ফ্রান্সিস জোসেফ শাকলক – এই ভদ্রলোককে ক্রিকেটে অনেক বেশি খোঁজ খবর না রাখলে চেনার কথা নয়। নটিংহ্যাম্পশায়ারের এই ফাস্ট বোলার কখনোই টেস্ট খেলার সুযোগ পাননি। তবে, ১৫৬ ম্যাচে নেওয়া ৪৯৭ উইকেট তাঁর সামর্থের পক্ষে রায় দেয়।
নটিংহ্যাম্পশায়ারের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান (ইংল্যান্ডের হয়ে তিন টেস্ট খেলা) আবার ছিলেন মরডেকাই শেরউইন। বলা হয়, এই ‘শেরউইন’ ও ‘শাকলক’ নামদ্বয় থেকেই ‘শার্লক’ মানে শার্লক হোমস নামের অমর চরিত্রটি সৃষ্টি করেছিলেন স্যার আর্থার কোনান ডয়েল।
এখানেই শেষ নয়। ডার্বিশায়ারের বাঁ-হাতি পেসার ছিলেন উইলিয়াম মাইক্রফট – সেখান থেকে মাইক্রফট হোমসের নামটা নিয়েছিলেন ডয়েল। এই দুই হোমস ও আর কোনান ডয়েল – দু’জনই ইতিহাসের পাতায় এখন।
কিন্তু, ব্যাপার হল – নামকরণে কেন ক্রিকেটারদেরকেই বেছে নিয়েছিলেন কোনান ডয়েল? হিসাবটা খুবই পরিস্কার। কোনান ডয়েল নিজেও যে ক্রিকেটারই ছিলেন।
তবে, কোনান ডয়েলের ক্রিকেট প্রতিভার কথা খুব লোকই জানেন। বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে টানা আট বছর (১৮৯৯-১৯০৭) পেশাদার ক্রিকেটে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন এই স্কটিশ।
যদিও ক্রিকেটার হিসেবে বেশ একটা নাম-ডাক ছিল না শার্লক হোমসের স্রষ্টার। মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে গোটা ক্যারিয়ারের পেয়েছিলেন মাত্র একটি উইকেট। কিন্তু সেই উইকেটের মূল্য, ক্রিকেটের খোঁজ-খবর রাখেন যারা কেবল তারাই বুঝতে পারবেন!
ঘটনাটা ঘটে সেই ১৯০২ সালে। ক্রিস্টাল প্যালেস পার্কে লন্ডন কাউন্টির হয়ে ব্যাট করছিলেন ডব্লিউ জি গ্রেস। তখন ১১০ রানে অপরাজিত ছিলেন। বোলিং প্রান্তে তখন কোনান ডয়েল। সাধারণ একটা লং হপে বোলারের ক্যাচ তুলে দিলেন। ব্যস! ডয়েল পেয়ে গেলেন তাঁর একমাত্র প্রথম শ্রেনির উইকেট। একমাত্র উইকেট – সেটাও আবার ডব্লিউ জি গ্রেসের – এমন রহস্যেও সমাধান করতে না আবার শার্লক হোমসেরই ডাক পড়ে! এই উইকেট নিয়ে কোনান ডয়েল বিরাট এক কবিতাও লেখেন।
সেই ম্যাচেই ক্যারিয়ার সেরা ৪৩ রান করেছিলেন ডয়েল। সব মিলিয়ে ১০ ম্যাচে ১৯.২৫ গড়ে রান ছিল ২৩১। জোরে ব্যাট চালানো আর ফ্লাইটে ব্যাটসম্যানদের বোকা বানানো; ডয়েলের ক্রিকেটীয় যোগ্যতার দৌড় ছিল এটুকুই। শার্লক হোমস প্রথম প্রকাশিত (১৮৮৭) হবারও প্রায় এক যুগ পর প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে অভিষেক হয় কোনান ডয়েলের।
১৮৯৯ সালে এমসিসি’র হয়ে ক্যামব্রিজশায়ারের বিপক্ষে ৬১ রান দিয়ে নিয়েছিলেন; তাও আবার লর্ডসে। যদিও পেশাদার ম্যাচের স্বীকৃতি পায়নি এই লড়াই। দু’বছর পর একই ভেন্যুতে ওপেন করতে নেমে শেষ পর্যন্ত ব্যাট কওে ৩২ রানে অপরাজিতও ছিলেন। লিস্টারশায়ারের সেই দলটার বোলিং আক্রমণ নাকি বেশ শক্ত ছিল।
বলা হয়ে শার্লক হোমসের নামটি আসলে নটিংহ্যামশায়ারের এক ক্রিকেটারের নাম থেকে নেয়া। আর তার বড় ভাই মাইক্রফট হোমসের নামও এসেছে ডার্বিশায়ারের এক ক্রিকেটারের নাম থেকেই।
পরবর্তীতে কোনান ডয়েল ক্রিকেট নিয়ে কিছু লেখালেখিও করেন। ১৯২৫ সালের ২৭ জুলাই টাইমস পত্রিকায় তার একটা লেখা বেড় হয় – ‘দ্য গ্রেটেস্ট ক্রিকেটার্স – অ্যান অ্যাপ্রেসিয়েশন অব ডক্টর গ্রেস’।
অপেশাদার ক্রিকেট দল দ্যা অথার একাদশের হয়েও খেলেছেন ডয়েল। ক্রিকেট ছাড়াও ফুটবল ভালবাসতেন তিনি। পোর্টসমাউথ অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল ক্লাবের হয়ে খেলেছেন বেশ কিছুদিন।
সবচেয়ে ভাল খেলতেন গলফ। ১৯১০ সালে ক্রোব্রো বেকন গলফ ক্লাবের অধিনায়কও ছিলেন তিনি। জীবনের শেষ অবধি গলফ খেলা চালিয়ে গেছেন তিনি!
কোনানের সাহিত্যেও ঠাই হয়েছিল ক্রিকেটের। ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অফ থ্রি স্টুডেন্টস’ ও ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব প্রায়োরি স্কুল’-এই দু’টি ছোট গল্পে ক্রিকেটের উল্লেখ আছে। শার্লক হোমসের গল্পগুলোতেও আছে ক্রিকেট।
‘দ্য ফিল্ড বাজার’ নামের একটা প্যাসিচ তিনি লেখেন শার্লক হোমসকে নিয়ে। সেখানে সকালের নাস্তার টেবিলে শার্লক আর ওয়াটসনকে ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়। কোনানের ১৯২২ সালে খেলা ছোট গল্প ‘হাও ওয়াটসন লার্নড দ্য ট্রিকস’-এও ক্রিকেট আছে। সেখানে হোমস বলে দেন তিনি সারে কাউন্টি দলের সমর্থক।
ক্রিকেটের প্রতি টানটা কোনানের শৈশব থেকেই ছিল। ১৪ বছর বয়স থেকেই স্কুলের মূল ক্রিকেট দলে আসার চেষ্টা করেছিলেন। পারেননি। কখনো দ্বিতীয়, কখনো তৃতীয় দলে খেলেছেন – কে জানে ক্রিকেটে পেরে গেলে হয়তো বিশ্বের অন্যতম সেরা সাহিত্যিককে আর পাওয়াই যেত না!