স্বপ্ন যেন প্রতিবারই খুব কাছ থেকে ভেঙে যাচ্ছে। হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে, তবু কেন জানি ছোঁয়া যায় না। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পরবর্তী সময় থেকে টি-টোয়েন্টিতে এটাই পাকিস্তানের নিত্যদিনের গল্প। দল হিসেবে, একটা ইউনিট হিসেবে দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলোতে বেশ ধারাবাহিক পাকিস্তান দল। তবে বড় টুর্নামেন্টের শেষভাগটায় অংকের হিসেবটায় দেখা দেয় গড়মিল।
গেল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শুরুটা কল্পনাতীত। ভারতের মত দলকে আইসিসির বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে হারানোর তেমন কোন সুখস্মৃতি নেই পাকিস্তানের। সে আক্ষেপটা ঘুচানোর মধ্য দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল পাকিস্তান। সবাই ধরেই নিয়েছিল কোনরকম ভুলচুক না করলে পাকিস্তানই হতে চলেছে চ্যাম্পিয়ন। তবে না, তা আর হল না। সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে বসে পাকিস্তান।
সে বিশ্বকাপ দলে অবশ্য খেলেছিলে শোয়েব মালিক। অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারের অবসরে যাওয়ার গুঞ্জন ডালপালা মেলতে শুরু করে ঠিক তখন থেকেই। তবে ডালপালা বেশি দূর ছড়াবার আগেই তিনি নিজেই তা ছেটে ফেলেন। তাঁর ভাষ্যমতে তিনি ম্যাচের খেলার জন্যে এখনও শারীরিকভাবে বেশ সক্ষম। তাই তাঁর অবসরে যাবার কোন পরিকল্পনা নেই। তেমন কোন পরিকল্পনা নেই বলেই হয়ত তিনি প্রত্যাশা করেছিলেন পাকিস্তানের হয়ে এবারের এশিয়া কাপটাও খেলার সুযোগটা পাবেন মালিক।
তবে সে সুযোগটি তিনি পাননি। আর শেষমেশ ফাইনালে উঠেও পাকিস্তান পায়নি শিরোপা জয়ের স্বাদ। ঠিক এরপর শোয়েব মালিক তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ করেন নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে। তিনি লেখেন, ‘কবে আমরা বন্ধুত্ব, পছন্দ-পছন্দ সংস্কৃতি থেকে বেড়িয়ে আসব। আল্লাহ সবসময় সৎ-দের সহয়তা করেন।’
শোয়েব মালিকের করা এই টুইট থেকে বোঝা যায় যে পাকিস্তান দলের ভেতর এমন সংস্কৃতি রয়েছে, যেখানে পারফরমেন্সের চাইতে প্রাধান্য পায় কোন ব্যক্তি পছন্দ। অবশ্য ইঙ্গিতটা খানিক স্পষ্টই বলা চলে। শোয়েব মালিক খুব সম্ভবত আঙুল তুলছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি রমিজ রাজার দিকে। এর আগেও এই দু’জনের মাঝে টুইট আদান-প্রদান হয়েছে। সেখানে এই দুইজনের বৈরী সম্পর্কের আভাসটা স্পষ্ট।
এবারের এশিয়া কাপে অন্তত শোয়েব মালিকের অভিজ্ঞতা বেশ কাজে আসতে পারত পাকিস্তানের। দীর্ঘ এক ক্যারিয়ারে শোয়েব ১২৪টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। সেই সাথে ২৪৩৫ রান করেছেন ৩১ এর বেশি গড়ে। তাছাড়া তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ৭১টি অর্ধশতকও রয়েছে। বল হাতেও তিনি বেশ কার্য্যকর। তাঁর মত একজন অলরাউন্ডার দলের ভারসাম্য বজায় রাখার পাশাপাশি অন্তত অভিজ্ঞতার বিস্তার ঘটাতে পারত।
তবে সুযোগটি পাননি তিনি। তাঁর অভিযোগের আঙুল বোর্ড সভাপতির দিকেই। কেননা বছর দুই আগে রমিজ রাজাই পরামর্শ দিয়েছিলেন শোয়েব মালিক ও মোহাম্মদ হাফিজের সম্মানের সাথে অবসর গ্রহণ করে ফেলা উচিৎ। তবে শোয়েব আরও বেশ কিছু দিন খেলে যাওয়ার পক্ষে ছিলেন। তখন তিনি পাল্টা টুইটে রমিজ রাজাকেও অবসরের পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেখান থেকেই মূলত সম্পর্কের অবনতি।
রমিজ রাজা অবশ্য শোয়েবকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক থাকাকালীন অবস্থায় অবসরের মত কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। তাছাড়া পাকিস্তানকে ক্রিকেট দুনিয়ার সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা থেকে নিজেকে কখনোই দূরে রাখতে পারবেন না। তবে সে যাই হোক, সত্যিকার অর্থেই যদি শোয়েব মালিকের অভিযোগের ভিত্তি থাকে তবে তা কোন ভাবেই পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্যে মঙ্গল বয়ে নিয়ে আসবে না।