অধিনায়কত্বই বদলে দিয়েছে শান্তকে

দলকে সামাল দেওয়ার দায়িত্বই যেন বদলে দিয়েছে শান্তর ব্যাটিং। আরও বেশি কর্তৃত্ব নিয়ে খেলছেন তিনি। দায়িত্ব নিয়েই দলের পক্ষে যা কিছু ভাল তাই করে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

সপাট করে ব্যাট চালালেন। বুলেটের গতিতে বল ছুটে গেল বাউন্ডারির দিকে। ব্যাট আর হেলমেট খুলে মেলে ধরলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সাগরিকার বুকে তিনি যেন এক শিকারি বাজপাখি। পাখা দু’টো মেলে দিয়ে যেন উড়ে বেড়ালেন। অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পালনের নমুনাই তিনি তৈরি করলেন।

পুরোদস্তুর অধিনায়কত্ব পাওয়ার পরই হারতে হয়েছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। সেই সিরিজেও একটি ম্যাচে দলের ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলেছিলেন শান্ত। তবুও সিরিজ হয়েছিল হাতছাড়া। তবে নিজেদের সবচেয়ে পছন্দের ফরম্যাটে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি তিনি কেননই বা হতে দেবেন।

তাইতো ২৫৬ রানের মামুলি টার্গেটেও যখন পরাজয়ের শঙ্কা। তখন দক্ষ নাবিকের হাত ধরে বন্দর নগরীতে ভিড়ল বাংলাদেশের জয়ের তরী। নাজমুল হোসেন শান্ত যেন বোঝালেন, ভুল হয়নি সেনাপতি নির্বাচনে। যোগ্য ব্যক্তির হাতেই উঠেছে এবার অধিনায়কত্বের দায়িত্ব।

ইনিংসের একেবারে শুরুর দিকেই ফিরে যান দলের অন্যতম সেরা ব্যাটার লিটন কুমার দাস। প্রথম ওভারেই বাইশ গজে হাজির হয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। স্বাভাবিকভাবেই চাপ ছিল তার উপর। অধিনায়ক হিসেবে প্রত্যাশা, দলের অন্যতম সেরা ব্যাটার হিসেবে প্রত্যাশা, সেই সাথে তাড়াতাড়ি উইকেট পড়ে যাওয়ার চাপ। এসবকে পাশ কাটিয়ে অনবদ্য এক শতক কাব্য লেখে গেলেন শান্ত।

লিটনের বিদায়ের পর চাপ তো আর কমেনি। উল্টো বেড়েছে। ১৪ রানের মাথায় আরেক ওপেনার সৌম্য সরকারও ফিরে যান সাজঘরে। ২৩ রানের মাথায় তাওহীদ হৃদয়ও আউট হয়ে যান। স্বাভাবিকভাবেই এক সমুদ্র চাপের মাঝে নিজেকে আবিষ্কার করেন শান্ত।

কিন্তু তিনি দিশেহারা হননি। বেশ ঠান্ডা মাথায়, শক্ত হাতে পরিস্থিতি সামাল দেন। প্রথমে জুটি গড়েন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সাথে নিয়ে। ৬৯ রানের জুটিতে প্রাথমিক সেই ধাক্কা সামাল দেন। এরপর রীতিমত ম্যাচ জয়ের দিকেই রেখেছেন নজর।

সে যাত্রায় তার সঙ্গী হন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। ব্যক্তিগত ৩৭ রানের মাথায় ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে আউট হন রিয়াদ। এরপরেই রেকর্ড গড়া পার্টনারশীপ গড়েন শান্ত, মুশফিকুর রহিমের সাথে। পঞ্চম উইকেট জুটিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান যোগ করে এই জুটি। ১৬৫ রানের এই জুটিতে ভর করেই জয় খুঁজে পায় বাংলাদেশ।

দ্রুত তিন উইকেট পতনের পর ইনিংস বিল্ডআপে বেশ কিছু বল খরচ করেছিলেন তিনি। তবে ইনিংসের দ্বিতীয়ভাগে রানের তারল্য বাড়ে শান্তর ব্যাটে। তাতে করে বাংলাদেশ স্রেফ জয়ের দিকেই এগিয়েছে। পেছন ফিরে আর তাকাতে হয়নি। লং অফ দিয়ে এক দৃষ্টিনন্দন চার হাঁকিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন শান্ত নিজেই।

এই ইনিংস খেলার পথে ১৩টি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন তিনি। দুইটি বিশাল ছক্কাও এসেছে তার ব্যাট থেকে। শেষ অবধি ১২৯ বলে ১২২ রানে অপরাজিত থেকেছেন শান্ত। তাতে করে ওয়ানডে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।

তবে চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডেতে শান্তর পারফরমেন্স। অধিনায়ক হিসেবে ৭ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। যার মধ্যে দুইটি হাফসেঞ্চুরিসহ একটি সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে গেছেন বা-হাতি এই ব্যাটার। এই সময়টায় তার ব্যাটিং গড় ৬৪.৬০। অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পাওয়ার আগে যেটা ছিল ২৯.৪৪।

এই ছোট্ট পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে অধিনায়ক হিসেবে ঠিক কতটা কার্যকর নাজমুল হোসেন শান্ত। দলকে সামাল দেওয়ার দায়িত্বই যেন বদলে দিয়েছে শান্তর ব্যাটিং। আরও বেশি কর্তৃত্ব নিয়ে খেলছেন তিনি। দায়িত্ব নিয়েই দলের পক্ষে যা কিছু ভাল তাই করে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এই ধারা অব্যাহত থাকুক- তেমনটাই তো প্রত্যাশিত।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...