একটা জগাখিচুড়ি লেগে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। প্রথম সংকট দেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের পারফরম্যান্স। দ্বিতীয় সংকট সাকিব আল হাসানের সাথে বেটউইনারের সম্পর্ক। এখন এই দুয়ের মাঝে একটা সরল পথ খুঁজতে বাধ্য হয়েই মাথা নিচু করতে হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি)।
টি-টোয়েন্টিতে হন্যে হয়ে একজন অধিনায়ক খুঁজে বেড়াচ্ছিল দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সেই সমস্যায় ভরসা ছিলেন সাকিব। কিন্তু গোল বাঁধান তিনি নিজেই। তিনি অনলাইন জুয়ার সাইট বেটউইনারের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বেটউইনার নিউজের মুখপাত্র হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হন।
জুয়া বা বাজি ক্রিকেটে নিষিদ্ধ। দেশের আইনেও নিষিদ্ধ। ফলে, বিসিবি এক্ষেত্রে সাকিবকে এক বিন্দুও ছাড় দিতে রাজি ছিল না। ছাড় তাঁরা দেয়ওনি। সাকিবও সেই চুক্তি থেকে সরে আসেন। কিন্তু, এর মধ্যে আবারও দু’টি সমস্যা হয়েছে – বেট উইনারের যা প্রচার পাওয়ার দরকার ছিল – সেটা তাঁরা পেয়ে গেছে। আর অন্যদিকে সাকিবও নিজে বিসিবিতে বা বাংলাদেশ ক্রিকেটে তাঁর আস্থার জায়গাটা হারিয়েছেন।
মূলত সাকিবের এই বেটিং ইস্যুতে আটকে থেকেই এশিয়া কাপের দল ঘোষণা দুই দফা পিছিয়ে দিয়েছে বিসিবি। কাগজে কলমে গত আট আগস্ট ছিল দল ঘোষণার ডেডলাইন। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলকে (এসিসি) বলে বিসিবি এক দফা সময় বাড়িয়ে নিয়েছিল দু’দিন। সেই দু’দিন শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার। এখন শুক্রবার এসেও ঠিক জানা যাচ্ছে না – কবে দল ঘোষণা করা হবে।
কেননা, বিসিবি প্রথমে চেয়েছিল সাকিবকেই দীর্ঘমেয়াদে টেস্টের মত টি-টোয়েন্টিতেও দায়িত্ব দিতে। গেল জিম্বাবুয়ে সফরেই তিনি দায়িত্ব পেতে পারতেন। কিন্তু, আগে থেকেই সেই সিরিজে ছুটি নিয়ে রাখা সাকিবের জায়গায় সেখানে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হয়ে যান নুরুল হাসান সোহান।
জানা গেছে, সাকিব আজই দেশে এসে পৌঁছাবেন রাতে। এরপর তিনি শনিবার হয়তো বসবেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সাথে। সাকিব বেটউইনারের সাথে চুক্তি বাতিল করলেও তাঁর আচরণে এবার বেশ ক্ষুব্ধই হয়েছেন বোর্ড সভাপতি। ফলে, সাকিবের সাথে সরাসরি আলাপ না করে অধিনায়কত্ব ইস্যুতে কোনো সিদ্ধান্তই নেওয়া হবে না।
যতদূর বোঝা যাচ্ছে তা হল টি-টোয়েন্টিতে সাকিবকেই বাধ্য হয়ে অধিনায়ক করছে বিসিবি। কারণ, আর কোনো বিকল্প এই মুহূর্তে হাতে নেই। কারণ, আগের সিরিজেই অধিনায়ক হওয়া উইকেটরক্ষক ব্যাটার সোহান ইনজুরিতে। লিটন দাসও ছিলেন ভাবনায়। কিন্তু, সর্বশেষ জিম্বাবুয়ে সিরিজে তিনিও পড়েছেন ইনজুরিতে।
আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকেও চাইলে অধিনায়কত্বটা ফিরিয়ে দেওয়া যেতে পারতো। কিন্তু, এই মুহূর্তে বিসিবি আর পুরনো পরিকল্পনায় ফিরতে চায় না। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকেও ঠিক অধিনায়কত্বের জন্য প্রস্তুত বলে মনে করছে না বিসিবির পরিকল্পনা মহল।
এর বাইরে বোর্ড সভাপতির ভাবনাতে মেহেদী হাসান মিরাজও ছিল। তিনি, বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব ১৯ দলকে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু, আপাতত টি-টোয়েন্টি একাদশেই মিরাজের জায়গাটা পাঁকা নয়।
তাই হাতে একদম ‘রেডি ম্যাটার’ ওই ঘুরে ফিরে একজনই। সাকিব আল হাসান। সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে তিনিই দল নিয়ে যাবেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে, এশিয়া কাপ খেলতে। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে এই মুহূর্তে বিসিবির আস্থার হাতটা তাঁর ওপর নিয়েই। কিন্তু, সাকিব নিজেও ভাল করে জানেন যে পারফরম্যান্স দিয়েই তিনি আবারও পাশার দানটা পাল্টে দিতে পারেন। আর সেটা করতে পারলে এই গুমোট পরিস্থিতি আর মাঠের বেহাল দশা – দুই সংকট থেকেই বের হতে পারে বাংলাদেশের ক্রিকেট।