ছয় চারে চব্বিশ

ছয় বলে ছয় চারের তালিকাটা সবার ঠিক পরিচিত নয়। তবে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যারা এই কীর্তি গড়েছেন তাঁদের প্রত্যেকেই খুব প্রতিষ্ঠিত ও পরিচিত ক্রিকেটার।

ক্রিকেট মানেই রেকর্ড ভাঙা গড়ার খেলা। তবে এমনও কিছু রেকর্ড আছে যা অনেক বড় বড় তারকা ক্রিকেটারই করতে পারেননি।

ছয় বলে ছয় ছক্কার মার ক্রিকেটে বেশ কয়েকবার দেখা গেছে। গ্যারি সোবার্স, রবি শাস্ত্রী, যুবরাজ সিং কিংবা হার্শেল গিবস – তালিকাটা অনেক লম্বা। এই নামগুলো আজকাল সবারই মুখস্থ। ইদানিং নিত্য নতুন অনেকের নামই যোগ হচ্ছে।

তবে, ছয় বলে ছয় চারের তালিকাটা সবার ঠিক পরিচিত নয়। তবে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যারা এই কীর্তি গড়েছেন তাঁদের প্রত্যেকেই খুব প্রতিষ্ঠিত ও পরিচিত ক্রিকেটার।

  • সন্দীপ পাতিল (ভারত)

মুম্বাইয়ের এই ক্রিকেটার ১৯৮০ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে যাত্রা শুরু করেন ৷ তার সময়ে তিনি ভারতীয় ক্রিকেটে অনেক অবদান রেখেছেন। ২৯ টেস্ট এবং ৪৫টি ওয়ানডে খেলেছেন সন্দীপ। টেস্টে চার সেঞ্চুরির সাথে তিন হাজারের বেশি রান সংগ্রহ করেন তিনি।

তিনি প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এক ওভারে ছয় বলে ছয়টি চারের মার মারেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে এই কীর্তি গড়েন তিনি। ইংল্যান্ডের করা প্রথম ইনিংসে ৪২৫ রানের জবাবে ১৭৩ রানে ছয় উইকেট হারায় ভার‍ত! সেখানে সন্দীপ পাতিল ১২৯ রানের ইনিংস খেলার পথে ছয় বলে ছয়টি চার মারেন।

যেই ওভারে তিনি ছয়টি বাউন্ডারি মারেন সেই ওভারে একটি নো বল এবং একটি ডট বল হয়। নো বলে চার মারাতে তিনি এক ওভারে ছয় চারের রেকর্ড গড়েন। তবে টানা ছয়টি চার মারতে পারেননি তিনি।

  • ক্রিস গেইল

ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় এন্টারটেইনারদের একজন হলেন ক্রিস গেইল। নিজের নামের পাশে বেশ বড় বড় রেকর্ড করেছেন তিনি। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট টি-টোয়েন্টির ফেরিওয়ালা বলা হয় তাকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ১০৩ টেস্টে সাত হাজারেরও বেশি রান করেছেন তিনি ৪২-এর ওপর গড়ে।

স্বঘোষিত এই ইউনিভার্স বস ২০০৪ সালে ইংলিশদের বিপক্ষে টেস্টে এক ওভারে ছয় বলে ছয়টি চার মারেন। ইংলিশ বোলার ম্যাথিউ হগার্ডের করা ওভারের ছয় বলের ছয়টিতেই চার মারেন তিনি। প্রথমে ব্যাট করে ৪৭০ রান করে ইংলিশরা, স্টিভ হার্মিসনের ছয় উইকেট শিকারে ধসে যায় ক্যারিবিয়ানদের ইনিংস।

ফলো অনে দ্বিতীয় বার ব্যাট করতে নেমে ম্যাথিউ হগার্ডের করা এক ওভারে ছয়টি চার মারেন ক্রিস গেইল। পুল শট কিংবা ক্র‍্যাকিং কাট বোলিং উইকেটে হগার্ডকে ছয় বলে ছয় চার হাঁকিয়ে রেকর্ড গড়েন তিনি।

  • আজিঙ্কা রাহানে

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ছয় বলে ছয় চার মারার কীর্তি গড়েন আজিঙ্কা রাহানে। ২০১২ সালে আইপিএলে তিনি ছয় বলে ছয় বাউন্ডারির মারার রেকর্ড গড়েন রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে শ্রীনাথ অরবিন্দের বলে এই কীর্তি গড়েন তিনি।

