আপনি তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান বা মেহেদী হাসানকে জিজ্ঞেস করতে পারেন একটা মানুষের পরিচয়। তারা সমস্বরে বলবেন, ‘আমাদের কোচ। সোহেল স্যার।’ আবার তাইজুল বেশ গর্বের সাথে বলেন, ‘আমরা ওনার হাত ধরেই উঠে এসেছি।’ তাইজুল বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছেন। তবে এখনো তাইজুলদের আস্থাটা একটুও কমেনি। এখনো সব সমস্যার সমাধান সোহেল ইসলামই।
তাইজুল ইসলাম অবশ্য এই মুহূর্তে খুব বেশি সমস্যায় নেই। তবুও ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট সিরিজ খেলতে যাবার আগে কাজ করেছেন প্রিয় এই কোচের সাথে। হয়তো বিদেশের মাটিতে নিজেকে আরো শাণিত করার জন্যই তাইজুলের এই বিশেষ অনুশীলন।
কেননা ঘরের মাঠে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে তিনি বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণের অন্যতম ভরসা। দেশের মাটিতে এখন তাকে ছাড়া টেস্ট খেলতে নামাটা কল্পনাই করা যায় না। তবে বিদেশের মাটিতে এখনো নিজের সেই জায়গাটা গড়ে তুলতে পারেননি তাইজুল। বিদেশে সাকিব স্বাভাবিক ভাবেই খেলেন। এছাড়া স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে মিরাজও সম্প্রতি ভালো করছেন।
ফলে বিদেশের মাটিতে একাদশে তাঁর জায়গা পাওয়াটা এখনো বেশ কঠিন। এছাড়া দেশের মাটিতে যেখানে তাইজুলের বোলিং গড় ২৮.৭২ সেখানে বিদেশের মাটিতে তাঁর বোলিং গড় ৪৬.৮৬। ঘরের মাঠে ২৫ টেস্ট খেলে তাঁর ঝুলিতে আছে ১২০ উইকেট। অন্যদিকে বিদেশের মাটিতে ১৩ টেস্টে আছে ৩৮ উইকেট।
ফলে দেশের বাইরে ক্যারিয়ারের এই সময়ে তাইজুলের আরো বেশি কার্যকরী হয়ে উঠা জরুরী। সেজন্যই হয়তো তাইজুলদের বেড়ে উঠার কোচ সোহেল ইসলামের শরণাপন্ন হয়েছেন এই স্পিনার। যদিও সোহেল ইসলামের সাথে এই স্পিনারের সম্পর্ক এতটুকুই না।
শুরুটা হয়েছিলো বাংলাদেশের স্পিন কোচ হয়ে ড্যানিয়েল ভেট্টোরি আশার পর থেকে। দুই বার এই সময়ে অ্যাকশন বদলালেন তাইজুল। মাঝে কিছুদিন নিজেকে এ জন্য খুঁঁজেই পাচ্ছিলেন না যেনো। মাঝে অনেকটা ভেট্টরির মতই বোলিং অ্যাকশন নিয়ে কয়েকটা আন্তর্জাতিক ম্যাচও খেললেন। তব তাতে সাফল্য মিলছিল না। তাইজুল যেন নিজেকে হারিয়ে খুঁঁজছিলেন।
সেই সময় তিনি একটা দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলেন। আর সেই দ্বিধাটা ভেঙেছিলেন সবচেয়ে আস্থার, ভরসার গুরু সোহেল ইসলামের কাছে গিয়েই। এরপর আবার নিজের পুরোনো অ্যাকশনে ফিরে গিয়েছেন। আর তাতেই আবার খুঁজে পাওয়া গিয়েছে পুরনো তাইজুলকে।
বাংলাদেশের হয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে খানিকটা নীরবেই নিজের কাজটা করে যাচ্ছেন তিনি। বাংলাদেশের ক্রিকেটে সম্ভবত সবচেয়ে নিভৃত চরিত্র তিনি। তিনি আসেন, বাইশ গজে হাত ঘুরান আর বাংলাদেশকে কাজের কাজটা করে দেন। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে বল হাতে সবচেয়ে পরীক্ষিত, কার্যকর সেনানি।
প্রথমে তাঁকে দেখে আপনার বাংলাদেশের আর দশটা সাধারণ স্পিনারের মতই মনে হবে। তবে এই সাধারণ বৈশিষ্ট্যই তাঁকে অনন্য করেছে। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে টানা বোলিং করে গিয়েছেন। স্পিনার হিসেবে তিনিই হয়ে উঠেছেন দলের অন্যতম ভরসা। অন্তত ঘরের মাঠে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে তাঁর বিকল্প নেই। টানা এক জায়গায় বোলিং করে, টার্ন আদায় করে নিয়েই তিনি সাফল্য পেয়েছেন। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়েছেন।
এখন শুধু বিদেশের মাটিতেও নিজেকে আরেকবার চেনানোর সময়। ক্যারিয়ারের এই সময়ে এসে তাইজুল ভীষণ পরিপক্ক। আর সেটাই বাইশ গজে ব্যবহার করার সবচেয়ে উত্তম সময়। বিদেশের মাটিতেও তাইজুলের সেনানী হয়ে ওঠাটা তাই শুরু হোক ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকেই।