সৌরভ না থাকলে ডাবল সেঞ্চুরিটাই হত না শচীনের

একটা সময়ে অসম্ভব ভাবা হলেও আজকের মারকাটারি ব্যাটিংয়ের যুগে ওয়ানডেতে দ্বি-শতক হাঁকানো মোটেই অবাক করে না। এক রোহিত শর্মারই ওয়ানডেতে ডাবল-সেঞ্চুরি আছে তিনটি। 

তবে, পথটা দেখিয়েছিলেন শচীন টেন্ডুলকারই, ক্রিকেট ঈশ্বরের ব্যাটেই এসেছিল ওয়ানডে ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তিগত ডাবল-সেঞ্চুরি। মজার ব্যাপার হলো, তাঁর এই কীর্তির পেছনে অবদান আছে সৌরভ গাঙ্গুলিরও।

বড় একটা সময় জুড়েই ওয়ানডেতে ডাবল-সেঞ্চুরি অধরা ছিল ব্যাটসম্যানদের কাছে। বেশ কয়েক বার কাছাকাছি গেলেও ফিরতে হয়েছে খালি হাতেই। হয়তো রেকর্ডটা ক্রিকেট ঈশ্বরের নিজের হাতে লেখা হবে, বিধায় কেউই স্পর্শ করতে পারেননি সেই ম্যাজিক ফিগার।

২০১০ সালে গোয়ালিওরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৪৭ বলে ২৫ চার এবং তিন ছক্কায় অপরাজিত ২০০ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। তবে, শচীনের আগে সাঈদ আনোয়ার এবং সনাথ জয়াসুরিয়া দুবার ডাবল-সেঞ্চুরির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু দুবারই শচীনেরই সতীর্থ সৌরভ গাঙ্গুলির নৈপুণ্যে হতাশায় পুড়তে হয় এই দুই তারকাকে।

প্রথমবার ১৯৯৭ সালে চেন্নাইতে সেবার মুখোমুখি হয়েছিল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত এবং পাকিস্তান। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে রীতিমতো ঝড় বইয়ে দিয়েছিলেন পাকিস্তানের ওপেনার সাঈদ আনোয়ার। সেঞ্চুরি তো বটেই, ভিভ রিচার্ডসের তৎকালীন ওয়ানডে রেকর্ড ১৮৯ রান পেরিয়ে এগোচ্ছিলেন ডাবল-সেঞ্চুরির দিকে।

সবাই ভেবেই নিয়েছিলেন এদিন তাঁকে আউট করতে পারার সাধ্য কোনো বোলারের নেই। কিন্তু ব্যক্তিগত ১৯৪ রানের মাথায় ব্যাটের কানায় লেগে বল উপরে উঠে গেলে পেছন দিকে দৌঁড়ে অনবদ্য এক ক্যাচ লুফে নেন সৌরভ গাঙ্গুলি। তাঁর দুর্দান্ত সেই ক্যাচে বিস্মিত হয়েছিল গোটা স্টেডিয়াম। মজার ব্যাপার হলো, অপরপ্রান্তে বোলার ছিলেন স্বয়ং শচীন নিজে!

পরের ঘটনা তিন বছর বাদে শারজাতে। এবারে হতভাগ্য ব্যাটসম্যানের নাম সনাথ জয়াসুরিয়া! সেদিন ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের শুরু থেকেই স্বভাবসুলভ মারকুটে ব্যাটিং শুরু করেন মাতারা হারিকেন। জহির খান, অজিত আগারকার কিংবা ভেঙ্কটেশ প্রসাদ কেউই থামাতে পারছিলেন না এই লংকান ওপেনারের বিধ্বংসী ব্যাটিং।

এক প্রকার বাধ্য হয়েই জয়াসুরিয়া ব্যক্তিগত ১৮৯ রানে থাকার সময় বোলিংয়ে আসেন পার্টটাইমার সৌরভ। জয়াসুরিয়াকে সামনে এগিয়ে আসতে দেখে খানিকটা বুদ্ধি করে লেগ সাইডের অনেক বাইরে দিয়ে ওয়াইড ডেলিভারি করেন এই তারকা।

ফলস্বরূপ বল মিস করেন জয়াসুরিয়া এবং সোজা স্ট্যাম্পিং। আরো একবার ব্যক্তিগত দ্বি-শতকের রেকর্ড রয়ে যায় ব্যাটারদের ধরাছোঁয়ার বাইরে।  এছাড়াও অবশ্য ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যান চার্লস কভেন্ট্রি ব্যক্তিগত ডাবল-সেঞ্চুরির বেশ কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন।

বাংলাদেশের বিপক্ষে সেদিন ১৯৪ রানে অপরাজিত থাকলেও ওভার ফুরিয়ে যাওয়ায় রেকর্ডটা নিজের করে নিতে পারেননি এই তারকা।  তখনও পর্যন্ত হয়তো কেউ জানতো না কার হাত ধরেই দেখা মিলবে ওয়ানডে ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তিগত ডাবল-সেঞ্চুরির। তবে ভাগ্যবিধাতাই বোধহয় চেয়েছিলেন শচীনই সেটা পাক এবং তাঁর সেই কৃতিত্বের পেছনে বড় অবদান থাকুক বন্ধু সৌরভ গাঙ্গুলির। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link