ছিল?

বিকেএসপির অনুশীলন খুবই ভালো ছিল। ওই ট্রেনিং আমার খুব দরকার ছিল। যদিও আমার ইচ্ছে ছিল আরও ১৫-২০ দিন করার। যেহেতু শ্রীলঙ্কা সিরিজটি হয়নি, ওটা আর চালিয়ে যাওয়া হয়নি। চলে এসেছি যুক্তরাষ্ট্রে। আরও ১৫-২০ দিন করতে পারলে পরের ১-২ বছরের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুতি হয়ে যেত। যেহেতু সামনে সময় আছে, সামনে একটি ঘরোয়া টুর্নামেন্ট আছে, ওই ১৫-২০ দিনের ট্রেনিংয়ের যে গ্যাপটি ছিল, আমার ধারণা আমি পূরণ করতে পারব।

  • আপনার প্রিয় খেলোয়াড় মেসি তো বার্সেলোনা ছাড়তে চাচ্ছিলো…

সত্যি বলতে, আমি চাচ্ছিলাম মেসি মুভ করুক। মুভ করে ম্যান সিটিতে যাক অথবা পিএসজিতেই যাক। আমার ধারণা, ওই দুই জায়গায় গেলে অনেক ভালোভাবে খেলতে পারত, ফ্রিভাবে খেলতে পারত। যেহেতু ওর ক্যারিয়ারের একদম শেষ সময়। এই বছর আর পরের বছর হয়তো ভালোভাবে উপভোগ করতে পারত, যেটা হয়তো বার্সেলোনাতে অতটা সম্ভব হয় নয়, কারণ গত তিন-চার বছর ওর একার ওপর অনেক চাপ। তবে শেষ পর্যন্ত যেহেতু বার্সেলোনাতেই আছে, আমি চাইব, নিজের সেরাটা দিয়ে বার্সেলোনাকে শিরোপা এনে দিয়ে যেন বের হতে পারে, যদি পরের বছর বের হতে চায়।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...