Social Media

Light
Dark

একা সাকিব, ফাঁকা সাকিব

কারণ, পারফরম্যান্সে দলের বাকিরা ছিলেন যার পর নাই ম্লান এবং আমরা দল হিসেবে গোটা টুর্নামেন্টটা খেলতে পারিনি। অথচ সাকিব কিন্তু টুর্নামেন্টসেরা হওয়ার মতোই একটা পারফরম্যান্স রেখেছিলেন সে বিশ্বকাপে। তাই ক্রিকেটের মতো একটা দলীয় খেলায় দেশকে কিছু না জেতাতে পারার দায় কেবল তাঁর ঘাড়েই চাপানোর যৌক্তিকতা দেখি না।

২০১৯ সালের কথা খুব মনে পড়ছে আজ ৷ ব্যাটে-বলে কী অনবদ্য একটা বিশ্বকাপই না কাটালেন সাকিব আল হাসান! কিন্তু বাকিদের সম্মিলিত ব্যর্থতায় কাঙ্ক্ষিত সফলতা পায়নি বাংলাদেশ। তখন সবাই সাকিব বন্দনায় ব্যস্ত।

কথা তাঁদের একটাই- সাকিব একা কী করবে! এমনকি সাকিবকে মাথায় তুলে দলের বাকি সদস্যদের ‘কলাগাছ’ আখ্যা দিয়ে অপমান করতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি অনেকে।

সময়ের পালাক্রমে পাঁচ বছর পর এসে আজ সেই সাকিবকেই একা দায় দেওয়া হচ্ছে। সেটা বাংলাদেশকে কিছু না জেতাতে পারার দায়।

সাকিব বাংলাদেশকে যে কিছু জেতাতে পারেননি, এ-রকমটা নয়। এমন বহু ম্যাচ রয়েছে যেখানে বাংলাদেশকে জিতিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের জেতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ছিল তাঁর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অবদান। বাংলাদেশ ক্রিকেটে সাকিবের অবদান অস্বীকার করার সুযোগই নেই।

যতটুকু বুঝেছি, এখানে ‘কিছু’ বলতে আসলে শিরোপার কথা বলা হচ্ছে এবং আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে মেজর কোনো শিরোপার কথা বলা হয়েছে যেহেতু বাংলাদেশ ইতোমধ্যে দুইটা শিরোপা বাগিয়েছে, যেখানে একটাতে সাকিব ছিলেন অধিনায়ক এবং আরেকটাতে সহ-অধিনায়ক।

এখন মূলকথা হলো, সাকিব বাংলাদেশকে কিছু জেতাতে পারেননি। কথাটা কিন্তু খুবই সত্য। মেজর শিরোপার কথা চিন্তা করলে সাকিব আসলেই দেশকে কিছু জেতাতে পারেননি। তবে প্রশ্ন হল, সাকিব কি কোনো ব্যক্তিগত খেলার খেলোয়াড় যে দেশকে কিছু না জেতানোর দায়টা কেবল তাঁর ঘাড়েই এসে পড়বে? নিশ্চয়ই না। তাছাড়া দলীয় খেলায় একটা দলকে একা শিরোপা জেতানোটা কি আদৌ স্বাভাবিক কোনো ঘটনা? অবশ্যই না।

দেখুন, দলীয় খেলায় একা একটা দলকে যে টানা যায় না বা বড় কিছু জেতানো যায় না, সেটা তো আমাদের ক্ষেত্রে ২০১৯ বিশ্বকাপেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ৮ ম্যাচে সাকিবের একাই ৬০৬ রান ও ১১ উইকেট নেওয়ার পরেও টুর্নামেন্টশেষে বাংলাদেশের অবস্থান ১০ দলের মাঝে অষ্টম।

কারণ, পারফরম্যান্সে দলের বাকিরা ছিলেন যার পর নাই ম্লান এবং আমরা দল হিসেবে গোটা টুর্নামেন্টটা খেলতে পারিনি। অথচ সাকিব কিন্তু টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার মতোই একটা পারফরম্যান্স রেখেছিলেন সে বিশ্বকাপে। তাই ক্রিকেটের মতো একটা দলীয় খেলায় দেশকে কিছু না জেতাতে পারার দায় কেবল তাঁর ঘাড়েই চাপানোর যৌক্তিকতা দেখি না।

আর সাকিবের বিপরীতে আজ যাকে উদাহরণ হিসেবে দাঁড় করানো হচ্ছে, সেই আমিনুল হকও বাংলাদেশকে একা হাতে সাফ জেতাননি। নি:সন্দেহে শিরোপা জেতার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন তিনি; সেই সাথে ছিল রজনীকান্ত বর্মন, রোকনুজ্জামান কাঞ্চন, মতিউর রহমান মুন্নাদেরও অনস্বীকার্য অবদান।

এটা আবারও প্রমাণ করে, দলীয় খেলায় একা একটা দলকে কেউ শিরোপা জেতাতে পারেন না। হ্যাঁ, একা হয়তো দুয়েকটা ম্যাচ জেতাতে পারেন। আবার দলে ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে বেশি অবদানও রাখতে পারেন কিন্তু সেটাও যথেষ্ট হয় না যদি না বাকিদের কাছ থেকে যোগ্য সমর্থন পাওয়া যায়।

ঠিক এই সমর্থনটাই পেয়েছিলেন আমিনুল, যা পাননি সাকিব। এ কারণেই আমিনুলের নামের পাশে রয়েছে দেশের ফুটবল ইতিহাসের সর্বোচ্চ অর্জনের শিরোপা আর সাকিবের নামের পাশে একদম ফাঁকা।

Share via
Copy link