ভারত বিশ্ব ক্রিকেটকে পরিচয় করে দিয়েছে ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যানদের সাথে। একেবারে ভারতের জন্ম লগ্নের সময়কার কিংবদন্তি বিজয় হাজারে থেকে সুনীল গাভাস্কার,শচীন, সৌরভ হয়ে আজকের বিরাট কোহলিরা ভারতের মাটিতেই তৈরি। দেশটির ঘরোয়া ক্রিকেট মূলত রঞ্জি ট্রফি যেন ব্যাটসম্যান তৈরির কারখানা।
এখানে অনেক ব্যাটসম্যানই আসেন তবে তাঁদের অনেকেই দীর্ঘসময় টিকে থাকতে পারেন না। কেননা ব্যাটসম্যানদের পাশাপাশি এই টুর্নামেন্টে ভালো মানে বোলারও অনেক। ফলে এখানে টিকে থাকতে হলে ভালো ব্যাটিং টেকনিক থাকা খুব জরুরি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ক্ষেত্রেও ভালো টেকনিক একজন ব্যাটসম্যানকে অনেক এগিয়ে রাখে।
বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে রান পেতে হলে টেকনিক্যালি শার্প হওয়া খুবই জরুরি। এটি একজন ব্যাটসম্যানকে নিয়ে যায় সেরাদের কাতারে। তবে ভারতের ক্রিকেটে তাঁর ব্যতিক্রম উদাহরণও আছে। খুব টেকনিক্যালি দক্ষ হয়েও তাঁরা ভারতের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে খুব বেশি রান করতে পারেননি। এমনই কিছু ব্যাটসম্যানকে খুঁজে বের করেছে খেলা ৭১।
- আকাশ চোপড়া (৪৩৭ রান)
আকাশ চোপড়াকে মূলত ভাবা হত এশিয়ার বাইরে টেস্ট ক্রিকেটের জন্য। তাঁর অসাধারণ টেকনিক্যালি এবং টেম্পারমেন্ট দিয়ে তিনি লম্বা সময় ক্রিজে থাকতে পারতেন এই ওপেনার। ফলে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের জন্য কাজটা সহজ হয়ে যেত। ২০০৩-০৪ সালের অস্ট্রেলিয়া ট্যুরে তিনি তাঁর প্রমাণ ও দিয়েছিলেন।
তবে সে বছরই ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই টেস্টে চার ইনিংস ব্যাট করে একবারও দুই অংকের স্কোর করতে পারেননি। ভারতের হয়ে মাত্র ১০ টেস্ট খেলা এই ব্যাটসম্যান আর কখনো জাতীয় দলে সুযোগই পাননি। মাত্র ৪৩৭ আন্তর্জাতিক রানেই থেমে যায় তাঁর ক্যারিয়ার। অথচ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১০ হাজারেরও বেশি রানের মালিক এই ক্রিকেটার।
- শিব সুন্দর দাস (১৩২৬ রান)
একটা সময় ধারণা করা হতো তিনিই টেস্টে ভারতের হয়ে দীর্ঘদিন ওপেন করবেন। শিব সুন্দরের অসাধারণ পায়ের কাজ এবং অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল সুন্দর ভাবে ছেড়ে দেয়ার জন্যই এমন ধারনা করা হতো। ২০০০ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হওয়ার পর টানা দুই বছর নিয়মিত ভারতের হয়ে ওপেন করেন তিনি।
তবে, ২০০২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজে একটি হাফ-সেঞ্চুরিও করতে পারেননি তিনি। ফলে ২৩ ম্যাচ খেলে মাত্র ১৩২৬ রানেই থেমে যায় তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। এই ওপেনারেরও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আছে ১০ হাজারের বেশি রান।
- ওয়াসিম জাফর (১৯৪৪ রান)
১২ হাজারেরও বেশি রান করে এই মুহূর্তে রঞ্জি ট্রফির সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এই প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান। তাছাড়াও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর রান সংখ্যা ১৯৪১০। তবে ওয়াসিম জাফরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের পরিসমাপ্তি ঘটে মাত্র ১৯৪৪ রানেই। ২০০০ সালে টেস্ট অভিষেক হলেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটি বাজে সিরিজ কাটানোর পর দল থেকে বাদ পড়েন তিনি।
- সঞ্জয় মাঞ্জরেকার (২০৪৩ রান)
এই মুহুর্তে জনপ্রিয় কমেন্টেটর ব্যাটসম্যান হিসেবেও ছিলেন ভীষণ টেকনিক্যাল। অনেকে এও ধারণা করতেন যে, তাঁর ট্যাকনিক সুনীল গাভাস্কারের সমমানের ছিল। তাঁর বাবা বিজয় মাঞ্জারেকারও ছিলেন কিংবদন্তি ক্রিকেটার।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে আলোড়ন তুললেও পরে আর সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি এই ব্যাটসম্যান। ফলে মাত্র ৩৭ টেস্ট খেলে ২০৪৩ রানেই থেমে যায় তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনিও ১০ হাজার রানের মালিক।
- মুরালি বিজয় (৩৯৮২ রান)
গৌতম গম্ভীরের জায়গায় ২০০৮ সালে টেস্ট অভিষেক হয় মুরলি বিজয়ের। সেই সময় শেওয়াগ ও গম্ভীর ভারতের নিয়মিত ওপেনার হওয়ায় অনেকটা সময় তাঁকে অপেক্ষা করতে হয় দলে জায়গা পাওয়ার জন্য।
তবে সুযোগ পেয়ে তা লুফে নিয়েছিলেন এই ওপেনার। তবে ২০১৬ সাল থেকেই রান ক্ষরায় ভুগছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে এসে দল থেকে জায়গা আরান এই ওপেনার। মোট ৬১ টেস্ট খেলে ৩৯৮২ রান করলেও তাঁর ক্যালিবারের একজনের জন্য এটা খুবই কম।