এশিয়া কাপের বেশ কয়েকটি ম্যাচ শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আশি-নব্বই এর দশকে এই মাঠ বেশ কিছু ঘটনার সাক্ষী হয়েছে। এই শারজাহ মাঠেই তো ১৯৮৭ সালে অস্ট্রো-এশিয়া কাপ চলাকালীন ভারতের কুখ্যাত মাফিয়া সম্রাট দাউদ ইব্রাহিম তার দলবল নিয়ে ভারতীয় ড্রেসিংরুমে ঢুকে পড়েছিলেন এবং ভারত টুর্নামেন্ট জিতলে দলের প্রতিটি খেলোয়াড়কে টয়োটা গাড়ি উপহার দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
ছাব্বিশ বছর আগে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা যে নিখাঁদ এক ক্রিকেটপ্রেমীর স্রেফ আবেগী কাণ্ড ছিল না সে তো সহজেই অনুমানযোগ্য। অন্তত দাউদ ইব্রাহিমকে নিয়ে কিছুটা জানাশোনা থাকলেও আপনি বুঝতে পারবেন এর পেছনে বড় রকমের অসৎ কোন উদ্দেশ্য ছিলো।
২০০১ সালে ভারত সরকার শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলা নিষিদ্ধ করে অতিরিক্ত ফিক্সিংঝুঁকির কারণে। আসলে ১৯৯০ থেকে শারজাহ তাঁর ক্রিকেটীয় জৌলুস হারাতে থাকে অতিরিক্ত জুয়া প্রাবল্যের কারণে। একটা সময়ে শারজায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এবার এশিয়া কাপের ম্যাচ আবার প্রাণ ফেরাতে যাচ্ছে আলোচিত- কলঙ্কিত সেই মাঠটিতে। এশিয়া কাপের মূল পর্বে ১৩টি ম্যাচের মধ্যে তিনটি ম্যাচ হবে শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এছাড়াও আরো কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনার সাক্ষী। পেছনে ফিরে ইতিহাসের পাতা থেকে জেনে নেয়া যাক তেমন কয়েকটি বিশেষ ঘটনা।
- পাকিস্তানের করুণ ব্যাটিং বিপর্যয়
১৯৮৫ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তান। ইমরান খানের বিধ্বংসী বোলিংয়ের সামনে আত্মসমর্পণ করে ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপ। ভারত মাত্র ১২৫ রানে অলআউট। যদিও নাটকের তখনো বাকি।
ব্যাটিংয়ে নামলো পাকিস্তান। এবং দ্রুতই পরিস্থিতি বদলে গেল। পাকিস্তান মাত্র ৮৭ রানে অলআউট। মজার ব্যাপার হলো পাকিস্তান ইনিংসে পাঁচ ব্যাটসম্যান রানের খাতাই খুলতে পারেনি। ফলস্বরূপ ভারত ৩৮ রানের জয় পায়।ভারতের এক ঐতিহাসিক জয়ের সাক্ষী হয় শারজাহ ক্রিকেট মাঠ, গ্যালারি ভর্তি দর্শক এবং পুরো ক্রিকেটবিশ্ব।
- মিয়াঁদাদ কীর্তি
দিনটা ছিল ১৯৮৬ সালের ১৮ এপ্রিল। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শারজাহতে অস্ট্রালশিয়া কাপের ফাইনাল ম্যাচ। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারত সাত উইকেটে ২৪৫ রান করেছিল। তারপর পাকিস্তান ব্যাটিংয়ে নামলে ২৪১ রান করতেই নেয় নয় উইকেট।
পাকিস্তান ৪৯.৫ ওভারে ২৪২ রান করেছিল। অর্থাৎ জয়ের জন্য ম্যাচের শেষ বলে তার চার রান দরকার। ভারতীয় বোলার চেতন শর্মার শেষ ডেলিভারিটিতে জাভেদ মিয়াঁদাদ একটি ছক্কা হাঁকালেন। বড় কোনো আসরে সেবারই প্রথম শিরোপা জেতে পাকিস্তান। এই ম্যাচের পর মিয়াঁদাদ বনে গেলেন পাকিস্তানের হিরো।
- মরুর বুকে টেন্ডুলকার ঝড়
১৯৯৮ সালের এপ্রিল। ভারত-অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ চলছে। শারজাহ-র মরুর বুকে বিশ্ব ক্রিকেট সেদিন দেখেছিল ‘টেন্ডুলকার ঝড়’। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১৪৩ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। বিশ্ব ক্রিকেট অবাক বিস্ময়ে সেদিন দেখেছিল ‘লিটল মাস্টার’ কে।
লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্নসহ বাঘা বাঘা বোলারের বিরুদ্ধে শচীনের ঝড়ো ব্যাটিং ইনিংসটি ‘মরুঝড়’ নামে পরিচিত। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়ানরা ৭ উইকেটে ২৮৪ রান করে। ভারত ব্যাটিংয়ে নামলে বালির ঝড়ের কারণে ব্যাটিং ব্যাহত হয় এবং টার্গেট ৪৬ ওভারে ২৭৬ এ কমানো হয়েছিল। আর শচীন সেদিন অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন, যদিও ভারত শেষ অবধি জিততে পারেনি।
- ভারতীয় ব্যাটারদের মস্তিষ্কের অচলাবস্থা
শারজাহতে কোকা কোলা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারতকে ২৪৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। এই ম্যাচের নায়ক ছিলেন সনাথ জয়সুরিয়া। তিনি মাত্র মাত্র ১৬১ বলে ১৮৯ রানের শ্বাসরুদ্ধকর ইনিংস খেলেছিলেন।
ভারতের সামনে জয়ের জন্য ৩০০ রানের বিশাল টার্গেট ছিল। কিন্তু লঙ্কান বোলাররা বিধ্বস্ত করে দিয়েছিল ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপ। চামিন্দা ভাস তাঁর ৯.৩ ওভারেই ১৪ রান দিয়ে একাই পাঁচটি উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। ভারতীয় ব্যাটাররা টিকতেই পারলেন না লঙ্কান বোলারদের সামনে। এরকম দারুণ সব ম্যাচের সাক্ষী শারজাহ।