যেকোন ধরণের খেলাধুলায় একজন অধিনায়কের উপর থাকে গুরুদায়িত্ব। পুরো দলকে পরিচালনা করা, দলের প্রয়োজন মাফিক সিধান্ত নেওয়া। টসে অংশগ্রহণ করা থেকে শুরু করে আরো নানানরকমের দায়িত্ব পালন করতে হয় একজন অধিনায়ককে। তাছাড়া একজন অধিনায়কের একটি সিদ্ধান্ত যেমন শিরোপা জেতাতে পারে ঠিক তেমনি হারিয়ে দিতে পারে একটি সহজ ম্যাচও।
ক্রিকেটে অধিনায়কে দায়িত্ব খানিক বেশিই। কেননা তিনি ঠিক করে দেন কোন খেলোয়াড়দের নিয়ে একাদশ সাজানো হবে। কে কখন বোলিং করবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী বোলার ব্যাটারের ফরম্যাশনে পরিবর্তন আনার দায়িত্বও অনেকসময় অধিনায়কদের পালন করতে হয়।
ক্রিকেটের ইতিহাসে অনেক বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কদের অবদানের ঘটনা যেমন রয়েছে ঠিক তেমনি মুদ্রা উল্টো পিঠেরও দেখা মিলেছে বহুবার। মহেন্দ্র সিং ধোনি, রিকি পন্টিং, মাশরাফি বিন মর্তুজা, কেইন উইলিয়ামসনদের মতো অধিনায়কেরা প্রশংসা কুড়িয়েছেন বিশ্বব্যাপী। কিন্তু এমন অনেক অধিনায়ক রয়েছেন যারা কিনা তাঁদের অধিয়ায়কত্বের পদ থেকে সড়ে দাঁড়িয়েছিলেন বিতর্কের মুখে। আজকের তালিকায় থাকছে এমন পাঁচটি ঘটনার সারসংক্ষেপ।
- টিম পেইন (অস্ট্রেলিয়া) – ২০২১
অ্যাশেজ আসন্ন। তবে হঠাৎ করেই সপ্তাহ দু’য়েক আগে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট অধিনায়ক টিম পেইন সড়ে দাঁড়িয়েছেন তাঁর অধিনায়কের পদ থেকে। অ্যাশেজের আগেই তাঁর নামে সেক্সুয়াল বার্তা প্রদানে একটি নেক্কারজনক ঘটনা সামনে এনেছেন তাঁরই সাবেক এক নারী সহকর্মী। এমতবস্থায় তিনি পড়েছেন বিপাকে। যদিও তাঁকে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ড ছাড়পত্র দিয়েছে যে তিনি অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের নীতিমালা বর্হির্ভুত কোন কাজ করেননি।
কিন্তু জনসম্মুখে তাঁর সেই বার্তালাপ প্রচার পাওয়ায় বিব্রতকর এক পরিস্থিতির সম্মুখে তিনি টেস্ট অধিনায়কত্ব তো বটেই খোদ টেস্ট থেকেও সড়ে দাঁড়াবার সিধান্ত নিয়ছেন পেইন। তাতে করে নেতিবাচক এক ইতিহাসের অংশ বনে গেলেন অস্ট্রেলিয়ান টিম পেইন।
- স্টিভ স্মিথ (অস্ট্রেলিয়া) – ২০১৮
অস্ট্রেলিয়া তো বটেই পুরো ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম এক নেতিবাচক ঘটনার জন্ম দিয়ে ২০১৮ সালে ক্রিকেট থেকে বছর খানেকের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান সাবেক অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বল টেম্পারিংয়ের মতো কাজে লিপ্ত ছিল গোটা অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দল।
টিভি ফুটেজে তাঁদের এমন বল টেম্পারিং ঘটনা ধরা পড়ে এবং তা পরবর্তীতে মূল ধারার গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তৎক্ষণাত পদত্যাগ করেন তৎকালীন টেস্টের সহ-অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার। তারপর ঘটনা বেগতিক হতে শুরু করলে এবং সত্যতা প্রমাণপূর্বক অধিনায়কত্বের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় স্টিভেন স্মিথকে।
