মহাদেশীয় লড়াইয়ে মলিন সাকিব

পঞ্চাশ ওভারের ফরম্যাটে সাকিব এশিয়া কাপ খেলেছেন চারটি। পঞ্চম এশিয়া কাপের দোড়গোড়ায় দাঁড়িয়ে বিগত আসরগুলোতে সাকিবের পারফরমেন্স ঠিক কেমন ছিল তা নিয়ে আলোচনা করাই যায়।

ঘোলাজল পরিষ্কার হয়েছে। বাংলাদেশ ওয়ানডে দল পেয়েছে নতুন অধিনায়ক। সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল খেলবে এবারের এশিয়া কাপের আসর। সাকিব আল হাসান বিশ্বসেরা খেলোয়াড়, তাতে কোন সন্দেহ নেই। অধিনায়ক হিসেবে তিনি কতটুকু সাফল্য পাবেন। তবে খেলোয়াড় হিসেবে তাকেও তো রাখতে হবে ব্যাটে বলে অবদান।

পঞ্চাশ ওভারের ফরম্যাটে সাকিব এশিয়া কাপ খেলেছেন চারটি। পঞ্চম এশিয়া কাপের দোড়গোড়ায় দাঁড়িয়ে বিগত আসরগুলোতে সাকিবের পারফরমেন্স ঠিক কেমন ছিল তা নিয়ে আলোচনা করাই যায়। তবে এই আলোচনায় প্রধান্য পাবে পরিসংখ্যান।

সাকিব প্রথম এশিয়া কাপ খেলেন ২০১০ সালে। তখন তিনি টগবগে তরুণ। কেবলই আলো ছড়াতে শুরু করেছেন বিশ্ব ক্রিকেটের ময়দানে। সেবারের আসর বসেছিল শ্রীলঙ্কায়। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা অংশ নিয়েছিল সেই আসরে।

বাংলাদেশ প্রথম রাউন্ডেই বাদ পড়ে। তিন ম্যাচ খেলেছিলেন সেই আসরে সাকিব। বেশ নড়বড়ে সেই দলটা হয়ে মোটে ৫২ রান করেছিলেন সাকিব আল হাসান। ৯১.২২ স্ট্রাইকরেটে রান করা সেই ব্যাটিং ইনিংসগুলো নিয়ে আসলে আসলে আলাদা করে বলার তেমন কিছুই নেই।

তবে সেই আসরে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন তিনি। নিয়েছিলেন ৫টি উইকেট। মাত্র ৫.৭০ ইকোনমি রেটে সেবার দারুণ বোলিংই করেছিলেন বা-হাতি স্পিনার। এমনকি সেই আসরের ষষ্ঠ সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার ছিলেন তিনি।

এরপর সেই আক্ষেপের গল্প। ২০১২ সালে মাত্র ২ রানে পাকিস্তানের বিপক্ষে হারতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। সাকিবের সেই কান্না জর্জরিত মলিন মুখ তো এখনও মাঝে মধ্যেই চোখের সামনে চলে আসে। জয়ের অনেক কাছে গিয়েও শিরোপা থেকে যায় এক মহাকাশ সমান দূরে।

সাকিবের আক্ষেপটাই তো ছিল সম্ভবত সবচেয়ে বেশি। আগের বছরই ঘরের মাঠে বিশ্বকাপে তেমন সুখস্মৃতি ছিল না। লজ্জার মুখে পড়তে হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। এরপরই শিরোপা জয়ের হাতছানি। তাতে আবার সাকিব সামনে থেকেই রেখেছিলেন অবদান। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন সাকিব সেই আসরে।

২৩৭ রান করেছিলেন তিনি, চার ম্যাচে। তিনটি অর্ধশতক ছিল তার নামের পাশে। চমকপ্রদ বিষয় ছিল তার স্ট্রাইকরেট। প্রায় ১১০.২৩ স্ট্রাইকরেটে তিনি রান করেছিলেন ২০১২ আসরে। ঘরের মাঠে বল হাতেও তিনি যথেষ্ট কার্য্যকর বোলারই ছিলেন।

শিকার করেছিলেন ৬টি উইকেট। ইকোনমি ছিল আগের আসর থেকেও কম। মাত্র ৪.৯৭ ইকোনমি রেট ছিল তার নামের পাশে। ব্যাটে-বলে পারফরম করেও শিরোপা জিততে না পারার আক্ষেপটা নিশ্চয়ই তীব্র। ২০১৪ তে সাকিব হয়ত আরও একটিবার প্রচেষ্টা চালাতে পারতেন শিরোপা জয়ের। কিন্তু তিনি তা করতে পারেননি।

শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অশোভন অঙ্গভঙ্গির কারণে তিনটি ওয়ানডে ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার মাঝে দিয়ে যেতে হয় সাকিবকে। যাতে এশিয়া কাপের প্রথম দুই ম্যাচও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাইতো পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে মাঠে ফিরেছিলেন সাকিব। প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে ব্যাট হাতে দারুণ করেছিলেন তিনি। তবে ম্যাচ আর জিততে পারেনি বাংলাদেশ।

সেই ম্যাচে ৪৪ রানে অপরাজিত থাকা সাকিব মোট ৬৪ রান করেছিলেন দুই ম্যাচে। উইকেট নিয়েছিলেন সর্বসাকুল্যে ১টি। সেই ২০১২ সালের পর আরও একবার এশিয়া কাপের শিরোপা জয়ের সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। ২০১৮ সালে যে স্বপ্নভঙ্গ হয় ভারতের কাছে।

সেই আসরে ব্যাট হাতে বলার মত তেমন কিছুই করতে পারেননি সাকিব। আসরে চার ম্যাচ খেলা সাকিব রান করেছিলেন মাত্র ৪৯ রান। তবে বল হাতে তিনি ছিলেন অন্যতম সফল বোলার। সাত উইকেট শিকার করে তিনি হয়েছিলেন বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার। সে আসরে তার ইকোনমি ছিল ৪.৫৬।

সেই আসরে ব্যর্থতা থেকে অবশ্য সাকিব ঘুরে দাড়িয়েছিলেন ২০১৯ বিশ্বকাপে। ব্যাট হাতে অনবদ্য এক মহাকাব্যের জন্ম দিয়েছিলেন তিনি। আফসোস সেবারও বাংলাদেশ শিরোপার ধারেকাছে জেতে পারেনি। এবার কি তবে শিরোপার খরা ঘুচবে? সময়ই বলে দেবে।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...