কোথায় হারালেন শান্ত?

তোমার হল শুধু, আমার হল সারা। রবি ঠাকুরের লেখা এই লাইনের দ্বিতীয় অংশের সাথে মিল যেন খুঁজে পাচ্ছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। নতুন একটা বছর শুরু হয়েছে। তবে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন শান্ত। বছর নামক সংখ্যার শেষটায় তিন থেকে চার হতেই শান্ত যেন নিরুদ্দেশ। না, ঠিক শান্ত নিরুদ্দেশ হননি। হয়েছে তার ব্যাটের রান।

একটু পেছনে ফেরা যাক। ২০২৩ সালের শুরুর দিকের কথা, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের নবম আসর তখন চলমান। সেখান থেকে নাজমুল হোসেন শান্তর দিনবদলের শুরু। বিপিএলের নবম আসরে চোখ ধাঁধানো পারফরমেন্স করলেন শান্ত। হলেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ৫১৬ রান করে টুর্নামেন্টের সেরাও নির্বাচিত হন।

সেই ধারা অব্যাহত থাকে পুরো বছর জুড়েই। তিরস্কারের তিক্ততা ঝেড়ে ফেলে চারিদিক থেকে প্রসংশা কুড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারের নির্ভরতার জায়গায় পরিণত হন। হওয়াটাও যে ছিল স্বাভাবিক। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১৬৫০ রান তিনি করেছেন, ৪২.৩০ গড়ে। এরপর হুট করেই ছন্দপতন ঘটে ওয়ানডে বিশ্বকাপের মঞ্চে।

দলের ভরাডুবির সাথে ডোবে শান্তর তরী। এরপর অবশ্য সাদা পোশাকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ছন্দপতন কাটিয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তবে বিপিএলের দশম আসর শুরু হয়ে গড়িয়েছে অনেকটা জল। তবে নিজের ছায়া হয়েই বিচরণ করছেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

নিজের নামের প্রতি কোনভাবেই সুবিচার করতে পারছেন না। তাতে করে যেন হারের বৃত্ত থেকেও বেড়িয়ে আসতে পারছেন না সিলেট স্ট্রাইকার্স। গত আসরে সিলেটকে সঙ্গে নিয়েই আলো ছড়িয়েছিলেন শান্ত। এবারে যেন দুই পক্ষেরই বেহাল দশা। চার ম্যাচের চারটিই হেরেছে গেল বারের রানার্সআপ দল।

অন্যদিকে শান্তর সংগ্রহ মোটে ৬০ রান। গড় কিংবা স্ট্রাইকরেট কোনটাই আসলে আলোচনার খোরাক মেটানোর মত নয়। বেশ দুশ্চিন্তাই যেন তাতে করে ঘনিভূত হচ্ছে। শান্ত বরাবরই বিপিএলে অন্তত ভাল করেন। এমন করুণ চিত্র থাকে না সচারচর। তার নামের পাশে অন্তত মান রক্ষার মতই পরিসংখ্যান স্থান পায় সবসময়ই।

শান্ত নিজেও সম্ভবত আন্দাজ করতে পারছেন নিজের এমন পরিস্থিতি। তিনি নিজেও হয়ত উপলব্ধি করতে পারছেন তার রান করাটা ঠিক কতটা জরুরি। টপ অর্ডারে সিলেট স্টাইকার্সের অন্যতম ভরসার পাত্র শান্ত। তার নিষ্প্রভ পথচলাতেই যেন কপাল পুড়ছে সিলেটের।

শুধু সেখানেই তো সমাপ্ত হয়ে যায় না শান্তর প্রভাব। গেল বছর টি-টোয়েন্টিতে প্রায় ৩১ গড়ে তিনি রান করেছেন বাংলাদেশের হয়ে। স্ট্রাইকরেট অন্তত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট থেকে যুতসই, ১১৯.৭৮। সেটাকে ছাপিয়ে যাওয়ার কথা তার। গেল বছর জুড়েই তো রানের ধারা বয়েছে তার ব্যাট থেকে। সে ধারার গতি বাড়বে সময়ের সাথে, সেটাই তো ছিল প্রত্যাশিত।

এই বছরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেখানে শান্তর উপরই গুরুদায়িত্ব থাকবে দলের টপ অর্ডার সামলানোর। সে জন্যে তো আত্মবিশ্বাস অর্জন করা চাই। ঘরের মাঠে বিপিএল ব্যতীত ভাল মঞ্চ তো হওয়ার কথাও নয়। শান্ত সেসব হিসেব নিশ্চয়ই মাথায় রাখছেন। সময় একেবারেই যায়নি ফুরিয়ে। শান্ত নিশ্চয়ই আবারও উড়ন্ত চুমু এঁকে দিতে চাইবেন ক্রিকেটের সবুজ গলিচায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link