‘ওঠ, ওঠ আরে আয়, আয়’ – হাসান মাহমুদের সেরাটা বের করে নেওয়ার জন্যে এভাবেই ডাকছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ক্লান্ত হাসান অধিনায়কের ডাকে আর সারা দিতে পারলেন না। হাত দুলিয়ে মানা করতে করতে ছাড়লেন একাডেমি মাঠ। অধিনায়ক কিংবা বড় ভাই হিসেবে শান্ত বরং চাইছিলেন সতীর্থের পুরোটা নিঙড়ে নিতে। যেমনটা তিনি মাঠেও চান।
বাংলাদেশ দলের এখন নেই কোন ব্যস্ততা। তাইতো ফিটনেস ঠিক রাখতে শান্ত, হাসানরা আসছেন মাঠে। দৌড়ে নিজেদের ফুসফুসের শক্তিমত্তা বাড়ানোর প্রচেষ্টা করছেন। এদিন শান্তর সঙ্গী ছিলেন হাসান মাহমুদ। দু’জনে মিলে বেশ খানিকক্ষণ দৌড়েছেন একাডেমি মাঠের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। ঘড়ি ধরে ধরে পুরো বিষয়টির দেখভাল করেছেন খোদ শান্ত নিজেই।
একটা পর্যায়ে হাপিয়ে যান হাসান। শান্ত আরেক সেট দৌড় শেষ করতে চাইলেন। কিন্তু হাসান মাহমুদের সম্মতি মেলেনি তাতে। অধিনায়ক হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করতে চাইলেন বটে শান্ত। যে দায়িত্বটা তিনি গেল বিশ্বকাপেও মাঠে পালন করতে চেয়েছিলেন।
অধিনায়ক শান্তর পথচলা বেশিদিনের না। এরই মধ্যে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে তিনি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কাগজে-কলমে নিজেদের সেরা বিশ্বকাপ কাটিয়েছে বাংলাদেশ। তবে তাতে সমর্থকদের মন ভরেনি। কেননা সেমিফাইনালে যাওয়ার সুযোগ যে শান্তরা পেয়েও লুফে নিতে পারেনি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সে ম্যাচের পর সমালোচনাও কম হয়নি।
কিন্তু পুরো আসর জুড়ে বেশ কয়েক দফা শান্তর অধিনায়কত্বের প্রশংসা হয়েছিল বটে। ‘ম্যান ম্যানেজমেন্ট’ ছিল তুলনামূলক ভাল। তাছাড়া দৃঢ়তার সাথে তার নেওয়া কিছু সিদ্ধান্ত বদলে দিয়েছিল ম্যাচের গতিপথ। সেসব কারণে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। আবার খোলসে বন্দী হয়ে যাওয়ায় তিরস্কারও হয়েছে তাকে ঘিরে।
কিন্তু শান্তর ভেতর দলনেতা হওয়ার গুণ রয়েছে বটে। সেটার প্রমাণ অবশ্য এই সামান্য দৌড়ে বেড়ানো থেকেও নেওয়া যায়। হাসান মাহমুদ শেষ দফা হাল ছেড়ে দেওয়ার আগে আরও একবার হাল ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। তখন শান্ত ডেকে তুলে আরও কয়েক রাউন্ড দৌড়ালেন একসাথে।
ম্যাচের মধ্যে এভাবেই হয়ত অনেক সময় হাল ছেড়ে দেবেন হাসান কিংবা অন্য সতীর্থরা। তখনই তো অধিনায়ক হিসেবে এগিয়ে আসতে হবে শান্তকে। ‘আয় ওঠ’ বলে লড়াই করবার সাহস জোগাতে হবে। কাজটা ক্ষুদ্র পরিসরেও করছেন শান্ত। ঠিক এ কারণেই হয়ত তার হাতে উঠেছে অধিনায়কের ব্যাটন।
যদিও ব্যাটার শান্তকে ঘিরে রয়েছে নানামুখী অভিযোগ। তবে অধিনায়ক হিসেবে চলার পথের শুরু থেকেই যোগ্য নেতা হওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। পাশাপাশি নিজের ব্যাটিংয়ের ধারটা বাড়ানো প্রয়োজন। কেবল তবেই শান্ত হয়ে উঠতে পারবেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের একজন কিংবদন্তি।