বার বার কেন অধিনায়ক পরিবর্তন!

দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট ঠিক কি চলছে বাইরে থেকে ক্রিকেট সমর্থকদের বোঝা বেশ কঠিন। কিছুদিন আগেই ফর্মহীনতায় টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিদায় নেন ফাফ ডু প্লেসিস। নিয়মিত অধিনায়ক কুইন্টন ডি কক অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর থেকেই ব্যাট হাতে রানক্ষরায় আছেন!

সবশেষ ইংল্যান্ড, ও পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হার। সবমিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বোর্ডের ভেতরকার অবস্থা যে মোটেও ভালো যাচ্ছে না সেটা আঁচ করাই যায়। এরই মধ্যে ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা (সিএসএ) তাদের তিন ফর্মেটের জন্য নতুন অধিনায়কের নাম ঘোষণা করেছে! টেস্টে ডিন এলগার ও ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে প্রোটিয়াদের নেতৃত্ব দেবেন টেম্বা বাভুমা। এক প্রকার অধিনায়ক পরিবর্তনের হিড়িক লেগেই চলেছে প্রোটিয়া দলে!

কিন্তু বার বার কেন এই অধিনায়ক পরিবর্তন? সবশেষ ২০২০ সালে ফাফ ডু প্লেসির পর অধিনায়কের দায়িত্বভার তুলে দেয়া হয় ডি কককে। অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর থেকে নিজের ব্যাক্তিগত পার্ফরমেন্সের অবস্থাটাও ছিলো বেশ শোচনীয়! দলের অবস্থাও যাচ্ছেতাই। একের পর এক সিরিজ হার, ব্যাটিংয়ে নড়বড়ে অবস্থা। তবে বছর না যেতেই তিন ফর্মেটেই অধিনায়কের পরিবর্তন! কি চলছে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটে?

টেস্ট ক্রিকেটে নতুন দায়িত্ব পাওয়া ডিন এলগার ২০১৭-১৮ সেশনে অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন বেশ ক’ম্যাচ। তারপর তাকে সরিয়ে সেখানে দায়িত্ব দেয়া হলো ডু প্লেসিসকে। এরপর গেলো বছর এই দায়িত্বে আনা হলো ডি কককে! মাত্র এক বছরেই আবারো অধিনায়কের পরিবর্তনে ডি ককের জায়গায় দায়িত্ব দেয়া হলো ডিন এলগারকে।

ওয়ানডেতে অধিনায়কের দায়িত্বে কিছুদিন ছিলেন এইডেন মার্করাম তারপর সেখান থেকে তাকে সরিয়ে গেলো বিশ্বকাপের দায়িত্বে আনা হলো পুনরায় ডু প্লেসিসকে। এরপর গতবছর আবার এই দায়িত্ব দেয়া হয় ডু প্লেসিসকে, এবার তাকে সরিয়ে এখন নতুন দায়িত্ব দেয়া হলো বাভুমাকে! টি-টোয়েন্টিতে সবশেষ পাকিস্তান সিরিজে অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় হেনরিক ক্লাসেনকে। এর আগে ডি কক, ডেভিড মিলাররাও স্বল্প সময়ের জন্য অধিনায়কত্ব করেছিলেন। মনে করা হয়েছিলো ক্লাসেন অনেকটা লম্বা সময়ের জন্যই দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন! কিন্তু এক সিরিজ না যেতেই আবারো দায়িত্ব পরিবর্তন করে সেখানে আনা হলো টেম্বা বাভুমাকে।

টেস্টে ডু প্লেসিস ৩৬ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে জয় পেয়েছেন ১৮টিতে ও হেরেছেন ১৫ ম্যাচে। ডিন এলগার ২ ম্যাচে ১ জয় ও ১ হারের পর দায়িত্ব দেয়া হয় ডি কককে! মাত্র ৪ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করা ডি কককে ২ জয় ও ২ হারেই ইতি টানতে হলো অধিনায়কের। ডিন এলগারকে পুনরায় দায়িত্বে এনে প্রোটিয়া ক্রিকেট বোর্ড থেকে বলা হয় আগামী টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে সাদা পোশাকে প্রোটিয়াদের নেতৃত্ব দিবেন তিনি।

ওয়ানডেতে ২০১৮ সালে ডু প্লেসিসের যায়গায় ডুমিনি ২ ম্যাচ অধিনায়কত্ব করার পর তাকে সরিয়ে তার যায়গায় আনা হয় এইডেন মার্করামকে। মার্করাম ৫ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেন, তার অধীনে দল জয় পায় ১ টিতে অপরদিকে ৪ হার! এরপর ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে পুনরায় দায়িত্ব দেওয়া হয় ডু প্লেসিসকে। ৩৯ ম্যাচে ২৮ জয় আর মাত্র ১০ হার ডু প্লেসিসের অধীনে!

বিশ্বকাপের পর ভবিষ্যতের কথা চিন্তায় অধিনায়কত্ব তুলে দেওয়া হয় ডি ককের হাতে। মোট ৮ ম্যাচে ৪ জয় ও ৩ হার, এতেই শেষ ডি ককের অধিনায়কত্ব পর্ব! নতুন অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হলো বাভুমাকে, যিনি কিনা পরবর্তী ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত দায়িত্বে থাকবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা।

টি-টোয়েন্টিতেও দায়িত্ব পেয়েছেন বাভুমা। এর আগে মাত্র এক সিরিজের জন্য দায়িত্ব পেয়েছিলেন হেনরিক ক্লাসেন! ৩ ম্যাচে ১ জয় ও ২ হারেই থামলো ক্লাসেনের অধিনায়ক ইনিংস। এর আগে ডি ককের অধীনে ১১ ম্যাচে মাত্র তিন জয় পায় প্রোটিয়ারা। সবশেষ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার অধীনে ৩-০ তে হোয়াইটওয়াশ হয় প্রোটিয়ারা। এর আগে ২ ম্যাচে জন্য দায়িত্বে ছিলেন ডেভিড মিলারও! ২ ম্যাচে তার অধীনে আছে ১ জয় ও ১ হার। পরবর্তী ২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলের নেতৃত্ব দিবেন বাভুমা।

তিন ফর্মেটেই বার বার অধিনায়ক পরিবর্তন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রমাগত হারের পেছনে অন্যতম বড় কারণ। কিন্তু কেনো ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা নির্দিষ্ট কোনো অধিনায়কের উপর ভরসা করতে পারছেন না? অধিনায়কের উপর এতে যেমন চাপ সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি এর প্রভাবটা দলের উপরও বেশ ভালোভাবেই পড়ছে।

তবে সব মিলিয়ে ডিন এলগার ও বাভুমা হয়তো লম্বা সময়ের জন্যই দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন। অধিনায়ক হবার পর ডি কক যে অনেকটা চাপে ছিলেন তা স্পষ্টত তার পার্ফরমেন্সেই। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে হয়তো নতুন অধিনায়কের হাত ধরে বড় লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link