একটা প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি। বলুন তো এই বছর বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করেছেন কে? যারা প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ ক্রিকেটের খেলা গোগ্রাসের গেলার মত করে দেখছেন, তারা নিশ্চিতভাবেই জানেন। তিনি আর কেউ নন, নাজমুল হোসেন শান্ত।
তিন ফরম্যাট মিলিয়েই বাংলাদেশের হয়ে চলতি বছরে তিনি রয়েছেন সবার উপরে। টেস্ট আর ওয়ানডেতেও ওই এক নম্বরেই রয়েছেন শান্ত। তবে টি-টোয়েন্টিতে তার অবস্থান তিন নম্বরে। কি দুর্দান্ত এক সময়ই কাটাচ্ছেন তিনি! না, গেল কয়েকদিন অন্তত মনে স্বস্তি থাকবার কথা নয়। কেননা ইনজুরি তো বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তার স্মরণীয় এক বছরের মাঝে।
তবে ইনজুরিকে বুড়ো আঙুল দেখাবেন বলেই যেন সব চেষ্টা শান্তর। শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তাই তার দু’হাত তুলে উচ্ছ্বাস। সাথে করতালি কাইরন থমসের। লোকটা বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের রিহ্যাব ম্যানেজার। চোট আক্রান্ত খেলোয়াড়দের দেখভালের দায়িত্ব এখন তার কাঁধেই।
এশিয়া কাপে শান্তর ব্যাট চলছিল দারুণ ক্ষিপ্রতায়। একটি শতক ছাড়াও একটি হাফ সেঞ্চুরি। সেটিও সম্ভবত শতক হলেও হতে পারত। তবে শ্রীলঙ্কা আর পাকিস্তানের দুই ভিন্ন তবে বৈরী আবহাওয়া শান্তর পথের কাটা হয়ে দাঁড়ায়। তাকে ফেলে দেয় ইনজুরিতে। হ্যামস্ট্রিংয়ের ইনজুরি তাকে ছিটকে দেয় মাঠ থেকে।
কিন্তু চিন্তার বিশেষ কারণ আছে বলে আর মনে হয় না। দ্রুততার সাথেই সেই ইনজুরি কাটিয়ে উঠছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। অন্তত হোম অব ক্রিকেটে ক্ষিপ্রতার সাথে তার দৌড়ে বেড়ানো সেই কথাই বলে। তার ফিট হওয়া বড্ড বেশি প্রয়োজন বাংলাদেশের জন্য। বিশ্বকাপে ইনফর্ম শান্ত হতে পারেন বাংলাদেশের ত্রাণকর্তা কিংবা এক্স ফ্যাক্টর।
২০২৩ বছরটা ব্যাট হাতে তার যাচ্ছে দারুণ। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১০৭৮ রান করেছেন তিনি। তাছাড়া ক্যারিয়ারে চারটি শতক যুক্ত করেছেন এ বছর। যার দুইটি আবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে, এক টেস্টের দুই ইনিংসে। তবে টেস্ট আর টি-টোয়েন্টির আলাপটা আপাতত পাশে সরিয়ে রাখা যায়। ওয়ানডে ক্রিকেটও শান্ত ছিলেন স্বমহীমায় উজ্জ্বল।
বছর জুড়ে ৬২২ রান তিনি করেছেন। প্রায় ৪৮ গড়ে তিনি রান করেছেন সাদা বলের দীর্ঘতম ফরম্যাটে। দুইটি সেঞ্চুরি আছে তার ওয়ানডেতে এই বছরেই। যার একটিও তিনি ঘরের মাঠের চেনা আবহাওয়াতে করেননি। ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডের থরথর করে কাঁপতে থাকা শীতে একটি, আরেকটি পাকিস্তানের উত্তপ্ত রোদের দিনে।
বৈরী কন্ডিশনে পারফর্ম করবার দক্ষতা অন্তত তার রয়েছে। হোক সেটা দলের কিংবা পরিবেশের। এবারের এশিয়া কাপেও তিনি আস্থাভাজন হতে পারেন সেই প্রমাণ রেখেছেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একা হাতে দলের ব্যাটিং ইনিংস টেনে নিয়ে গেছেন। সেই ইনিংসটিসহ আরও তিনটি হাফ সেঞ্চুরির ইনিংস তিনি খেলেছেন এই বছরেই।
রান সংগ্রহের বিচারে তার পেছনে অবস্থান করছেন মুশফিকুর রহিম। তবে তিনি শান্তর থেকে এক ইনিংস বেশি খেলেও প্রায় ৫০ রানের ঘাটতিতে রয়েছেন। অন্তত এই পরিসংখ্যানগুলো বলে দেয়, ঠিক কতটা বর্ণিল সময় কাটাচ্ছেন শান্ত। তাও আবার বিশ্বকাপের বছরে।
২০২২ সালটা এভাবেই রাঙিয়েছিলেন লিটন কুমার দাস। তবে দলের যখন তাকে খুব বেশিই প্রয়োজন, তখন যেন নিজের ছায়া হয়ে রয়ে যাচ্ছেন দক্ষ এই ব্যাটার। তবে শান্তর উন্নতির গ্রাফটা বেশ ধারাবাহিক। আগের বছরও তিনি রানে ছিলেন। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ৮৩৫ রান করেছিলেন তিনি। এই ধারা বিশ্বকাপ অবধি অন্তত বজায় থাকুক, সেটাই সম্ভবত সকলের প্রত্যাশা।