- স্টিভ স্মিথ (রাজস্থান রয়্যালস) – ২০১৮
টেস্টে বল টেম্পারিং এর পর যখন স্টিভ স্মিথকে বরখাস্ত করা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলের অধিনায়কত্ব থেকে। তারপর তিনি স্বেচ্ছায় ফ্রাঞ্চাইজি লিগগুলোর অধিনায়কত্ব থেকেও পদত্যাগ করেন। ২০১৮ সালের আইপিএল আসরেও তাঁর খেলা নিয়ে সৃষ্টি হয় ধোঁয়াসার। তাছাড়া তাঁর জায়গায় রাজস্থান রয়েলসের অধিনায়কের পদে স্থলাভিষিক্ত হন ভারতীয় ব্যাটার আজিঙ্কা রাহানে।
রাজস্থান রয়েলস কর্তৃপক্ষও তাঁর এই সিধান্তে দ্বিমত পোষণতো করেইনি বরং তাঁরা স্টিভ স্মিথের নেতৃত্ব ক্রিকেটীয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা কাজের নিন্দা করে স্টিভের স্বপক্ষে কোন আলাপচারিতা চালায়নি। তাছাড়া স্টিভও মনে করেছিলেন যে তাঁর দলে অন্তর্ভুক্তি দলের সার্বিক চিন্তাধারায় ব্যাঘাত ঘটাতে এবং তা কারণে দলের পারফর্মেন্সেও প্রভাব পড়তে পারে বিধায় তিনি সড়ে দাড়িয়েছিলেন তাঁর পদ থেকে।
- রশিদ খান (আফগানিস্তান) – ২০২১
দেশ নিয়ে সৃষ্টি হওয়া ধুম্রজালের মাঝে বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা লেগ স্পিন বোলার রশিদ খান পদত্যাগ করেছিলেন আফগানিস্তান জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব থেকে। তাঁর দেশ আফগানিস্তানে সরকার রদবদলে বদল আসে ক্রিকেট বোর্ড পরিচালনায়। মূলত রশিদকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলের অধিনায়ক করে পাঠানো হয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
কিন্তু দল নিয়ে রশিদের ভিন্ন মত উপেক্ষা করে বোর্ড ভিন্ন দল ঘোষণা করে। এতে মনক্ষুন্ন হয়ে রশিদ সড়ে দাঁড়ান অধিনায়কত্ব থেকে। পরবর্তীতে তাঁর পরিবর্তে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পান আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের আরেক অভিজ্ঞ খেলোয়াড় মোহাম্মদ নবি। দল নিয়ে বিতর্কই রশিদের পদত্যাগের কারণ।
- রশিদ লতিফ (পাকিস্তান) – ২০০৩
২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের আগে পাকিস্তান দলের অধিনায়কের পদ থেকে পদত্যাগ করেন রশিদ লতিফ। তৎকালীন সময়ে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সাথে মনোমালিন্যকে কেন্দ্র করে লতিফ এমন সিধান্ত নিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
সে সময় আইসিসির কাছে ম্যাচ-ফিক্সিং সংক্রান্ত একটি চিঠি লিখে বিতর্কের সূত্রপাত ঘটান পাকিস্তানের উইকেট রক্ষক ব্যাটার রশিদ লতিফ। তাঁর জেড় ধরেই বোর্ডের সাথে তাঁর সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং নির্বাচক কমিটির সাথেও তাঁর পছন্দের অমিলের সৃষ্টি হয় দল নিয়ে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অধিনায়কের পদ ছেড়ে দেওয়াই শ্রেয় মনে করেছিলেন রশিদ লতিফ।