ম্যাচের ১৩ তম ওভারে অরবিন্দের করা ওভারের প্রতি বলেই বাউন্ডারি হাঁকান আজিঙ্কা রাহানে। সেই ম্যাচে অপরাজিত ১০৩ রান করেন এবং ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন তিনি।

  • তিলকারত্নে দিলশান

বেশ সাজানো একটি ক্রিকেট ক্যারিয়ার ছিল সাবেক লঙ্কান ওপেনার তিলকারত্নে দিলশানের। তার নামের পাশে বেশ ভালো ভালো ইনিংস রেখে যেতে পেরেছিলেন তিনি। তার নিজস্ব বেশ কিছু শট ও তার নামে পাশে যোগ করেছিলেন। ১৭ বছর শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটে তিনি সার্ভিস দিয়েছেন। ৩৩০ ওয়ানডে ১০২৯০ রান ও ৮৭টি টেস্টে ৬০০০ রান ক্যারিয়ার জুড়ে করেছেন এই লঙ্কান গ্রেট।

সাবেক এই লঙ্কান ওপেনার ২০১৫ বিশ্বকাপে এক অনন্য রেকর্ড গড়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে মিচেল জনসনকে ছয় বলে ছয়টি বাউন্ডারি হাঁকান। বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এই কীর্তি গড়েন তিনি। লাহিরু থিরিমান্নের উইকেটে পাঁচ ওভার শেষে লঙ্কানদের স্কোর ছিল এক উইকেটে ২২ রান।

ষষ্ঠ ওভারে বোলিংয়ে আসেন মিশেল জনসন। প্রথম দুই বলেই ড্রাইভে চার আদায় করে নেন দিলশান। পরের দুই বলেই পুল করে আরো দুই বাউন্ডারি! পরের দুই বলেও দুই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৬ বলে ৬ টি চারের মার মারেন দিলশান। তার করা ৬২ রানের পরেও সেই ম্যাচে লঙ্কানরা হারে ৬৪ রানে। দিলশান বাদে আর কেউই এই কীর্তি বিশ্বকাপের মঞ্চে করতে পারেনি।

  • রামনরেশ সারওয়ান

ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ব্যাটসম্যান ছিলেন মিডল অর্ডারে এক ভরসার নাম। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০০০ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হয় তার। ২০০৯ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে ২৯১ রানের ইনিংস খেলার পর লাইমলাইটে এসেছিলেন তিনি। ইনজুরি জর্জরিত ক্যারিয়ারে ১৮১ ওয়ানডে ম্যাচে তিনি ৫৮০৪ রান করেন। পাওয়ার স্ট্রোক খেলার জন্য বেশ নাম ছিল সারওয়ানের। এক টেস্টে সাবেক ভারতীয় পেসার মুনাফ প্যাটেলকে ছয় বলে ছয় চার হাঁকান এই ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান।

২০০৬ সালে সেন্ট কিটসে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে এক ওভারে ছয়টি বাউন্ডারি মারেন সারওয়ান। মুনাফ প্যাটেলের করা প্রথম বলে অফ সাইডে বাউন্ডারি মারেন তিনি। পরের বলে হুক এবং তৃতীয় বলে কভার ড্রাইভে চার মেরে তিন বলে তিনটি বাউন্ডারি আদায় করেন সারওয়ান। চতুর্থ বলে ইনসাইড এজ হয়ে সৌভাগ্যক্রমে বাউন্ডারির দেখা পান তিনি। এরপর পর পর দুই বলে স্কোয়ার কাটে বাউন্ডারি মেরে টানা ছয় বলে ছয় চার হাঁকান তিনি। তবে শেষ বলটি নো বল হয়! এবং প্যাটেলের করা অতিরিক্ত বল থেকে কোনো রান নিতে পারেননি সারওয়ান।

  • পৃথ্বী শ

সর্বশেষ এই তালিকায় নাম লেখান দিল্লি ক্যাপিটালসের ওপেনার পৃথ্বী শ। ২০২১-এর ২৯ এপ্রিল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে শিভাম মাভির করা প্রথম ওভারের ছয় বলে ছয় চার মারেন পৃথ্বী শ। ১৫৫ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে ইনিংসে প্রথম ওভারের প্রথম বলে ওয়াইড দেন মাভি! পরের ছয় লিগ্যাল বলের ছয় টিতেই বাউন্ডারি হাঁকান পৃথ্বী শ। আইপিএল ইতিহাসের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান ও রান তাড়ায় প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এই কীর্তি গড়েন তিনি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...