শহিদুল ইসলাম, হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা থেকে সম্ভাবনার দুয়ারে

নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে শহিদুল হারিয়ে যাবেন, এমন শঙ্কা ছিল প্রবল। কিন্তু সেই শঙ্কা কেটে যায় গত বছরের মার্চের ২৮ তারিখে। নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরে এসেই ছন্দ দেখাতে শুরু করেন এ পেসার। তার ধারাবাহিকতায় বিপিএলের মঞ্চেও দেখালেন দাপট। তবে এবার শুধু বলে নয়। দুই উইকেটের পাশাপাশি ব্যাট হাতে খেললেন ৩১ বলে ৪০ রানের ইনিংস।

একটু ফ্ল্যাশব্যাকে ফেরা যাক। ২০২২ বিপিএল ফাইনাল। প্রথম বারের মতো শিরোপা জয়ের পথে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে শেষ ওভারে ফরচুন বরিশালের প্রয়োজন ১০ রান। এমন সমীকরণ টপকে যাওয়ার দৃশ্য তখন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে হরহামেশাই দেখা মেলে।

তবে, সেদিন বরিশালের শিরোপা জয়ের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন পেসার শহিদুল ইসলাম। ফাইনালের স্নায়ুচাপ জয় করে ওই ওভারে ৮ রান দিয়ে কুমিল্লাকে এনে দেন অবিস্মরণীয় জয়। এর ঠিক কয়েক মাস পরের গল্প।

কুমিল্লার তৃতীয় বিপিএল শিরোপা জয়ের অন্যতম সারথি সেই শহিদুল ইসলামের বাইশ গজের জীবনটাই থেমে যেতে বসলো। ডোপ টেস্টে পজিটিভ হয়ে ১০ মাসের জন্য নিষিদ্ধ হলেন তিনি। তার শরীরে পাওয়া গিয়েছিল ‘ক্লোমিফিন’। যেটা তিনি ব্যক্তিগত চিকিৎসকের পরামর্শে খেতেন। কিন্তু ছোট একটা ভুলের কারণেই ডোপ টেস্টে পজিটিভ হয়ে যান শহিদুল।

আইসিসির অ্যান্টি ডোপিং কোডের অনুচ্ছেদ নম্বর ২.১ ভঙ্গ করে এ শাস্তি পান তিনি। কিন্তু একটু সচেতন হয়ে আগে থেকে আইসিসিকে অবগত করলেই মিলতো মুক্তি। কিন্তু ছোট্ট ওই ভুলে কারণেই ১০ মাস ক্রিকেটের বাইরে চলে যেতে হয় এ পেসারকে। এ সময়কালে তিনি হারিয়ে যাবেন, এমন শঙ্কা ছিল প্রবল।

কিন্তু, সেই শঙ্কা কেটে যায় গত বছরের মার্চের ২৮ তারিখে। নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরে এসেই ছন্দ দেখাতে শুরু করেন এ পেসার। তার ধারাবাহিকতায় বিপিএলের মঞ্চেও দেখালেন দাপট। তবে এবার শুধু বলে নয়। দুই উইকেটের পাশাপাশি ব্যাট হাতে খেললেন ৩১ বলে ৪০ রানের ইনিংস।

খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে মোটেই সুবিধা করতে পারেনি চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। ৬৪ রানেই হারিয়ে ফেলে ৬ উইকেট। ১০০ রানের আগেই যখন দল গুঁটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় তখন ব্যাটিংয়ে আসেন শহিদুল ইসলাম। এমনিতে বোলার হলেও ব্যাটিংটা টুকটাক করতে পারেন। তবে এ দিন যেন ব্যাট হাতেই দলের বিপদের দিনে হয়ে উঠলেন একমাত্র আশার প্রদীপ।

শহিদুলের ব্যাটে চট্টগ্রাম ১০০ পেরিয়ে ১২১ রানের সংগ্রহ পায়। যার নেপথ্যে ছিল শহিদুলের ৩১ বলে ৪০ রানের ইনিংস। চট্টগ্রাম ঐ পুঁজি নিয়ে দিনশেষে জিততে পারেনি বটে। তবে বল হাতেও যেন জয়ের পথে চোখ রেখেছিলেন শহিদুল।

ইনিংসের চতুর্থ ওভারে এনামুলকে আউট করে লড়াইয়ের আভাস দেন তিনি। এরপর মাহমুদুল হাসান জয়কে ফিরিয়েছেন এ পেসার। তাতে ২৬ রানে দুই উইকেট শিকার করেন তিনি। যদিও দলের পরাজয়টা আর এড়াতে পারেননি।

ক্রিকেটে ফিরে আসার গল্পের সংখ্যা নগণ্য নয়। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটে শহিদুলের পায়ের তলার মাটি শক্ত হয়নি কিনা বলেই তাঁর ফিরে আসার গল্পটা বিস্ময়ের সৃষ্টি করে বটে। ১০ মাস ক্রিকেটের বাইরে থাকার পরও যে এভাবে প্রত্যাবর্তন ঘটানো যায়, সেই অনুকরণীয় তালিকায় অন্যতম এক চরিত্র বনে গেলেন শহিদুল ইসলাম। এমন লড়াকু মানসিকতায় টাইগার জার্সি গায়েও নিশ্চয়ই এগিয়ে যেতে চাইবেন এ পেসার।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...